বিষয়বস্তুতে চলুন

বাজরিগর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বাজরিগর টিয়া
সময়গত পরিসীমা: Pliocene–Holocene []
Blue cere indicates male
Flaking brown cere indicates female in breeding condition
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: Chordata
উপপর্ব: Vertebrata
শ্রেণী: Aves
বর্গ: Psittaciformes
পরিবার: Psittacidae
গণ: Melopsittacus
প্রজাতি: undulatus
দ্বিপদী নাম
Melopsittacus undulatus
(Shaw, 1805)
The budgerigar's natural habitat is in dark red; its introduced range is in light red
অস্ট্রেলিয়ার জঙ্গলে সবুজ রঙের বন্য বদ্রি পাখি
তৃণভূমিতে খাদ্যের অনুসন্ধানরত এক ঝাঁক বন্য বাজরিগর

বাজরিগর পরিচিত একটি পোষা ছোট টিয়া পাখি। আমেরিকায় লিট্টল প্যারাকিট নামে পরিচিত। এছাড়াও এই পাখি বাজী, শেল প্যারাকিট, ক্যানারী প্যারট, জেব্রা প্যারট, কমন পেট প্যারাকিট, আন্ডুলেটেড প্যারাকিট এবং বাংলায় বদ্রি নামেও পরিচিত। বাজরিগার পাখি প্রধানত অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল অঞ্চলসহ সমগ্র বনাঞ্চলে দেখা যায়। এছাড়াও তাসমানিয়া এবং এর প্রতিবেশী কয়েকটি রাজ্যেও এর বিস্তার আছে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Melopsittacus Undulatus

বদ্রি পাখির আকার এবং বৈশিষ্ট্য

[সম্পাদনা]

সাধারণত বন্য বাজরিগার লম্বায় প্রায় ৬.৫ – ৭ ইঞ্চি এবং খাঁচায় প্রায় ৭ – ৮ ইঞ্চি। এদের ওজন সাধারণত বন্য বাজরিগার ২৫ – ৩৫ গ্রাম এবং খাঁচায় ৩৫ – ৪০ গ্রাম পর্যন্ত হয়।

পূর্ণবয়স্ক পুরুষ বাজরিগারের নাকের ছিদ্রের চারপাশে নীল রংয়ের ঝিল্লি থাকে। এই ঝিল্লি কপাল ও ঠোঁটের মাঝে নাকের ছিদ্রসহ বিস্তৃত। পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী বাজরিগারের নাকের ছিদ্রের চারপাশে বাদামি রংয়ের ঝিল্লি দিয়ে ঘেরা থাকে। এই ঝিল্লি কপাল ও ঠোঁটের মাঝে নাকের ছিদ্রসহ বিস্তৃত। সাধারণত ৫ - ৮ মাস বয়সে এরা প্রাপ্তবয়স্ক হয়।

প্রজনন

[সম্পাদনা]

স্ত্রী ও পুরুষ পাখি শারীরিক মিলনের ৭ - ১০ দিন পর থেকে ডিম পারা শুরু করে। একদিন পর পর একটি করে ডিম পাড়ে। এরা এক সময়ে ৪ - ৮ টি ডিম পাড়ে। স্ত্রী পাখি তার ডিমে তা দেয় এবং পুরুষ তাদের যত্ন নেয়। এই পাখিকে ডিম দেয়ার সময় নির্জন জায়গায় রাখতে হবে। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে ১৮ - ২১ দিন সময় লাগে। নবজাতক ও ছোট বাচ্চা পাখিকে তাদের মা-বাবা এক সাথে খাইয়ে দেয়। পাখির বাচ্চা গুলি প্রায় ৩৫ - ৪২ দিন বয়স থেকে একা একা খেতে শুরু করে ও অল্প অল্প উড়তে শিখে যায়। প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে পাখিরা মাথা ঝাঁকিয়ে শিস্ দিয়ে গান করে। কখনো কখনো মেয়ে পাখিদেরও এরকম করতে দেখা যায়।

অস্ট্রেলিয়ার তৃণভূমিতে

[সম্পাদনা]

এই পাখিরা তৃণভূমিতে বড় ঝাঁকে একসাথে উড়ে বেড়ায়। বন্য অঞ্চলে একটি বদ্রি জোড়া বছরে একবার ডিম পাড়ে। পরিবেশগত পরিবর্তনগুলি বাসা বাঁধার মরসুমের শেষের সংকেত দেয়, সেই সময়ে তারা বাসা ছেড়ে দেয় এবং পরের বছর পর্যন্ত বাসা বানায় না বা ডিম পাড়ে না। বন্দী অবস্থায় তাদের বারবার ডিম পাড়া থেকে বিরত রাখা আমাদের দায়িত্ব।

খাদ্যাভ্যাস

[সম্পাদনা]

এরা উন্মুক্ত তৃণভূমিতে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতে পারে তাই নিজেদের ইচ্ছা মতন খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে। খাঁচায় পোষা অবস্থায় খাদ্য হিসেবে কাউন, ছোট ধান, ভাত, ফল ও অন্যান্য শাক-সবজি খায়। যা প্রতিটা বাড়িতে অনায়াসেই মেলে।

তারা ভিজানো নরম ছোলা, গম ও ভুট্টা খায়। তুলসী পাতা খেতে তারা খুব ভালোবাসে।

এছাড়া জোয়ার, বাজরা, রাগি অর্থাৎ মিলেট জাতীয় শস্য ক্যানারি, সূর্যমুখীর বীজ প্রভৃতি বিভিন্ন শস্য মিশ্রিত ভাবে খেতে দেওয়া হয়ে থাকে। কাটেল ফিশ বোন, মিনারেল ব্লক, গ্রিড ও এগফুড অর্থাৎ ডিম ও ডিমের খোলা খেতে দেয়া হয় তাদের সঠিক পুষ্টির জন্য।

রোগ ব্যাধি

[সম্পাদনা]

বদ্রি পাখিদের বিশেষ একটা রোগ ব্যাধি হয় না। তবে অনিয়মিত বিভিন্ন প্রকার খাবার খাওয়ানো, অপরিছন্ন খাবার ও পরিবেশের কারণে পেটখারাপ, সবুজ পায়খানা হয়। ঋতু পরিবর্তন ও বর্ষার সময়ে ফ্লু জাতীয় সর্দি জ্বর হতে পারে। শরীর খারাপ হলে পালক ফুলিয়ে পিছনে মুখ গুঁজে খাঁচার এক কোণে চুপ করে বসে থাকে। স্বেচ্ছায় ইচ্ছায় উড়তে চায় না। খাবার খাওয়ার ও জল পান করার ইচ্ছা কমে যায়। সর্দি ও জ্বর হলে হাঁচি দেয়। হজমের সমস্যা হলে কখনো বমি করে।

অতিরিক্ত গরমে স্ট্রোক থেকে বাঁচাতে পাখিকে জলে গুলে ও.আর.এস খাওয়ানো উচিত। কখনোই পাখির খাঁচাকে সরাসরি সূর্যের আলো আসে এমন স্থানে রাখা উচিত নয়। ছায়াযুক্ত অপেক্ষাকৃত শীতল স্থানে রাখতে হবে। এছাড়া অপুষ্টি ও অতিরিক্ত প্রজননের জন্য 'ফ্রেঞ্চ মল্ট' নামক রোগ হতে দেখা যায়। এ কারণে পাখির শরীরে ঠিকমতো পালক গজায় না, পাখি দুর্বল হয়ে যায়, উড়তে পারে না, বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

বিশেষত বর্ষাকালে কখনো চোখের সংক্রমণ হয়, চোখ দিয়ে জল পড়ে। শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ হলে ক্রমাগত দ্রুত শ্বাস নেয়। এছাড়া মাইটের আক্রমন হতে পারে। খাঁচায় পোষা পাখিকে বছরে অন্তত দু বার করে কৃমির ঔষধ দেয়া উচিত। পাখির কোনো রোগ হলে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

রঙ এবং মিউটেশন

[সম্পাদনা]
খাঁচায় পালিত নীল রঙের সাধারণ বদ্রি পাখি

বন্য বাজরিগররা শুধুমাত্র সবুজ রঙের হয়ে থাকে। খাঁচায় পালিত বাজরিগররা বিভিন্ন রঙের হয় যেমন - সবুজ, হলুদ, সাদা, নীল এবং বিভিন্ন ধরণের মিশ্রিত রঙ। সমস্ত বন্দী বাজরিগর দুটি মৌলিক ধারার রঙে বিভক্ত; যথা, সাদা-ভিত্তিক (নীল, ধূসর এবং সাদা) এবং হলুদ-ভিত্তিক (সবুজ, ধূসর-সবুজ এবং হলুদ)। বর্তমানে, কমপক্ষে ৩২ টি (ভায়োলেট সহ) প্রাথমিক মিউটেশন হয়, যা শত শত সম্ভাব্য সেকেন্ডারি মিউটেশন এবং রঙের বৈচিত্র্য উদ্ভাবন করে।

বর্তমানে বিভিন্ন প্রজাতির বাজরিগর পাখি দেখা যায়। যেমন -

  • ইংলিশ বাজি; একে হল্যান্ড বাজি অথবা শো এক্সিবিশন বাজরিগরও বলা হয় (এরা সাধারণ বদ্রি পাখির থেকে আকারে প্রায় দ্বিগুণ বড় হয়),
  • জাপানিজ হাগোরোমো অর্থাৎ জেপি বা হেলিকপ্টার (এদের ডানা ও মাথায় ফুলের মত পালক থাকে),
  • পাখির গায়ের পালক পুরো সাদা হলে অ্যালবিনো,
  • আর পুরো হলুদ হলে তাকে লুটিনো বলা হয়। সাধারণত এমন হলে পাখির চোখ লাল রংয়ের হতে দেখা যায়।
  • এছাড়া টিসিবি বা টেক্সাস ক্লিয়ার বডি,
    জাপানিজ হাগোরোমো অর্থাৎ জেপি বা হেলিকপ্টার বদ্রি
  • ইজিলি ক্লিয়ার বডি বা ইসিবি,
  • সিনেমন,
  • পাইড,
  • ফেলো,
  • ক্রেস্টেড,
  • টাফটেড,
  • গ্রে,
  • রেনবো,
  • অপালাইন,
  • স্প্যাঙ্গেল,
  • ইয়েলো ফেস,
  • কালো রং এর মিউটেশন যেটা অনেক দুষ্প্রাপ্য ও অনেক দামি।

এদের গড় আয়ু ৫ - ৮ বছর এবং খাঁচায় ১০ - ১২ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

ডিম ও নবজাতক শিশু

জনপ্রিয়তা

[সম্পাদনা]

এই গৃহপালিত পাখি বছরে কয়েকবার প্রজনন করে। সব জায়গায় পাওয়া যায়। দামে খুবই সস্তা। বিশেষ যত্ন প্রয়োজন হয় না। রোগবালাই কম হয়।

এই পাখিকে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পাখি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এরা দেখতে রঙিন হওয়ায় আকর্ষণীয় ও প্রকৃতিতে চঞ্চল। তাই সহজেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। শ্রবণ ক্ষমতা অনেক ভালো। এই পাখি ছোটো থেকে সঠিক ট্রেনিং পেলে শেখানো শব্দ অনেকটা স্পষ্ট ভাবে বলতে পারে। এরা টিয়া পাখির জাত হওয়ায় যথেষ্ট বুদ্ধিমান প্রকৃতির।

বদ্রি পাখিকে অস্ট্রেলিয়ান পাখি বলা হয়; কিন্তু এখন সারা বিশ্বে এটি সব থেকে জনপ্রিয় খাঁচায় পোষা পাখি হিসেবে পরিচিত।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Boles, Walter E. "A budgerigar Melopsittacus undulatus from the Pliocene of Riversleigh, North-western Queensland." Emu 98.1 (1998): 32–35.
  2. BirdLife International (২০১২)। "Melopsittacus undulatus"বিপদগ্রস্ত প্রজাতির আইইউসিএন লাল তালিকা (ইংরেজি ভাষায়)। আইইউসিএন2012। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০১২