SH Sanowar's Reviews > একটি হাসপাতাল একজন নৃবিজ্ঞানী কয়েকটি ভাঙ্গা হাড়
একটি হাসপাতাল একজন নৃবিজ্ঞানী কয়েকটি ভাঙ্গা হাড়
by
by
পার্কভিউ হসপিটালে এসে বসে আছি। স্মৃতি থেকে দেখলে পারিবারিক অসুস্থতার কারণে গত তিনবছরের প্রায় অর্ধেকটাই হসপিটাল ক্লিনিকে কাটিয়ে দিলাম। হসপিটালের ডেটল মারা গন্ধ, হুশহাশ কোলাহল, এই হাসি এই চিৎকার সব যেনো সাধারণ। একঘেয়েমি পূর্ণ দীর্ঘশ্বাসটাও অভ্যেস হয়ে গেছে। মাঝেমাঝে এটাকেই বেশ নরমাল মনে হয়। মানুষ কিছু একটা নিয়ে বাঁচতে ভালোবাসে। আল্লাহ ভগবান ঈশ্বরের মতো অসুখটাও যেনো বেঁচে থাকার আরেকটা রসদ। রসদ বলাটা বোধহয় ভুল হোলো। বলা দরকার অবলম্বন। পোড় খাওয়া মানুষ যেমন অলৌকিকতা আঁকড়ে ধরে তেমনি অধিক পাওয়া লওয়া মানুষও খুঁজে পেরে অলৌকিকতা। প্রথম দল ধরে থাকে, ধরার মতো কিছু নাই বলে। আর দ্বিতীয় দল, প্রাপ্ত জিনিসটা যাতে খোয়া না যায়! অসুখটা বড়োলোকের জন্য বিলাসিতা। আমার অবজারভেশন বলে, বড়লোকদের মধ্যে অন্যদের ঠকানোর জন্য একটা পাপবোধ কাজ করে (সবসময় যে এমন হয় তা না, সবাই ঠকায়ও না, তাও পাপবোধটা কাজ করে। মানুষ হয়ে পৃথিবীতে আসার খাতিরে সূক্ষ্ম কিছু অনুভূতি মাঝে মাঝে হানা দেয়, বড়লোকদের নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য ওই অনূভুতি একান্ত প্রয়োজনীয়!) অসুখ বিসুখ সেই পাপবোধটাকে লঘু করে দেয়। গরীবের জন্য অসুখটা একটা স্বান্তনা। তারা স্বান্তনাটা পায় দুইভাবে। এক, ঈশ্বর আল্লাহ ভগবান তাদেরই বেশি রোগশোক দেয় যাদের বেশি ভালোবাসে। দুই, অসুস্থতার বৌদলতে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে দেখে যারা তাদেরই মতো ভুক্তভোগী। তা-ই দেখে তারা “কেউ সুখে নাই” বলে একটা শ্বাস ফেলে স্বান্তনা পায়। হাসপাতাল শুধুমাত্র বিচ্ছিন্ন কিছু প্রতিষ্ঠানই নয়, হাসপাতাল কোন কোন ক্ষেত্রে ছোট সমাজ বড় সমাজের সাথে, ক্ষুদ্র গোষ্ঠী বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সাথে একাত্মবোধ হওয়ার একটা ক্ষেত্র। শাহাদুজ্জামান "একটি হাসপাতাল একজন নৃবিজ্ঞানী কয়েকটি ভাঙ্গা হাড়" বইয়ে এমন অসংলগ্ন অগভীর দুর্বল অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন অভিজ্ঞতার কথা শোনাননি অবশ্য। তিনি যা শুনিয়েছেন তা অত্যন্ত পীড়াদায়ক তবে একদম নিখুঁত পর্যায়ের সত্য। অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় একটি হাসপাতালের একটিমাত্র ওয়ার্ডের গভীর নৃতাত্ত্বিক গবেষণা করে আমাদের দেখান কিভাবে হাসপাতালের একটি ওয়ার্ড সমগ্র বাংলাদেশের চিত্র ধারণ করে। তিনি আমাদের দেখান, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদে চাচাতো ভাইদের কাছে হাত হারানো কবির নাম্নী ভদ্রলোক কিভাবে ভাঙ্গা হুইলচেয়ারে বসে রক্তাক্ত কাটা কব্জি উঁচিয়ে ধরে মঞ্চ অভিনেতার মতো বলছেন, "দেখেন, দেখেন কেমনে ওরা আমার হাত দুইটা কাইটা ফালাইছে।" প্রফেসরের রাউন্ডের শেষে খালেকের বিছানার নিচে এতক্ষণ লুকিয়ে থাকা তার স্ত্রী হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসছেন বাইরে। ইটের টুকরায় টানা দিয়ে রাখা হয়েছে রমজান আলীর পা, তিনি তার পায়ের এক্স- রে প্লেটটি আলোর উল্টো দিকে ধরে বুঝতে চেষ্টা করছেন। পথ দিয়ে যাবার সময় এক ডাক্তার রমজান আলীকে বলছেন, 'আপনে এক্স-রে নিয়ে এত নাড়াচাড়া করেন কেন? ডাক্তার হইতে চান? অপারেশন থিয়েটারের জানালার কাঁচে সাটা একটি নোট : মনে রাখবেন আজকে ও'টিতে কটন, লাইসল
এবং গজের সাপ্লাই নাই।' বাবার অপারেশনের জন্য কিনে আনা ওষুধগুলো ওয়ার্ড-বয় চুরি করেছে জানতে পেরে ও’টির সামনে বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আলী আহমদ। নার্সদের সাদা ড্রেস দেখে নার্সিং পেশায় এসেছিলেন যে হাসিনা, সে এখন হতাশ হয়ে বলছেন, নার্সিং তার ভালো লাগে না, কারণ লোকে নার্সদের নিচু চোখে দেখে, মনে করে নার্সরা খারাপ মেয়ে। একজন ডাক্তার মাইক্রোফোনের সামনে চিৎকার করে বলছেন, 'আমরা স্ট্রাইক ডাকছি ডাক্তারি পেশার মর্যাদা রাখবার জন্য'।ডাক্তারদের স্ট্রাইকের কারণে ড্রেসিং হচ্ছে না বলে দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে রোগীদের ব্যান্ডেজ থেকে। একজন রোগী সুগন্ধী আতর ঢেলে দিচ্ছেন, না বদলানো ব্যান্ডেজগুলোর উপর। এক ওয়ার্ডবয় জনৈক রোগীর মা'কে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিচ্ছেন ওয়ার্ডের বাইরে। হাসপাতালের চত্বর জুড়ে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ইউনিয়নের নির্বাচনের রঙ্গীন পোস্টার, ব্যানার। ট্রলীর একটি পায়া ধরে নিচুস্বরে কাঁদছেন একজন মহিলা, ট্রলিতে তার ছেলের শব। মহিলা বিলাপ করে সেই ইলিশ মাছের কথা বলছেন যা তিনি স্কুল থেকে ফেরার পর ছেলেকে খাওয়ানোর জন্য রাঁধছিলেন। বইয়ের সব শেষ "শেষের কবিতা" অনুচ্ছেদে শাহাদুজ্জামান আমাদের বলছেন, " ডাক্তার হিসেবে মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে আমি কাটিয়েছি অনেকদিন কিন্তু এই গবেষণা করতে গিয়ে মনে হয়েছে এ হাসপাতালকে আমি যেন ঠিক চিনতাম না আগে, চিনলাম নতুন করে। মনে পড়েছে T.S Eliot এর কয়েকটি লাইন :
shall not cease from exploration
And the end of all our exploring
Will be to arrive where we started
And know the place from the first time
(Little Giddings)
এবং গজের সাপ্লাই নাই।' বাবার অপারেশনের জন্য কিনে আনা ওষুধগুলো ওয়ার্ড-বয় চুরি করেছে জানতে পেরে ও’টির সামনে বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আলী আহমদ। নার্সদের সাদা ড্রেস দেখে নার্সিং পেশায় এসেছিলেন যে হাসিনা, সে এখন হতাশ হয়ে বলছেন, নার্সিং তার ভালো লাগে না, কারণ লোকে নার্সদের নিচু চোখে দেখে, মনে করে নার্সরা খারাপ মেয়ে। একজন ডাক্তার মাইক্রোফোনের সামনে চিৎকার করে বলছেন, 'আমরা স্ট্রাইক ডাকছি ডাক্তারি পেশার মর্যাদা রাখবার জন্য'।ডাক্তারদের স্ট্রাইকের কারণে ড্রেসিং হচ্ছে না বলে দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে রোগীদের ব্যান্ডেজ থেকে। একজন রোগী সুগন্ধী আতর ঢেলে দিচ্ছেন, না বদলানো ব্যান্ডেজগুলোর উপর। এক ওয়ার্ডবয় জনৈক রোগীর মা'কে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিচ্ছেন ওয়ার্ডের বাইরে। হাসপাতালের চত্বর জুড়ে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ইউনিয়নের নির্বাচনের রঙ্গীন পোস্টার, ব্যানার। ট্রলীর একটি পায়া ধরে নিচুস্বরে কাঁদছেন একজন মহিলা, ট্রলিতে তার ছেলের শব। মহিলা বিলাপ করে সেই ইলিশ মাছের কথা বলছেন যা তিনি স্কুল থেকে ফেরার পর ছেলেকে খাওয়ানোর জন্য রাঁধছিলেন। বইয়ের সব শেষ "শেষের কবিতা" অনুচ্ছেদে শাহাদুজ্জামান আমাদের বলছেন, " ডাক্তার হিসেবে মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে আমি কাটিয়েছি অনেকদিন কিন্তু এই গবেষণা করতে গিয়ে মনে হয়েছে এ হাসপাতালকে আমি যেন ঠিক চিনতাম না আগে, চিনলাম নতুন করে। মনে পড়েছে T.S Eliot এর কয়েকটি লাইন :
shall not cease from exploration
And the end of all our exploring
Will be to arrive where we started
And know the place from the first time
(Little Giddings)
Sign into Goodreads to see if any of your friends have read
একটি হাসপাতাল একজন নৃবিজ্ঞানী কয়েকটি ভাঙ্গা হাড়.
Sign In »