Musharrat Zahin's Reviews > একজন কমলালেবু
একজন কমলালেবু
by
by
এই তো কয়েকদিন আগেও জীবনানন্দ দাশ নিয়ে আমার জ্ঞান পাঠ্যবইয়ের কবিতা আর নাটোরের বনলতা সেনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
“আরম্ভ হয় না কিছু — সমস্তের তবু শেষ হয় —
কীট যে ব্যর্থতা জানে পৃথিবীর ধুলো মাটি ঘাসে
তারও বড় ব্যর্থতার সাথে রোজ হয় পরিচয়!
যা হয়েছে শেষ হয়; শেষ হয় কোনোদিন যা হবার নয়!”
এখন 'একজন কমলালেবু' পড়ার পর মনে হচ্ছে একটু হলেও জীবনানন্দকে বুঝতে পারছি। কিন্তু যেই কবির কবিতার পংক্তিতে উঠে এসেছে চিরায়ত বাংলার অপরূপ সবুজাভ বর্ণনা, সেই কবিরই জীবন কেন এমন ধূসর? বিভিন্ন বেশে আবারো বাংলার বুকে জন্মাতে চাওয়া কবির জীবনে এমন কী ঘটলো, যার কারণে ট্রামলাইনের নিচে নিজেকে সঁপে দিলেন?
বইটা শেষ করার পর মনটা অদ্ভুতরকমের বিষণ্ণ হয়ে পড়েছে। একজন মানুষ কখন আত্মহত্যা করে? যখন দেয়ালে তার পিঠ ঠেকে যায় তখন? এরজন্য কি আশেপাশের মানুষ একটু হলেও দায়ী না? অবশ্য জীবনানন্দ আসলেই আত্মহত্যা করেছিলেন নাকি সেটা একটা দূর্ঘটনা ছিল- এটা এখনো ধোঁয়াটে। তবুও তাঁর ডায়েরির পাতায় লেখা সাংকেতিক লাইনগুলো দেখে মনে হচ্ছিল সমাজ তাঁর প্রতিভাকে বুঝতে পারেনি। ব্যক্তিজীবন-সংসারজীবন-পেশাজীবন সব মিলিয়েই তিনি হতাশ। মাঝে মাঝে 'শোভনা' নামের পুরোনো ক্ষতটাও দগদগে হয়ে ওঠে। এত এত অপ্রাপ্তির ভার তিনি একদমই বইতে পারছিলেন না। জীবনস্পৃহা শূন্য হয়ে যাওয়ার কারণেই ধীরে ধীরে মৃত্যুচিন্তা কবির মাথায় দানা বেঁধেছিল।
এমনকি নিজের জীবনের কাহিনীও উপন্যাসের মোড়কে লিখতেন তিনি। সেগুলো পড়লেই তাঁর ব্যক্তিজীবনের তিক্ততা-গ্লানি-হতাশা-করুণ কাহিনীগুলো খুব সহজেই চোখে পড়তো। তাঁর সমসাময়িক কবি-সাহিত্যিকেরা যেভাবে তাঁকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেন, সেটা জানতে পেরে বেশ খারাপই লেগেছে। 'ঝরা পালক' এর মতন তিনিও ঝরেই পড়লেন।
শাহাদুজ্জামানের বর্ণনাশৈলী চমৎকার। মুগ্ধ হয়েই বইটা শেষ করেছি। উনার ভাষাশৈলী একদম মৌলিক, পড়ে শান্তি পাওয়া যায়। এটাকে ঠিক ফিকশন বলা যায় না, তাই বলে পড়ার সময় একটুও একঘেয়ে মনে হয়নি। ধীরে ধীরে মন খারাপ হয়েছে, মাঝে মাঝে সুখের সন্ধান পেয়ে মনটা উদ্বেলিত হলেও দমকা হাওয়ার মতন আবারো বিষণ্ণতা গ্রাস করে নিয়েছে। বইটি পছন্দের তালিকায় যোগ হল।
আপনি যদি জীবনানন্দকে জানতে চান, তাঁর লেখার পেছনের কাহিনীগুলো সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে বইটি পড়ুন। আর যদি জীবনানন্দকে নিয়ে আপনার আগ্রহ নাও থেকে থাকে, তবুও আমি অনুরোধ করবো বইটি পড়ার জন্য। জীবনে একটু হলেও ভাঙা বাশির করুণ সুর শুনতে পাওয়া উচিত, তাই না?
“একবার যখন দেহ থেকে বা’র হয়ে যাব
আবার কি ফিরে আসবো না আমি পৃথিবীতে?
আবার যেন ফিরে আসি
কোনো এক শীতের রাতে
একটা হিম কমলালেবুর করুণ মাংস নিয়ে
কোন এক পরিচিত মুমূর্ষুর বিছানার কিনারে।”
“আরম্ভ হয় না কিছু — সমস্তের তবু শেষ হয় —
কীট যে ব্যর্থতা জানে পৃথিবীর ধুলো মাটি ঘাসে
তারও বড় ব্যর্থতার সাথে রোজ হয় পরিচয়!
যা হয়েছে শেষ হয়; শেষ হয় কোনোদিন যা হবার নয়!”
এখন 'একজন কমলালেবু' পড়ার পর মনে হচ্ছে একটু হলেও জীবনানন্দকে বুঝতে পারছি। কিন্তু যেই কবির কবিতার পংক্তিতে উঠে এসেছে চিরায়ত বাংলার অপরূপ সবুজাভ বর্ণনা, সেই কবিরই জীবন কেন এমন ধূসর? বিভিন্ন বেশে আবারো বাংলার বুকে জন্মাতে চাওয়া কবির জীবনে এমন কী ঘটলো, যার কারণে ট্রামলাইনের নিচে নিজেকে সঁপে দিলেন?
বইটা শেষ করার পর মনটা অদ্ভুতরকমের বিষণ্ণ হয়ে পড়েছে। একজন মানুষ কখন আত্মহত্যা করে? যখন দেয়ালে তার পিঠ ঠেকে যায় তখন? এরজন্য কি আশেপাশের মানুষ একটু হলেও দায়ী না? অবশ্য জীবনানন্দ আসলেই আত্মহত্যা করেছিলেন নাকি সেটা একটা দূর্ঘটনা ছিল- এটা এখনো ধোঁয়াটে। তবুও তাঁর ডায়েরির পাতায় লেখা সাংকেতিক লাইনগুলো দেখে মনে হচ্ছিল সমাজ তাঁর প্রতিভাকে বুঝতে পারেনি। ব্যক্তিজীবন-সংসারজীবন-পেশাজীবন সব মিলিয়েই তিনি হতাশ। মাঝে মাঝে 'শোভনা' নামের পুরোনো ক্ষতটাও দগদগে হয়ে ওঠে। এত এত অপ্রাপ্তির ভার তিনি একদমই বইতে পারছিলেন না। জীবনস্পৃহা শূন্য হয়ে যাওয়ার কারণেই ধীরে ধীরে মৃত্যুচিন্তা কবির মাথায় দানা বেঁধেছিল।
এমনকি নিজের জীবনের কাহিনীও উপন্যাসের মোড়কে লিখতেন তিনি। সেগুলো পড়লেই তাঁর ব্যক্তিজীবনের তিক্ততা-গ্লানি-হতাশা-করুণ কাহিনীগুলো খুব সহজেই চোখে পড়তো। তাঁর সমসাময়িক কবি-সাহিত্যিকেরা যেভাবে তাঁকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেন, সেটা জানতে পেরে বেশ খারাপই লেগেছে। 'ঝরা পালক' এর মতন তিনিও ঝরেই পড়লেন।
শাহাদুজ্জামানের বর্ণনাশৈলী চমৎকার। মুগ্ধ হয়েই বইটা শেষ করেছি। উনার ভাষাশৈলী একদম মৌলিক, পড়ে শান্তি পাওয়া যায়। এটাকে ঠিক ফিকশন বলা যায় না, তাই বলে পড়ার সময় একটুও একঘেয়ে মনে হয়নি। ধীরে ধীরে মন খারাপ হয়েছে, মাঝে মাঝে সুখের সন্ধান পেয়ে মনটা উদ্বেলিত হলেও দমকা হাওয়ার মতন আবারো বিষণ্ণতা গ্রাস করে নিয়েছে। বইটি পছন্দের তালিকায় যোগ হল।
আপনি যদি জীবনানন্দকে জানতে চান, তাঁর লেখার পেছনের কাহিনীগুলো সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে বইটি পড়ুন। আর যদি জীবনানন্দকে নিয়ে আপনার আগ্রহ নাও থেকে থাকে, তবুও আমি অনুরোধ করবো বইটি পড়ার জন্য। জীবনে একটু হলেও ভাঙা বাশির করুণ সুর শুনতে পাওয়া উচিত, তাই না?
“একবার যখন দেহ থেকে বা’র হয়ে যাব
আবার কি ফিরে আসবো না আমি পৃথিবীতে?
আবার যেন ফিরে আসি
কোনো এক শীতের রাতে
একটা হিম কমলালেবুর করুণ মাংস নিয়ে
কোন এক পরিচিত মুমূর্ষুর বিছানার কিনারে।”
Sign into Goodreads to see if any of your friends have read
একজন কমলালেবু.
Sign In »
Reading Progress
August 12, 2020
– Shelved
August 12, 2020
– Shelved as:
to-read
October 13, 2020
–
Started Reading
October 14, 2020
– Shelved as:
recommended
October 14, 2020
– Shelved as:
biography
October 14, 2020
–
Finished Reading
November 3, 2020
– Shelved as:
bangla
December 20, 2020
– Shelved as:
favorites