বিষয়বস্তুতে চলুন

পীতজ্বর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পীতজ্বর
প্রতিশব্দyellow jack, yellow plague,[] bronze john[]
বিশেষত্বসংক্রামক রোগ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন


পীতজ্বর (ইংরেজি: Yellow fever) বা ইয়েলো ফিভার একটি ভাইরাসঘটিত রোগ।[] অধিকাংশ ক্ষেত্রে লক্ষণসমূহ হলো জ্বর, ক্ষুধামন্দা, বমিভাব, মাংসপেশিতে ব্যথা (বিশেষ করে পিঠে), ও মাথাব্যথা[] লক্ষণগুলো সাধারণত পাঁচ দিনের মধ্যে সেরে যায়।[] কারো কারো ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো উন্নতি হওয়ার একদিনের মধ্যে পুনরায় জ্বর হতে পারে, পেটব্যথা শুরু হয় ও যকৃৎ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জন্ডিস হতে পারে ও শরীর হলুদ হয়ে যায়। এইজন্য এই রোগের নাম পীতজ্বর রাখা হয়েছে।[] জন্ডিস হলে রোগীর রক্তক্ষরণ ও কিডনি ফেইলিওরের সম্ভাবনা বাড়ে।[]

যে ভাইরাসের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায় তা ইয়েলো ফিভার ভাইরাস নামে পরিচিত। [] Aedes aegypti প্রজাতির মশা এই ভাইরাসের বাহক।[] এটি ফ্ল্যাভিভাইরাস গণের অন্তর্ভুক্ত একটি আরএনএ ভাইরাস।[] প্রাথমিক অবস্থায় অন্যান্য রোগ থেকে এটাকে পৃথক করা কঠিন।[] এই ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে রক্ত নমুনা নিয়ে পলিমারেজ চেইন রিয়াকশন নামক পরীক্ষা করতে হয়।[]

এই রোগ প্রতিরোধের জন্য কার্যকর ও নিরাপদ টিকা বিদ্যমান।[] টিকার পাশাপাশি বাহক মশার বংশবৃদ্ধি ব্যাহত করতে হবে।[] যেসব এলাকায় পীতজ্বর হয় কিন্তু টিকার ব্যবস্থা নাই সেখানে মহামারী ঠেকানোর জন্য প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় ও টিকাদানের ব্যবস্থা করা খুব জরুরি।[] উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করতে হয়, সুনির্দিষ্ট কার্যকর কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই।[][]

প্রতিবছর দুই লক্ষ লোক পীতজ্বরে আক্রান্ত হয় ও প্রায় ত্রিশ হাজার মৃত্যুবরণ করে।[] প্রায় নব্বই শতাংশ রোগীই আফ্রিকার[][] দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি হলেও এশিয়াতে খুব একটা দেখা যায় না।[][] ১৯৮০ সাল থেকে পীতজ্বর রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।[][] এর জন্য জলবায়ুর পরিবর্তন, লোকজনের অধিক ভ্রমণ, শহরে বসবাসের প্রবণতা ও পর্যাপ্ত টিকার ব্যবস্থা না থাকাকে দায়ী করা হয়। সপ্তদশ শতাব্দীতে দাস বাণিজ্যের ফলে এই রোগ আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ আমেরিকায় ছড়িয়ে যায়।[] সপ্তদশ শতাব্দী থেকে আমেরিকা, আফ্রিকা ও ইউরোপে বেশ কয়েকবার মহামারী দেখা দেয়।[] অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে পীতজ্বরকে অন্যতম ভয়ানক সংক্রামক ব্যাধি হিসেবে গণ্য করা হত।[] ১৯২৭ সালে সকল ভাইরাসের মধ্যে ইয়েলো ফিভার ভাইরাসকেই প্রথমবারের মতো পৃথক করা সম্ভব হয়েছিল।[][]

উপসর্গ

[সম্পাদনা]

পীতজ্বরের সুপ্তাবস্থা তিন থেকে ছয় দিন।[১০] অধিকাংশ ক্ষেত্রে লক্ষণসমূহ হলো জ্বর, ক্ষুধামন্দা, বমিভাব বা বমি, মাংসপেশিতে ব্যথা (বিশেষ করে পিঠে), পেটব্যথা, ক্লান্তি, মাথাব্যথা ও জন্ডিস।[১১]

ইয়েলো ফিভার ভাইরাস
ভাইরাসের শ্রেণীবিন্যাস
গ্রুপ: ৪র্থ গ্রুপ ((+)ssRNA)
বর্গ: Unassigned
পরিবার: Flaviviridae
গণ: Flavivirus
প্রজাতি: Yellow fever virus

ইয়েলো ফিভার ভাইরাস নামক RNA ভাইরাস এই রোগের জন্য দায়ী।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Oldstone, Michael (২০০৯)। Viruses, Plagues, and History: Past, Present and Future। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 102–4। আইএসবিএন 9780199758494 
  2. Bazin, Hervé (২০১১)। Vaccination : a history from Lady Montagu to genetic engineering। Montrouge: J. Libbey Eurotext। পৃষ্ঠা 407। আইএসবিএন 9782742007752 
  3. "Yellow fever Fact sheet N°100"World Health Organization। মে ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  4. Lindenbach, B. D.; ও অন্যান্য (২০০৭)। "Flaviviridae: The Viruses and Their Replication"। Knipe, D. M.; P. M. Howley। Fields Virology (5th সংস্করণ)। Philadelphia, PA: Lippincott Williams & Wilkins। পৃষ্ঠা 1101আইএসবিএন 0-7817606-0-7 
  5. Tolle MA (এপ্রিল ২০০৯)। "Mosquito-borne diseases"Curr Probl Pediatr Adolesc Health Care39 (4): 97–140। ডিওআই:10.1016/j.cppeds.2009.01.001পিএমআইডি 19327647 
  6. "Frequently Asked Questions About Yellow Fever"CDC। আগস্ট ২১, ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৬ 
  7. "CDC Yellow Fever"। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১২-১২ 
  8. Barrett AD, Higgs S (২০০৭)। "Yellow fever: a disease that has yet to be conquered"। Annu. Rev. Entomol.52: 209–29। ডিওআই:10.1146/annurev.ento.52.110405.091454পিএমআইডি 16913829 
  9. Sfakianos, Jeffrey; Hecht, Alan (২০০৯)। Babcock, Hilary, সম্পাদক। West Nile virus। Foreword by David Heymann (2nd সংস্করণ)। New York: Chelsea House। পৃষ্ঠা 17। আইএসবিএন 9781604132540 
  10. "CDC: Yellow fever—Symptoms and treatment"। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১১-১০ 
  11. "Yellow fever"। WHO। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-১৩ 

আরো পড়ুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]