বিষয়বস্তুতে চলুন

মিনি বিগ ব্যাংগ পরীক্ষা (২০১০)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মিনি বিগ ব্যাংগ পরীক্ষা (২০১০) জগতের উৎপত্তি নিয়ে আয়োজিত এক বিশাল বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা যার উদ্দেশ্য ছিল জগৎ সৃষ্টির বিগ ব্যাংগ তথা "মহাবিস্ফোরণ" তত্ত্ব যাচাই করা। এই তত্ত্ব অনুসারে প্রায় ১৩.৭ বিলিয়ন বৎসর পূর্বে একটি মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে জগতের সৃষ্টি হয়েছিল। বিগ ব্যাংগ বা মহাবিস্ফোরণের অব্যবহিত পরে জগৎ ঠিক যে অবস্থায় ছিল অনুরূপ একটি অবস্থা কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করাই এই পরীক্ষার মূল লক্ষ্য। পরীক্ষাটি ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ৭ নভেম্বর তারিখে সংঘটিত হয়। বিশ্বের ৩০টি দেশের ১০০টি প্রতিষ্ঠানের এক হাজার পদার্থ বিজ্ঞানী সম্মিলিত ভাবে এই পরীক্ষার আয়োজনে অংশ গ্রহণ করে। ফ্রান্স এবং সুইজারল্যান্ড সীমান্তে, জেনিভা শহরের অদূরে মাটির ৩২৮ ফুট (গড়ে ১০০ মিটার) নিচে স্থাপিত লার্জ হেইড্রন কোলাইডার নামে পরিচিত বৃহদাকার একটি যন্ত্র ব্যবহার করে প্রায় আলোর গতিতে ধাবমান আয়নপ্রবাহের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটানো হয়েছে।[] কার্যত এটি একটি কৃত্রিম মহাবিস্ফোরণ। এই পরীক্ষায় সীসার পরমাণু থেকে ইলেক্ট্রন অপসারণপূর্ব্বক উদ্ভূত সীসার "আয়ন" ব্যবহার করা হয়েছে। আয়নসমূহের মধ্যকার সংঘর্ষের ফলে যে উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে তার তাপমাত্রা সূর্যের কেন্দ্রস্থলের চেয়ে ১ মিলিয়ন গুণ বেশি। এই তাপমাত্রায় পরমাণুন ক্নেদ্র অবস্থিত প্রোটন এবং নিউট্রন বিগলিত হয়ে পড়বে বলে ধারণা করা হয়।[] ধারণা করা হয় এই বিগলিত কণা দুটির সমন্বয়ে তৈরী হবে "কোয়ার্ক গ্লুয়োন প্লাজমা" যা কি-না বিগ ব্যাংগের ঠিক পরে উদ্ভূত হয়ে থাকবে।[]

লার্জ হেইড্রন কোলাইডার

[সম্পাদনা]
সিএমএস ডিটেক্টরে প্রকাশিত হিগস বোসন কণা।

এই পরীক্ষায় ব্যবহৃত লার্জ হেইড্রন কোলাইডার (ইংরেজি ভাষায়: Large Hadron Collider) অদ্যাবধি পৃথিবীর বৃহত্তম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী "কণা ত্বরক" বা particle accelerator । এটি উদ্ভাবন করেছে ইউরোপের বিজ্ঞান সংস্থা ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ, সংক্ষেপে "সার্ন" (ইংরেজি ভাষায়: CERN)। এর অবস্থান ফ্রান্স এবং সুইজারল্যান্ড সীমান্তে, জেনিভা শহরের অদূরে মাটির ৩২৮ ফুট (গড়ে ১০০ মিটার) গভীরে ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি উপবৃত্তাকার সুড়ঙ্গের অভ্যন্তরে।[] ৯ টেরা ইলেকট্রন ভোল্টের প্রোটন সমৃদ্ধ রশ্মির মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটানোর জন্য এটা তৈরি করা হয়েছে। এ ধরনের সংঘর্ষ ঘটানোর মূল উদ্দেশ্য জগৎ সৃষ্টির প্রকৃত রহস্য উন্মোচন করা। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মত পুরো লার্জ হেইড্রন কোলাইডারে প্রোটন রশ্মি প্রবাহ চালনা করা হয়। এর আগে ৮-১১ই আগস্টের মধ্যে এতে প্রাথমিক কণা রশ্মি ঢোকানো হয়, তাপমাত্রা ধীরে ধীরে ১.৯ কেলভিনে (-২৭১.২৫° সেলসিয়াস) নামিয়ে আনা হয়। এর মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম উচ্চশক্তির সংঘর্ষ ঘটানো হবে ২১শে অক্টোবর। তাই ২১শে অক্টোবরকেই এর উদ্বোধন দিবস আখ্যায়িত করা হয়েছে।

৭ নভেম্বর ২০১০ তারিখের পরীক্ষা

[সম্পাদনা]

শুরু থেকে লার্জ হেইড্রন কোলাইডার প্রোটন-প্রোটন সংঘর্ষ ঘটানো হয়ে আসছে। কিন্তু ৭ নভেম্বর ২০১০ তারিখের পরীক্ষায় প্রোটনের পরিবর্তে সীসার আয়ন ব্যবহার করা হয়েছে। এতে উৎপন্ন হয়েছে ঘনীভূত অগ্নিগোলকের যাদের তাপমাত্রা ১০ ট্রিলিয়ন সেলসিয়াসের বেশি। অগ্নি গোলকগুলোকে বলা হয় "কোয়ার্ক গ্লুয়োন প্লাজমা"। এগুলো পরীক্ষার মাধ্যমে পদার্থ বিজ্ঞানীরা জানতে পারবেন বিগ ব্যাংগের অব্যবহিত পরে জগতের অবস্থা কীরূপ ছিল।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. বিগ ব্যাং!
  2. Back to the beginning: Hadron Collider creates mini-Big Bang
  3. "Large Hadron Collider makes a mini-Big Bang - Machine smashes together lead ions instead of protons"। ১১ নভেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ নভেম্বর ২০১০ 
  4. বিবিসি খবর
  5. "LHC creates mini big bangs and incredible heat"। ১০ নভেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ নভেম্বর ২০১০ 

বহিসংযোগ

[সম্পাদনা]