যোরহাট
জোড়হাট যোৰহাট | |
---|---|
ডাকনাম: আসামের সাংস্কৃতিক রাজধানী এবং জ্ঞান নগরী | |
Location in Assam | |
স্থানাঙ্ক: ২৬°৪৫′ উত্তর ৯৪°১৩′ পূর্ব / ২৬.৭৫° উত্তর ৯৪.২২° পূর্ব | |
রাজ্য | আসাম |
বিভাগ | Upper Assam |
জেলা | যোরহাট |
জোন | ৩ (Central, East & West) |
ওয়ার্ড | ১৯ |
Jorhat Municipal Board | ১৯০৯ |
সরকার | |
• ধরন | পৌরসভা |
• শাসক | যোরহাট পৌরসভা বোর্ড |
• Deputy Commissioner | Shri Pulak Mahanta ACS |
আয়তন | |
• মোট | ৭২.৮ বর্গকিমি (২৮.১ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ১১৬ মিটার (৩৮১ ফুট) |
জনসংখ্যা | |
• মোট | ১,৫৩,২৫৯ |
• ক্রম | ৪ র্থ আসামএ after Guwahati, Silchar and Dibrugarh[১] |
Languages | |
• Official | Assamese, English |
সময় অঞ্চল | IST (ইউটিসি+৫:৩০) |
PIN | ৭৮৫০০১ |
Telephone code | ০৩৭৬ |
যানবাহন নিবন্ধন | AS-০৩ |
Literacy | ৮৯.৪২% (২০১১) |
Legislature type | Municipality |
Lok Sabha constituency | 1 |
Vidhan Sabha constituency | 1 |
Planning agency | 1 |
যোরহাট (অসমীয়া: যোৰহাট) অসমের যোরহাট জেলায় স্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ নগর। এটি অসমের রাজধানী গুয়াহাটি থেকে ৩১৮ কি.মি. পূর্বে অবস্থিত। অষ্টাদশ শতাব্দীতে টুংখুঙিয়া আহোম রাজবংশ যোরহাটে রাজধানী স্নানান্তর করেন। নগরটিকে অসমের সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র বলা হয়। অসমের অন্যান্য স্থানের তুলনায় যোরহাটে সাক্ষরতার হার বেশি। লাচিত বরফুকন মৈদাম, টোকোলাই চা গবেষণা কেন্দ্র, অসম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও যোরহাট জিমখানা ক্লাব ইত্যাদি যোরহাটের অন্যতম পর্যটন স্থল।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা
[সম্পাদনা]যোরহাটের ভৌগোলিক অবস্থান হচ্ছে ২৬°৪৫′ উত্তর ৯৪°১৩′ পূর্ব / ২৬.৭৫° উত্তর ৯৪.২২° পূর্ব[২] ও গড় উচ্চতা ১১৬মিটার। যোরহাটের পূর্বে শিবসাগর জেলা, পশ্চিমে গোলাঘাট জেলা, উত্তরে ব্রহ্মপুত্র নদী ও দক্ষিণে নগা পাহাড়। যোরহাট নগরের পরিসীমা ৯.২ বর্গ কি.মি.। এখানে পৌরসভার অন্তর্গত ১৯টি ওয়ার্ড আছে।[৩] ২০১১ সনের লোকগননা অনুযায়ী যোরহাটের অন্তর্গত অঞ্চলসমূহের মোট জনসংখ্যা ৬৬,৪৫০ জন, ও ঘনবসতি ২,৮৫১। [৪]; পুরুষ ও মহিলার সংখ্যা ক্রমে ৩৬,৩৬৬ ও ৩০,০৮৪ জন। ১৯৯১ সনের জনগননা অনুযায়ী এই সংখ্যা ১৮.৬৯% বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান এখানকার জনসংখ্যা প্রায় ১.৪৫ লক্ষ্য।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]১৮ শতিকায় ভোগদৈ নদীর দুইপারে স্থিত বাজার চকীহাট ও মাছরহাটকে জোড়া বা একত্রিকরন করার পর অঞ্চলটির নাম যোরহাট হয়েছে।[৫] ১৭৯৪ সালে আহোম রাজা গৌরিনাথ সিংহ আহোম সাম্রাজ্যের রাজধানী শিবসাগর থেকে যোরহাটে স্থানান্তর করেন।[৫] আহোম রাজার এই স্থানে রাজমাও পুকুর বা পুকুর, বুঢ়াগোহাই পুকুর, বলীয়া গোহাই পুকুর, বঙাল পুকুর, কটকী পুকুর ও মিঠাপুকুর খনন করেন। কিন্তু ১৮১৭ সনে মানের আক্রমণে যোরহাট নগর সম্পূর্ণ রুপে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। পরবর্ত্তী সময়ে যোরহাট ব্রিটিশ শাসনের অন্তর্ভুক্ত হয় ও ডেভিড স্কট, কেপ্তেইন রিচার্ড-এর নেতৃত্বে নগরটি পুনঃনির্মাণ করা হয়। যদিও ব্রিটিশ শাসন নানান বিদ্রোহ, আন্দোলন ইত্যাদির সহিত জড়িত ছিল তথাপিও এই ঐতিহাসিক নগর নির্মাণে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। ১৮৩৯ সালে গোমধর কোয়র, পিয়লি ফুকন, জিউরাম দুলিয়া বরুয়া, মণিরাম দেওয়ান ইত্যাদি স্বাধীনতা সংগ্রামীরা প্রথম এই নগর থেকেই ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা করেন। ১৫৪৮ সালে মনিরাম দেওয়ান সহ আন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের যোরহাট নগেরে ফাঁসি দেওয়া হয়।[৬] ১৮৬৯ সালে যোরহাট নগরকে শিবসাগর জেলার অন্তর্গত একটি মহকুমা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।[৫] ১৯১১ সনে নগরটিকে শিবসাগর জেলার সদর ঘোষণা করা হয়। ১৮৮৫ সালে এই অঞ্চলে রেলসেবা চালু করা হয়। ১৯০৯ সনে যোরহাট পৌরসভা গঠন করা হয়।
সংস্কৃতি
[সম্পাদনা]যোরহাটকে অসমের সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র বলা হয়। যোরহাটের সংস্কৃতিক প্রেমী জনসাধারনের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার ফলে নগরটিতে এখনও পুরানো ঐতিহ্যের সাক্ষর দেখা যায়। ১৯১৫ সনে যোরহাট সাহিত্য সভা স্থাপিত হয়। অসম সাহিত্য সভার এক মুখ্য কার্য্যালয় রাধাকান্ত সন্দিকৈ কর্তৃক দান দেওয়া চন্দ্রকান্ত সন্দিকৈ ভবন এখানেই অবস্থিত। যোরহাট জেলা অসমের বহুসংখ্যক প্রসিদ্ধ মণিসীর জন্মস্থান। গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাধ্যক্ষ কৃষ্ণকান্ত সন্দিকৈ, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার বিজয়ী বীরেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য, নীলমণি ফুকন ও অন্যান্য বহুসংখ্যক প্রসিদ্ধ কবি, সাহিত্যিক, গবেষক পণ্ডিত, কারিকরী বিশারদ ও সাংবাদিক যোরহাটে জন্মগ্রহণ করেছেন। যোরহাট থেকে বহুসংখ্যক দৈনিক ও সাপ্তাহিক অসমীয়া খবরের কাগজ প্রকাশিত হয়:- ইংরেজি খবরের কাগজ- 'The North East Times' ও 'The Telegraph', অসমীয়া খবরের কাগজ-সাপ্তাহিক জনমভূমি, দৈনিক জনমভূমি, আমার অসম, অসমীয়া খবর, ও দৈনিক অগ্রদুত হিন্দি খবরের কাগজ-পূর্বাঞ্চল প্রহরী।[৫] ১৯৮৭ সালে যোরহাটের প্রথম নির্দেশিকা 'City Guide of Jorhat' প্রকাশ পায়। নগরটির মধ্যবর্তী গড় আলিতে অবস্থিত ইলি সিনেমা হল হচ্ছে যোরহাটের প্রথম ছবিগৃহ।
রাজনীতি
[সম্পাদনা]যোরহাট নগর যোরহাট লোকসভার অন্তর্গত।[৭] বর্তমান সাংসদ হচ্ছেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের গৌরব গগৈ। বর্তমান বিধায়ক হচ্ছেন ভারতীয় জনতা পার্টির হিতেন্দ্র নাথ গোস্বামী। [৮]।
যাতায়ত
[সম্পাদনা]বিমান
[সম্পাদনা]যোরহাট বিমান বন্দর বরৈয়া বিমান বন্দর নামে পরিচিত। এটি নগরের মাঝে অবস্থিত। এই বিমানবন্দর থেকে নিয়মিতভাবে গুয়াহাটি, কলকাতা, মুম্বাই ও বেঙ্গালুরুতে বিমান চলাচল করে।
রেলপথ
[সম্পাদনা]যোরহাট ভারতীয় রেলসেবার উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলসেবার অন্তর্গত। নগরটির ভিতরে স্থিত যোরহাট রেল স্টেশন ও কিছু দূরত্বে স্থিত মরিয়নি রেল জংশন। গুয়াহাটি-যোরহাট জন শতাব্দী এক্সপ্রেশ ও গুয়াহাটি-যোরহাট-মরিয়নি ইন্টারশিটি এক্সপ্রেশ হচ্ছে এখানকার প্রধান রেল সংযোগ।
পথ
[সম্পাদনা]উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রধান নগরের সহিত যোরহাট স্থলপথ দ্বারা সংযুক্ত। তরাজান কটকীপুখুরী নামক স্থানে আন্তঃরাজ্যিক বাস আস্থান অবস্থিত। ৩৭নং রাষ্ট্রীয় ঘাইপথ নগরটিকে সম্পূর্ণ অসমের অন্যান্য শহরের সহিত সংযুক্ত করেছে।
উল্লেখযোগ্য স্থান
[সম্পাদনা]যোরহাট জিমখানা ক্লাব
[সম্পাদনা]১৮৭৬ সালে যোরহাটের চেকনীধরা গাঁও নামক স্থানে ডি. স্লিমন নামক ব্যক্তি দ্বারা স্থাপিত হয়। স্থাপিত হওয়ার সময় থেকে এখানে ঘোঁড়া দৌর অনুষ্ঠিত হয় বিজয়ীকে গভার্ণরছ কাপ প্রদান করা হয়। এখানকার নাইন হল গল্ফ কর্স এশিয়ার সবচেয়ে পুরাতন ও বিশ্বের তৃতীয় পুরাতন গল্ফ কর্স। এখানে লন টেনিস গ্রাস কর্ট, সুইমিং পুল, বিলিয়ার্ডস, পোলো ও সিনেমা থিয়েটারের সুবিধা রয়েছে। ক্রিকেটের জন্য যোরহাট জিমখানা মাঠ র্য়েুছে। নগর থেকে ক্লাব অভিমুখে পথটি ব্রিটিশ দ্বারা নির্মিত প্রথম পাকা পথ।
চন্দ্রকান্ত সন্দিকৈ ভবন
[সম্পাদনা]রাধাকান্ত সন্দিকৈ কর্তৃক দান করা চন্দ্রকান্ত সন্দিকৈ ভবন অসম সাহিত্য সভার মুখ্য কার্য্যালয়। ১৯২৬ এটি নির্মাণ করা হয়। যোরহাট থেকে চন্দ্রধর বরুয়া, ডিম্বেশ্বর নেওগ, মিত্রদেব মহন্ত ইত্যাদি ব্যক্তিরা অসম সাহিত্য সভায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
বঙাল পুখুরী
[সম্পাদনা]যোরহাট নগরের দক্ষিণে ন-আলি পথের পাশে অবস্থিত বঙাল পুখুরী। ১৭৩৯ সালে বদন বরফুকন স্নান করতে যাওয়ার সময় রূপসিং বঙাল তাকে হত্যা করেন। হত্যা করা পুরষ্কারের ধন দিয়ে রূপসিং বঙাল একটি পুকুর খনন করান। হত্যা করা ধনে নির্মিত পুকুর বলে জনসাধারন এই পুকুরের জল ব্যবহার করেনা।
বুঢ়ীগোসানী দেবালয়
[সম্পাদনা]বুঢ়ীগোসানী দেবালয় হচ্ছে যোরহাট নগরের মাঝে স্থিত গড় আলি পথের পূর্বদিকে স্থিত এক শাক্ত মন্দির। ১৭০৮ সালে আহোম রাজা রুদ্রসিংহ জয়ন্তীয়া রাজ্য থেকে দেবির প্রতিমা এনে গড়গাঁও-এ প্রতিষ্ঠা করেন। গড়গাঁও থেকে রংপুর ও রংপুর থেকে যোরহাটে আহোম রাজ্যের রাজধানী স্থানান্তর হওয়ায় দেবীর মন্দির বর্তমান স্থানে স্থাপিত হয়।[৯] দেবালয়টিতে দুর্গা দেবীর প্রতিমূর্তি রয়েছে। পূর্বকালে বুঢ়ীগোসানী দেবালয় বরপূজাঘর দোল নামে পরিচিত ছিল।
রজা মৈদাম
[সম্পাদনা]রজা মৈদাম হচ্ছে ১৮৯৪ সালের ১ অক্টোবরে মৃত্যু হওয়া আহোম রাজা পুরন্দর সিংহের সমাধীস্থল। এটি টোকোলাই নদীর দক্ষিণ পারে অবস্থিত।
শিক্ষা ও গবেষণা
[সম্পাদনা]শিক্ষার ক্ষেত্রে যোরহাট অগ্রণী স্থান। ১৮৮৩ সালে স্থাপিত যোরহাট উচ্চ মাধ্যমিক বালক বিদ্যালয়ে সেই সময়ে বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল। ১৯৩০ সালে জগন্নাথ বরুয়া মহাবিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এটিই ছিল উজনী অসমের প্রথম মহাবিদ্যালয়। পরবর্ত্তী সময়ে নগরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ http://www.censusindia.gov.in/2011-prov-results/paper2/data_files/India2/Table_3_PR_UA_Citiees_1Lakh_and_Above.pdf
- ↑ Falling Rain Genomics, Inc - Jorhat
- ↑ "পৌরপতির একলম"। Jorhat municipal board। মার্চ ২১, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ২৮, ২০১২।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। Archived from the original on ১৬ জুন ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ ক খ গ ঘ http://jorhat.nic.in/about.htm ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে, আহরণ ২৩.১১.২০১১
- ↑ http://jorhat.nic.in/history.htm ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ অক্টোবর ২০০১ তারিখে, আহরণ ২৩.১১.২০১১
- ↑
"M.P Jorhat, Assam, India"। Assam। Election Commission of India। ১৩ ২ মার্চ ০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-২৬। line feed character in
|শিরোনাম=
at position 5 (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|আর্কাইভের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑
"M.L.A Jorhat, Jorhat, Assam, India"। Assam। Election Commission of India। ১৩ ২ মার্চ ০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-২৬। line feed character in
|শিরোনাম=
at position 7 (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|আর্কাইভের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ সম্পাদনা: ড০ মহেশ্বর নেওগ (২০০৪)। পৱিত্র অসম। গুৱাহাটী: অসম সাহিত্য সভা। পৃষ্ঠা ৬৮–৭০।