বাব হুত্তা
বাব হুত্তা (Bāb Ḥuṭṭa) (আরবি: باب حطة or باب الحطه Bāb (al-)Huṭṭa, Bāb (al-)Hiṭṭa) জেরুজালেমের পুরাতন শহরের মুসলিম কোয়ার্টারের উত্তরে অবস্থিত একটি এলাকার নাম। এটির আক্ষরিক অর্থ "ক্ষমা (বা মার্জনা[১]) গেট"। নামটি আল-আকসা কম্পাউন্ডের সংলগ্ন ক্ষমার গেটকে নির্দেশ করে, যা Bāb Ḥuṭṭa স্ট্রিটের সাথে যুক্ত।
উত্তর দিকের গেটগুলোর অন্যতম হিসেবে,[২] এটি আবওয়াব মিহরাব মারিয়মের বিপরীতে[৩] এবং মাদ্রাসা আল-কারিমিয়া ও তুর্বাহ আল-আওহাদিয়ার মাঝে অবস্থিত।[৪] এটি উত্তর দেয়ালের পূর্ব কোণার কাছে অবস্থিত।[৫] আল-রাত্রোতের (২০০২) গবেষণা অনুসারে,[৬] গেটের নাম ইতিহাস জুড়ে বদলে গেছে। মনে করা হয় এই পরিবর্তনটি বছরের পর বছর সংস্কারের ফলে হয়েছে। ইতিহাসবিদ লে স্ট্রেঞ্জ এই দরজাটিকে প্রাচীন Bab al-Asbat নামে চিহ্নিত করেছেন।[৭] বর্তমানে, Bāb Ḥuṭṭa সেই তিনটি গেটের মধ্যে একটি যা সকাল, সন্ধ্যা এবং রাতের নামাজের জন্য উন্মুক্ত থাকে।[৮]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষার্ধে, মুজির আদ-দিন জেরুজালেমের অন্যতম বৃহৎ পাড়া হিসেবে এই এলাকার বর্ণনা করেন। অটোমান কর্তৃপক্ষের একটি আদমশুমারিতে এই পাড়ায় শুধুমাত্র মুসলিমদের উপস্থিতির কথা উল্লেখিত হয়। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে, পাড়াটির সীমানাগুলি নিম্নরূপ নির্ধারিত ছিল:
উত্তর ও পূর্ব - সেন্ট স্টিফেন'স গেট এবং হেরোড'স গেটের মধ্যবর্তী শহর প্রাচীর। উত্তর-পূর্ব কোণে রয়েছে স্টর্ক টাওয়ার (বুর্জ আল-লাকলাক)। দক্ষিণ - টেম্পল মাউন্টের উত্তর দিকে। পশ্চিম - যাওইয়াত এল-হুনুদ স্ট্রিট, 'আকাবাত এর-রাহিবাত, বাব এল-ঘাওয়ানিমা স্ট্রিট।
উনিশ শতকে, জেরুজালেমের জনসংখ্যার একটি ক্রমবর্ধমান অংশ ছিল ইহুদি, এবং তারা ইহুদি পাড়ার বাইরে মুসলিম পাড়ায় বসতি স্থাপন শুরু করে। ইহুদি পরিবারগুলি ১৮৩৭ সালের মধ্যে বাব আল-হুট্টায় বসতি স্থাপন করেছিল।[৯]
জনসংখ্যা
[সম্পাদনা]এই এলাকাটি পুরাতন শহরের অন্যতম দরিদ্র এলাকা হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি পুরাতন শহরের ডোম রোমানি সম্প্রদায়ের বাসস্থান, যা আরবিতে আল-নওয়ার নামে পরিচিত, এটি মুখতার আবেদ-আলহাকিম মোহাম্মদ ডিব সালিম দ্বারা পরিচালিত।[১০][১১][১২][১৩]
স্থাপত্য
[সম্পাদনা]"এই টিকে থাকা প্রবেশদ্বারটির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর একটি অর্ধবৃত্তাকার খিলান, যাতে ৪৫ ডিগ্রি চ্যামফার (Chamfer - তির্যকভাবে কাটা কোণ) ও অভ্যন্তরীণ একটি সেগমেন্টাল খিলান রয়েছে। এই অঞ্চলে, বিশেষ করে বাব আল-হাশমির মতো অন্যান্য প্রবেশদ্বারেও এই ধরনের বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। প্রাচীরের কারুকার্যে প্রবেশদ্বারের ১.২০ মিটার পশ্চিমে একটি উল্লম্ব সংযোগস্থলের অস্তিত্ব, সেইসাথে খসরুর ঐতিহাসিক বর্ণনা (খসরু, ১৯৮৩, পৃষ্ঠা ৫৯), ইঙ্গিত করে যে বাব আল-আসবাত কমপক্ষে দুটি খোলার সাথে নির্মিত হয়েছিল। তবে সম্ভবত ১৩ শতকের শেষের দিকে এটি আংশিকভাবে অবরুদ্ধ করে একটিমাত্র প্রবেশপথে পরিণত করা হয় (বার্গোয়েন, ১৯৯২, পৃষ্ঠা ১১২)"[১৪]
দরজার নির্মাণ ও সংস্কারের ইতিহাস
[সম্পাদনা]দরজার নির্মাণের সঠিক তারিখ অজানা, তবে ধারণা করা হয় এটি নির্মিত হয়েছিল খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর মধ্যভাগে, রোমানদের শাসনকালে। এরপর দরজাটি বহুবার সংস্কার করা হয়েছে, যার মধ্যে দুটি উল্লেখযোগ্য সংস্কার হল:
- আইয়ুবীদের সময়: রজব ৬১৭ হিজরি (খ্রিস্টীয় ১২২০ সালে) আইয়ুবীরা প্রথম দরজাটি সংস্কার করে।
- উসমানীয়দের সময়: ৯৮৯ হিজরি (খ্রিস্টীয় ১৫৮১ সালে) উসমানীয়রা দ্বিতীয়বারের মত দরজাটি সংস্কার করে।
এই দুই সংস্কারের ফলে দরজার স্থাপত্যশৈলীতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। আইয়ুবীরা দরজায় ইসলামী শিল্পকলার স্পর্শ যোগ করে, যার মধ্যে রয়েছে জটিল আরবি খোদাই এবং টাইলওয়ার্ক। উসমানীয়রা দরজার নকশায় আরও বৈচিত্র্য যোগ করে, যার মধ্যে রয়েছে স্টেইনড গ্লাস এবং মোজাইক।
তাৎপর্য
[সম্পাদনা]কিছু পণ্ডিত বিশ্বাস করেন যে সূরা আল-বাক্বারার ৫৮ এবং আল-আ'রাফের ১৬১ নম্বর আয়াতে উল্লেখিত "হিত্তা" শব্দটি "বাব আল-হিত্তা"-র সাথে সম্পর্কিত।
- সূরা আল-বাক্বারা: আয়াত ৫৮-এ, আল্লাহ তায়ালা ইসরায়েলীদেরকে একটি শহরে প্রবেশ করার নির্দেশ দেন এবং নির্দিষ্ট শব্দ "হিত্তা" উচ্চারণ করার আদেশ দেন। ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা অনুসারে, "হিত্তা" শব্দটি "পাপমুক্তি" বা "ক্ষমা প্রার্থনা"-র সাথে সম্পর্কিত বলে মনে করা হয়।
- সূরা আল-আ'রাফ: আয়াত ১৬১-এ, আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে প্রবেশকারীদেরকে "বাব আল-হিত্তা" দিয়ে প্রবেশ করার নির্দেশ দেন। ঐতিহ্যবাহী ব্যাখ্যা অনুসারে, "বাব আল-হিত্তা" জান্নাতের একটি বিশেষ দরজা যা পাপমুক্ত ও ক্ষমা প্রার্থীদের জন্য উন্মুক্ত।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Islam, M.A.; Al-Hamad, Z. F. (২০০৭)। "The Dome of the Rock: Origin of its Octagonal Plan."। Palestine Exploration Quarterly। 139 (2): 109–128। এসটুসিআইডি 162578242। ডিওআই:10.1179/003103207x194145।
- ↑ ROSEN-AYALON, MYRIAM (১৯৯০)। "Art and Architecture in Ayyūbid Jerusalem"। Israel Exploration Journal। 40 (4): 305–314। আইএসএসএন 0021-2059। জেস্টোর 27926205।
- ↑ Al-Ratrout, H. (২০০২)। The Architectural Development of Al-Aqsa Mosque In Islamic Jerusalem in the Early Islamic Period Sacred Architecture In the Shape Of "The Holy"। Department Of Architecture and Building Science University Of Strathclyde।
- ↑ Ghosheh, M.H. (২০০৫)। Guide to the Masjid al-Aqsa। Ministry of Awqaf and Religious Affairs।
- ↑ Oktay, Adnan (২০১৮-০৫-৩০)। "KUDÜS TASVİRLERİ: KİTÂBU EVSÂFI MESÂCİDİ'Ş-ŞERÎFE VE TUHFETÜ'L-HARAMEYN ÖRNEKLERİ"। Mukaddi̇me। 9: 111–132। আইএসএসএন 1309-6087। এসটুসিআইডি 149858313। ডিওআই:10.19059/mukaddime.404906 ।
- ↑ Al-Ratrout, H. (২০০২)। The Architectural Development of Al-Aqsa Mosque In Islamic Jerusalem in the Early Islamic Period Sacred Architecture In the Shape Of "The Holy"। Department Of Architecture and Building Science University Of Strathclyde।
- ↑ Al-Ratrout, H. (২০০২)। The Architectural Development of Al-Aqsa Mosque In Islamic Jerusalem in the Early Islamic Period Sacred Architecture In the Shape Of "The Holy"। Department Of Architecture and Building Science University Of Strathclyde।
- ↑ Mescid-İ Aksa Rehberi (Harem-i Şerif). (পিডিএফ)। TIKA। ২০১৩।
- ↑ Morgenstern, Arie (২০০৬)। Hastening Redemption: Messianism and the Resettlement of the Land of Israel। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 144–145। আইএসবিএন 978-0-19-530578-4।
- ↑ Selig, Abe. Jerusalem’s Herod’s Gate receives face-lift. 06/29/2010. Jerusalem Post
- ↑ A People Apart: The Romani community seeks recognition. By Eetta Prince-Gibson. Dom Research Center. 2001
- ↑ Danny Rubinstein. People / Steve Sabella: Blurring the lines. Haaretz. 2005
- ↑ Joseph B. Glass and Rassem Khamaisi. Report on the Socio-Economic Conditions in the Old City of Jerusalem. Munk Centre for International Studies, University of Toronto. p.4
- ↑ Al-Ratrout, H. (২০০২)। The Architectural Development of Al-Aqsa Mosque In Islamic Jerusalem in the Early Islamic Period Sacred Architecture In the Shape Of "The Holy"। Department Of Architecture and Building Science University Of Strathclyde।