Tiyas's Reviews > শ্রীকৃষ্ণের শেষ কটা দিন
শ্রীকৃষ্ণের শেষ কটা দিন
by
by
দিবি সূর্যসহস্রস্য ভবেদ্ যুগপদুণ্থিতা।
যদি ভাঃ সদৃশী সা স্যাদ্ ভাসস্তস্য মহাত্মনঃ॥
শ্রীকৃষ্ণ। সহস্র সূর্যের প্রভার ন্যায় তার বিস্তার। তার বিশ্বরূপে সমগ্র জগৎ গলিত স্থলিত। তিনিই আবার প্রেমের দেবতা, সুরের মূর্ছনায় মাতিয়ে রাখেন মর্ত্যলোকের আঙিনা। তিনি মাধব, দ্বারকার জনার্দন, ভক্তের ভগবান সেই পরম পুরুষ। বরেণ্য লেখক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের কলমে এই উপন্যাসটির কেন্দ্রেও সেই তিনি।
স্রেফ একখানা গল্পচ্ছলে ন্যারেটিভের খোঁজে এই বই পড়তে বসলে হতাশা প্রযোজ্য। অনেকেই দেখি এই বইয়ের প্রতি এ কারণেই বিরূপ। বইটির সাহিত্য আকাদেমি পুরষ্কার পাওয়া নিয়ে বিতর্কের একশেষ। তাদের অভিযোগ খন্ডানোর অভিপ্রায় আমার নেই। উচিত অনুচিতের তর্কের বাইরে, বইটিকে অগ্রজ সাহিত্যিকের কৃষ্ণ প্রেমের শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে গ্রহণ করেই আমি সন্তুষ্ট।
বই জুড়ে চলে এক সুদীর্ঘ কথোপকথন। শ্রীকৃষ্ণ যেখানে কেবলই শ্রোতা, বক্তা রূপে লেখক স্বয়ং। তার মস্তকে উপনীত মনুষ্যকূলের আদিমতম উপাধি, তিনি ভক্ত। এবং সেই ভক্তের মুখে শ্রীকৃষ্ণ শুনছেন তারই কথা। তার জীবনদর্শন, তার লৌকিক-অলৌকিক ক্ষমতাবলী। এই বলার মাঝেই, প্রকৃতির খেয়ালে জাজ্বল্যমান ভারতযুদ্ধের অমৃতসার। কুরুকুলের মারণ যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণের অভিপ্রায়। কোথাও সেই ভক্ত তার পূজনীয় পুরুষকে রাখছেন আদর্শের শীর্ষে, কোথাও আবার দিচ্ছেন সূক্ষ্ম খোঁচা। দেখিয়ে দিচ্ছেন, দেবত্বের এই মহীরুহের ছায়ায় স্বযত্নে লালিত মানবকল্যাণের বীজ। বইটার সঙ্গে তাই দিন খানা ভালোই কাটল।
তবে পুরো যাত্রাই যে মসৃণ, সেই দাবী আমি নিজেও করছি না। কাহিনী বিন্যাস কতকটা অগোছালো, কিছু জায়গায় এসেছে পুনরাবৃত্তি। সাহিত্যিকের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ নয় বলাই বাহুল্য। তবে তাই বলে, উপন্যাসটিকে সরাসরি "থার্ড ক্লাস" আখ্যা দিয়ে নিজেকে কেউকেটা প্রবৃত্তি করার ইচ্ছে বা কারণ কোনোটাই আমার নেই।
রম্যরচনা ও স্যাটায়ারের বাইরেও, লেখক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের ভক্তিমূলক রচনাগুলো তার লেখনীর আরেকটি সত্ত্বা। সেটিকে অদেখা করলে, লেখক বৃত্তির যথার্থ মূল্যায়নের একটি পন্থা আমাদের জন্য বন্ধ হয়ে রইবে। বই জুড়ে তাই ভক্তিরসের মাঝে খুঁজে পাই লেখকের চিরাচরিত স্বরূপ, যেই অনাবিল রসবোধ দ্বারা তিনি বলে ওঠেন, "প্রভু! এ আপনার কী খেলা! গড়া জিনিস ভাঙা! মহাকালে বসে কালকে চিবোচ্ছেন। ছিবড়ে ফেলে দিচ্ছেন এদিকে ওদিকে।"
সেরকমই কোন মায়ায় হাহাকার করে ওঠেন তার প্রাণের ঠাকুরের প্রতি। বলে ওঠেন ব্যথার সুরে, "এসো, এসো, শেষবারের মতো দেখে যাও আমার প্রভুর রূপ, ছবি করে তুলে রাখো কালের ঘরে। আমিও দেখি। একটু পরেই আপনি চলে যাবেন। পড়ে থাকবে ঝরাপাতা, গাছের ভাঙা ডাল।" শেষ পর্যায়ে যা আমার মতন পাঠকের পাষাণ হৃদয়েও তোলে কোন ঝড়ের নিনাদ। এ লেখা তাই কোনো রিভিউ নয়। গঠনমূলক সমালোচনা আরো নয়। এ বইয়ের অনেক ব্যাখ্যা, অনেক নিন্দা, অনেক সম্মান। আমার মত তুচ্ছ পাঠকের মহাভারত চর্চায় এক নতুন সংযোজন। ভালো মন্দের মাঝে এই বই আমার কাছে সুন্দর। এবং এটুকুই সত্যি।
আপাতত, সত্যিটাই থাকুক।
সবার ভালো হোক।।
যদি ভাঃ সদৃশী সা স্যাদ্ ভাসস্তস্য মহাত্মনঃ॥
শ্রীকৃষ্ণ। সহস্র সূর্যের প্রভার ন্যায় তার বিস্তার। তার বিশ্বরূপে সমগ্র জগৎ গলিত স্থলিত। তিনিই আবার প্রেমের দেবতা, সুরের মূর্ছনায় মাতিয়ে রাখেন মর্ত্যলোকের আঙিনা। তিনি মাধব, দ্বারকার জনার্দন, ভক্তের ভগবান সেই পরম পুরুষ। বরেণ্য লেখক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের কলমে এই উপন্যাসটির কেন্দ্রেও সেই তিনি।
স্রেফ একখানা গল্পচ্ছলে ন্যারেটিভের খোঁজে এই বই পড়তে বসলে হতাশা প্রযোজ্য। অনেকেই দেখি এই বইয়ের প্রতি এ কারণেই বিরূপ। বইটির সাহিত্য আকাদেমি পুরষ্কার পাওয়া নিয়ে বিতর্কের একশেষ। তাদের অভিযোগ খন্ডানোর অভিপ্রায় আমার নেই। উচিত অনুচিতের তর্কের বাইরে, বইটিকে অগ্রজ সাহিত্যিকের কৃষ্ণ প্রেমের শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে গ্রহণ করেই আমি সন্তুষ্ট।
বই জুড়ে চলে এক সুদীর্ঘ কথোপকথন। শ্রীকৃষ্ণ যেখানে কেবলই শ্রোতা, বক্তা রূপে লেখক স্বয়ং। তার মস্তকে উপনীত মনুষ্যকূলের আদিমতম উপাধি, তিনি ভক্ত। এবং সেই ভক্তের মুখে শ্রীকৃষ্ণ শুনছেন তারই কথা। তার জীবনদর্শন, তার লৌকিক-অলৌকিক ক্ষমতাবলী। এই বলার মাঝেই, প্রকৃতির খেয়ালে জাজ্বল্যমান ভারতযুদ্ধের অমৃতসার। কুরুকুলের মারণ যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণের অভিপ্রায়। কোথাও সেই ভক্ত তার পূজনীয় পুরুষকে রাখছেন আদর্শের শীর্ষে, কোথাও আবার দিচ্ছেন সূক্ষ্ম খোঁচা। দেখিয়ে দিচ্ছেন, দেবত্বের এই মহীরুহের ছায়ায় স্বযত্নে লালিত মানবকল্যাণের বীজ। বইটার সঙ্গে তাই দিন খানা ভালোই কাটল।
তবে পুরো যাত্রাই যে মসৃণ, সেই দাবী আমি নিজেও করছি না। কাহিনী বিন্যাস কতকটা অগোছালো, কিছু জায়গায় এসেছে পুনরাবৃত্তি। সাহিত্যিকের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ নয় বলাই বাহুল্য। তবে তাই বলে, উপন্যাসটিকে সরাসরি "থার্ড ক্লাস" আখ্যা দিয়ে নিজেকে কেউকেটা প্রবৃত্তি করার ইচ্ছে বা কারণ কোনোটাই আমার নেই।
রম্যরচনা ও স্যাটায়ারের বাইরেও, লেখক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের ভক্তিমূলক রচনাগুলো তার লেখনীর আরেকটি সত্ত্বা। সেটিকে অদেখা করলে, লেখক বৃত্তির যথার্থ মূল্যায়নের একটি পন্থা আমাদের জন্য বন্ধ হয়ে রইবে। বই জুড়ে তাই ভক্তিরসের মাঝে খুঁজে পাই লেখকের চিরাচরিত স্বরূপ, যেই অনাবিল রসবোধ দ্বারা তিনি বলে ওঠেন, "প্রভু! এ আপনার কী খেলা! গড়া জিনিস ভাঙা! মহাকালে বসে কালকে চিবোচ্ছেন। ছিবড়ে ফেলে দিচ্ছেন এদিকে ওদিকে।"
সেরকমই কোন মায়ায় হাহাকার করে ওঠেন তার প্রাণের ঠাকুরের প্রতি। বলে ওঠেন ব্যথার সুরে, "এসো, এসো, শেষবারের মতো দেখে যাও আমার প্রভুর রূপ, ছবি করে তুলে রাখো কালের ঘরে। আমিও দেখি। একটু পরেই আপনি চলে যাবেন। পড়ে থাকবে ঝরাপাতা, গাছের ভাঙা ডাল।" শেষ পর্যায়ে যা আমার মতন পাঠকের পাষাণ হৃদয়েও তোলে কোন ঝড়ের নিনাদ। এ লেখা তাই কোনো রিভিউ নয়। গঠনমূলক সমালোচনা আরো নয়। এ বইয়ের অনেক ব্যাখ্যা, অনেক নিন্দা, অনেক সম্মান। আমার মত তুচ্ছ পাঠকের মহাভারত চর্চায় এক নতুন সংযোজন। ভালো মন্দের মাঝে এই বই আমার কাছে সুন্দর। এবং এটুকুই সত্যি।
আপাতত, সত্যিটাই থাকুক।
সবার ভালো হোক।।
Sign into Goodreads to see if any of your friends have read
শ্রীকৃষ্ণের শেষ কটা দিন.
Sign In »
Reading Progress
September 6, 2020
– Shelved
September 6, 2020
– Shelved as:
to-read
August 12, 2022
–
Started Reading
August 12, 2022
–
Finished Reading
Comments Showing 1-1 of 1 (1 new)
date
newest »
message 1:
by
Raya
(new)
Aug 14, 2022 11:57AM
এত অল্প বয়সেই এত সুন্দর উপস্থাপনা করতে পারিস কি করে কে জানে :'-)
reply
|
flag