পীতজ্বর
পীতজ্বর | |
---|---|
প্রতিশব্দ | yellow jack, yellow plague,[১] bronze john[২] |
বিশেষত্ব | সংক্রামক রোগ |
পীতজ্বর (ইংরেজি: Yellow fever) বা ইয়েলো ফিভার একটি ভাইরাসঘটিত রোগ।[৩]
অধিকাংশ ক্ষেত্রে লক্ষণসমূহ হলো জ্বর, ক্ষুধামন্দা, বমিভাব, মাংসপেশিতে ব্যথা (বিশেষ করে পিঠে), ও মাথাব্যথা।[৩] লক্ষণগুলো সাধারণত পাঁচ দিনের মধ্যে সেরে যায়।[৩]
কারো কারো ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো উন্নতি হওয়ার একদিনের মধ্যে পুনরায় জ্বর হতে পারে, পেটব্যথা শুরু হয় ও যকৃৎ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জন্ডিস হতে পারে ও শরীর হলুদ হয়ে যায়। এইজন্য এই রোগের নাম পীতজ্বর রাখা হয়েছে।[৩] জন্ডিস হলে রোগীর রক্তক্ষরণ ও কিডনি ফেইলিওরের সম্ভাবনা বাড়ে।[৩]
যে ভাইরাসের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায় তা ইয়েলো ফিভার ভাইরাস নামে পরিচিত। [৩] Aedes aegypti প্রজাতির মশা এই ভাইরাসের বাহক।[৩] এটি ফ্ল্যাভিভাইরাস গণের অন্তর্ভুক্ত একটি আরএনএ ভাইরাস।[৪] প্রাথমিক অবস্থায় অন্যান্য রোগ থেকে এটাকে পৃথক করা কঠিন।[৩] এই ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে রক্ত নমুনা নিয়ে পলিমারেজ চেইন রিয়াকশন নামক পরীক্ষা করতে হয়।[৫]
এই রোগ প্রতিরোধের জন্য কার্যকর ও নিরাপদ টিকা বিদ্যমান।[৩] টিকার পাশাপাশি বাহক মশার বংশবৃদ্ধি ব্যাহত করতে হবে।[৩] যেসব এলাকায় পীতজ্বর হয় কিন্তু টিকার ব্যবস্থা নাই সেখানে মহামারী ঠেকানোর জন্য প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় ও টিকাদানের ব্যবস্থা করা খুব জরুরি।[৩] উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করতে হয়, সুনির্দিষ্ট কার্যকর কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই।[৩][৬]
প্রতিবছর দুই লক্ষ লোক পীতজ্বরে আক্রান্ত হয় ও প্রায় ত্রিশ হাজার মৃত্যুবরণ করে।[৩] প্রায় নব্বই শতাংশ রোগীই আফ্রিকার।[৩][৫] দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি হলেও এশিয়াতে খুব একটা দেখা যায় না।[৩][৭] ১৯৮০ সাল থেকে পীতজ্বর রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।[৩][৮] এর জন্য জলবায়ুর পরিবর্তন, লোকজনের অধিক ভ্রমণ, শহরে বসবাসের প্রবণতা ও পর্যাপ্ত টিকার ব্যবস্থা না থাকাকে দায়ী করা হয়। সপ্তদশ শতাব্দীতে দাস বাণিজ্যের ফলে এই রোগ আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ আমেরিকায় ছড়িয়ে যায়।[১] সপ্তদশ শতাব্দী থেকে আমেরিকা, আফ্রিকা ও ইউরোপে বেশ কয়েকবার মহামারী দেখা দেয়।[১] অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে পীতজ্বরকে অন্যতম ভয়ানক সংক্রামক ব্যাধি হিসেবে গণ্য করা হত।[১] ১৯২৭ সালে সকল ভাইরাসের মধ্যে ইয়েলো ফিভার ভাইরাসকেই প্রথমবারের মতো পৃথক করা সম্ভব হয়েছিল।[৪][৯]
উপসর্গ
[সম্পাদনা]পীতজ্বরের সুপ্তাবস্থা তিন থেকে ছয় দিন।[১০] অধিকাংশ ক্ষেত্রে লক্ষণসমূহ হলো জ্বর, ক্ষুধামন্দা, বমিভাব বা বমি, মাংসপেশিতে ব্যথা (বিশেষ করে পিঠে), পেটব্যথা, ক্লান্তি, মাথাব্যথা ও জন্ডিস।[১১]
কারণ
[সম্পাদনা]
ইয়েলো ফিভার ভাইরাস | |
---|---|
ভাইরাসের শ্রেণীবিন্যাস | |
গ্রুপ: | ৪র্থ গ্রুপ ((+)ssRNA) |
বর্গ: | Unassigned |
পরিবার: | Flaviviridae |
গণ: | Flavivirus |
প্রজাতি: | Yellow fever virus |
ইয়েলো ফিভার ভাইরাস নামক RNA ভাইরাস এই রোগের জন্য দায়ী।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ Oldstone, Michael (২০০৯)। Viruses, Plagues, and History: Past, Present and Future। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 102–4। আইএসবিএন 9780199758494।
- ↑ Bazin, Hervé (২০১১)। Vaccination : a history from Lady Montagu to genetic engineering। Montrouge: J. Libbey Eurotext। পৃষ্ঠা 407। আইএসবিএন 9782742007752।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত "Yellow fever Fact sheet N°100"। World Health Organization। মে ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪।
- ↑ ক খ Lindenbach, B. D.; ও অন্যান্য (২০০৭)। "Flaviviridae: The Viruses and Their Replication"। Knipe, D. M.; P. M. Howley। Fields Virology (5th সংস্করণ)। Philadelphia, PA: Lippincott Williams & Wilkins। পৃষ্ঠা 1101। আইএসবিএন 0-7817606-0-7।
- ↑ ক খ Tolle MA (এপ্রিল ২০০৯)। "Mosquito-borne diseases"। Curr Probl Pediatr Adolesc Health Care। 39 (4): 97–140। ডিওআই:10.1016/j.cppeds.2009.01.001। পিএমআইডি 19327647।
- ↑ "Frequently Asked Questions About Yellow Fever"। CDC। আগস্ট ২১, ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৬।
- ↑ "CDC Yellow Fever"। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১২-১২।
- ↑ Barrett AD, Higgs S (২০০৭)। "Yellow fever: a disease that has yet to be conquered"। Annu. Rev. Entomol.। 52: 209–29। ডিওআই:10.1146/annurev.ento.52.110405.091454। পিএমআইডি 16913829।
- ↑ Sfakianos, Jeffrey; Hecht, Alan (২০০৯)। Babcock, Hilary, সম্পাদক। West Nile virus। Foreword by David Heymann (2nd সংস্করণ)। New York: Chelsea House। পৃষ্ঠা 17। আইএসবিএন 9781604132540।
- ↑ "CDC: Yellow fever—Symptoms and treatment"। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১১-১০।
- ↑ "Yellow fever"। WHO। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-১৩।
আরো পড়ুন
[সম্পাদনা]- Crosby, M. (২০০৬)। The American Plague: The Untold Story of Yellow Fever, the Epidemic that Shaped Our History। New York: The Berkley Publishing Group। আইএসবিএন 0-425-21202-5।
- Espinosa, M. (২০০৯)। Epidemic Invasions: Yellow Fever and the Limits of Cuban Independence, 1878–1930। Chicago: University of Chicago Press। আইএসবিএন 978-0-226-21811-3।
- Murphy, J. (২০০৩)। An American Plague: The True and Terrifying Story of the Yellow Fever Epidemic of 1793। New York: Clarion Books। আইএসবিএন 0-395-77608-2।
- Nuwer, D. S. (২০০৯)। Plague Among the Magnolias: The 1878 Yellow Fever Epidemic in Mississippi। University of Alabama Press। আইএসবিএন 978-0-8173-1653-2।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- কার্লিতে পীতজ্বর (ইংরেজি)
- Finlay CJ (২০১২)। "The Mosquito Hypothetically Considered as the Transmitting Agent of Yellow Fever"। MEDICC Review। 14 (1): 56–9।
- "Philip S. Hench Walter Reed Yellow Fever Collection." Claude Moore Health Sciences Library, University of Virginia
- "Yellow Fever and the Reed Commission." Claude Moore Health Sciences Library, University of Virginia
- "Yellow fever virus"। NCBI Taxonomy Browser। 11089।