স্বয়ং ভগবান
স্বয়ং ভগবান ( সংস্কৃত : स्वयं भगवान् ) হল একটি সংস্কৃত ধর্মতাত্ত্বিক শব্দ। এই শব্দটির মাধ্যমে হিন্দুধর্মে 'ভগবান'-রূপী একক সর্বোচ্চ ঈশ্বরের ধারণাটি প্রকাশ করা হয়। গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মে এই শব্দটির প্রয়োগ সর্বাধিক। গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের কৃষ্ণ-কেন্দ্রিক ধর্মতত্ত্বে কৃষ্ণকে "স্বয়ং ভগবান" নামে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। গৌড়ীয় বৈষ্ণবরা শুধুমাত্র কৃষ্ণকেই "স্বয়ং ভগবান" বলেন।[১] যদিও ভাগবত পুরাণে এর অন্য ব্যবহারও দেখা যায়। গৌড়ীয় বৈষ্ণব, বৈদিক ও শঙ্করের অনুগামীরা কৃষ্ণকে বিষ্ণু ও নারায়ণ এবং তার সকল অবতারের উৎস মনে করেন।[২] এই কারণেই তাকে "স্বয়ং ভগবান" বলা হয়।[৩][৪][৫]
বর্ণনা
[সম্পাদনা]ভাগবত পুরাণ ও বৈদিক ধর্মগ্রন্থে কৃষ্ণ বা বিষ্ণুর অন্যান্য রূপ সম্পর্কে এই শব্দটি খুব কমই ব্যবহৃত হয়েছে। অন্যান্য বৈষ্ণব সম্প্রদায়েও এই শব্দটির ব্যবহার কম। অনেকেই কৃষ্ণকে "স্বয়ং ভগবান" মনে করেন;[৬] কারণ, সম্প্রদায়-নির্বিশেষে তাকে একটি উদার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।[৭] তবুও কৃষ্ণকে "স্বয়ং ভগবান" বলে স্বীকৃতি দেওয়া হলে, বুঝতে হবে মতবাদটি গৌড়ীয় বৈষ্ণব,[৮] বৈদিক সম্প্রদায়,[৯] বা শঙ্করের সম্প্রদায় থেকে উৎসারিত। কারণ এই তিনটি মতবাদই কৃষ্ণকে বিষ্ণু ও তার অবতারগণের উৎস মনে করে। এই মতটি "ছান্দগ্য উপনিষদের একটি বিখ্যাত উক্তি থেকে গৃহীত"[১](৮।১৩।১)[১০]
অন্য মতে, কৃষ্ণ বিষ্ণুর অন্যতম অবতার। লক্ষ্যণীয় এই যে, বিষ্ণুকে সাধারণত অন্যান্য অবতারের উৎস মনে করা হলেও, এটি বৈষ্ণবধর্মে ঈশ্বরের একটি নাম মাত্র। বৈষ্ণবধর্মে ঈশ্বর নারায়ণ, বাসুদেব ও কৃষ্ণ নামেও পরিচিত। এই প্রত্যেকটি নামের সঙ্গে একটি বিশেষ মূর্তি কল্পনা করে সেই মূর্তিতেই প্রাধান্য আরোপ করা হয়।[১১]
“ভগবান” শব্দটির প্রথম কিন্তু প্রকৃত অর্থপূর্ণ ব্যবহার দেখা যায় ঋগ্বেদে, ঋগ্বেদ সংহিতায়। ঋগব্দে ১০ম মণ্ডল ১২৪তম সূক্ত, যাকে দেবীসূক্ত বলা হয়, সেখানে ২য় ঋকে ইশ্বর বা ভগবানের সহযোগী মহাদেবী বলছেন যে তিনি বিশ্বকর্মা বা বিশ্বস্রষ্টার প্রয়োজনে এবং ভগম (भग॑म् ) বা পরম সত্তার সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হন।
পরবর্তীতে ভগবানের গুণ বা ঐশ্বর্য বা ক্ষমতার অংশ যাদের মধ্যে থাকে যেমন দেবতা, আচার্য, গুরু পুরোহিত প্রমুখ সকলকেই সসম্ভ্রমে “ভগবন” সম্বোধনের রীতি প্রচলিত হয়। এই অর্থে সংস্কৃত সাহিত্যে শব্দটির বহুল ব্যবহার হয়েছে।
তবে ভগবদ্গীতার ঈশ্বর তত্ত্বকে অনুসরণ করে সনাতন হিন্দু ধর্ম প্রথমে শ্রীকৃষ্ণকে এবং তাঁরই সূত্র ধরে এক সর্বশক্তিমান পরম সত্তাকে ভগবান বলে অভিহিত করতে শুরু করে। এই ব্যবহার আধুনিক হলেও ঋগ্বেদের সঙ্গে সামঞ্জষ্যপূর্ণ।
শব্দটির চূড়ান্ত সংজ্ঞার্থঃ ঋগ্বেদের পুরুষ সূক্ত, ভগবদগীতার পুরুষোত্তম যোগ অধ্যায় এবং মাণ্ডুক্য উপণিষদের ৩-৩ থেকে ৭-৭ পর্যন্ত শ্লোক সমূহ অনুসরণ করে শব্দটির চূড়ান্ত সংজ্ঞার্থ নির্ধারণ করা যায়। সেদিক থেকে এক সর্বশক্তিমান পরমসত্তাকে ভগবান বলা হয় যিনি বৈশ্বানর অগ্নিরূপে স্থূল বস্তুসমূহ গ্রাস করেন, সকল প্রাণীর অন্তরে অন্তর্যামী রূপে বিরাজ করেন, সর্বশক্তিমান রূপে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করেন এবং জ্ঞানের অতীত হয়েও কল্যাণের পক্ষে অবস্থান করেন।
হিন্দু দর্শন বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ Gupta, Ravi M. (2007). Caitanya Vaisnava Vedanta of Jiva Gosvami. Routledge. আইএসবিএন ০-৪১৫-৪০৫৪৮-৩.
- ↑ Bhagawan Swaminarayan bicentenary commemoration volume, 1781-1981. p. 154: ...Shri Vallabhacharya [and] Shri Swaminarayan... Both of them designate the highest reality as Krishna, who is both the highest avatara and also the source of other avataras. To quote R. Kaladhar Bhatt in this context. "In this transcendental devotieon (Nirguna Bhakti), the sole Deity and only" is Krishna. New Dimensions in Vedanta Philosophy - Page 154, Sahajānanda, Vedanta. 1981
- ↑ Delmonico, N. (২০০৪)। "The History Of Indic Monotheism And Modern Chaitanya Vaishnavism"। The Hare Krishna Movement: the Postcharismatic Fate of a Religious Transplant। Columbia University Press। আইএসবিএন 9780231122566। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৪-১২।
- ↑ Elkman, S.M. (১৯৮৬)। Jiva Gosvamin's Tattvasandarbha: A Study on the Philosophical and Sectarian Development of the Gaudiya Vaishnava Movement। Motilal Banarsidass Pub। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - ↑ Dimock Jr, E.C. (১৯৮৯)। The Place of the Hidden Moon: Erotic Mysticism in the Vaisnava-Sahajiya Cult of Bengal। University Of Chicago Press। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) page 132 - ↑ Mepathur Narayana Bhattatiri (২০০৩)। Narayaneeyam-Bhagavata, Condensed Edition। Sri Ramakrishna Math। আইএসবিএন 81-7120-419-8।pp.234-239
- ↑ Mahony, W.K. (১৯৮৭)। "Perspectives on Krishna's Various Personalities"। History of Religions। 26 (3): 333–335। জেস্টোর 198702)। ডিওআই:10.1086/463085।
- ↑ Kennedy, M.T. (১৯২৫)। The Chaitanya Movement: A Study of the Vaishnavism of Bengal। H. Milford, Oxford university press।
- ↑ Flood, Gavin D. (১৯৯৬)। An introduction to Hinduism। Cambridge, UK: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 341। আইএসবিএন 0-521-43878-0। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৪-২১।"Early Vaishnava worship focuses on three deities who become fused together, namely Vasudeva-Krishna, Krishna-Gopala, and Narayana, who in turn all become identified with Vishnu. Put simply, Vasudeva-Krishna and Krishna-Gopala were worshiped by groups generally referred to as Bhagavatas, while Narayana was worshipped by the Pancaratra sect."
- ↑ Essential Hinduism S. Rosen, 2006, Greenwood Publishing Group p.124 আইএসবিএন ০-২৭৫-৯৯০০৬-০
- ↑ Matchett 2000, পৃ. 4
পাদটীকা
[সম্পাদনা]- Elkman, S.M. (১৯৮৬)। Jiva Gosvamin's Tattvasandarbha: A Study on the Philosophical and Sectarian Development of the Gaudiya Vaisnava Movement। Motilal Banarsidass Pub। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - Flood, G.D. (২০০৬)। The Tantric Body: The Secret Tradition of Hindu Religion। IB Tauris। আইএসবিএন 1845110129।
- Kennedy, M.T. (১৯২৫)। The Chaitanya Movement: A Study of the Vaishnavism of Bengal। H. Milford, Oxford university press।
- Ramanuja (১৯৬২)। "The Vedanta Sutras with the Commentary by Ramanuja"। Delhi: Motilal Banarsidass। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - Richard Thompson, Ph. D. (ডিসেম্বর ১৯৯৪)। "Reflections on the Relation Between Religion and Modern Rationalism"। ২০১১-০১-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৪-১২।
- Gupta, Ravi M. (২০০৪)। Caitanya Vaisnava Vedanta: Acintyabhedabheda in Jiva Gosvami's Catursutri tika। University Of Oxford।
- Gupta, Ravi M. (২০০৭)। Caitanya Vaisnava Vedanta of Jiva Gosvami's Catursutri tika। Routledge। আইএসবিএন 0415405483।
- Ganguli, K.M. (1883 -1896)। The Mahabharata of Krishna Dwaipayana Vyasa। Kessinger Publishing। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য)
- Kaviraja, K. (১৯৭৪)। Sri Caitanya-Caritamrta of Krsnadasa Kaviraja। Bhaktivedanta Book Trust। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - S.D. Goswami (১৯৯৮)। "The Qualities of Sri Krsna"। GNPress: 152 pages। আইএসবিএন 0911233644।
- Garuda Pillar of Besnagar, Archaeological Survey of India, Annual Report (1908–1909). Calcutta: Superintendent of Government Printing, 1912, 129.
- Rowland Jr, B. (১৯৩৫)। "Notes on Ionic Architecture in the East"। American Journal of Archaeology। Archaeological Institute of America। 39 (4): 489–496। জেস্টোর 498156। ডিওআই:10.2307/498156।
- Delmonico, N. (২০০৪)। "The History Of Indic Monotheism And Modern Chaitanya Vaishnavism"। The Hare Krishna Movement: the Postcharismatic Fate of a Religious Transplant। Columbia University Press। আইএসবিএন 9780231122566। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৪-১২।
- Mahony, W.K. (১৯৮৭)। "Perspectives on Krsna's Various Personalities"। History of Religions। 26 (3): 333–335। জেস্টোর 1062381। ডিওআই:10.1086/463085।
- D Hudson (১৯৯৩)। "Vasudeva Krsna in Theology and Architecture: A Background to Srivaisnavism"। Journal of Vaisnava Studies (2)।
- Beck, Guy L. (Ed.) (২০০৫)। Alternative Krishnas: Regional and Vernacular Variations on a Hindu Deity। SUNY Press। আইএসবিএন 0791464156।
- Matchett, Freda (২০০০)। Krsna, Lord or Avatara? the relationship between Krsna and Visnu: in the context of the Avatara myth as presented by the Harivamsa, the Visnupurana and the Bhagavatapurana। Surrey: Routledge। পৃষ্ঠা 254। আইএসবিএন 0-7007-1281-X।
- Valpey, Kenneth Russell (২০০৬)। Attending Kṛṣṇa's image: Caitanya Vaiṣṇava mūrti-sevā as devotional truth। New York: Routledge। আইএসবিএন 0-415-38394-3।