পাডলিং
পাডলিং হলো ধান চাষের একটি কৃষি পদ্ধতি। এটি মূলত বন্যার সময়ে ধান চাষের একটি প্রাচীন পদ্ধতি। ঐতিহাসিকভাবে বন্যাকবলিত কোনো ধান ক্ষেতে মহিষ বা ষাড়ের পেছনে একটি ভারী জমিতে দিবার মই টানার মাধ্যমে এই কাজটি করা হতো এবং বর্তমানে এটি যান্ত্রিক উপায়ে করা হয়ে থাকে, সাধারণত ওয়াকিং ট্রাক্টর ব্যবহার করে এটি করা হয়।
পাডলিং পদ্ধতিতে কাদামাটির কণাগুলো মন্থন করা মাটির ছিদ্রগুলো বন্ধ করার মাধ্যমে পানির অনুস্রবণ হার কমিয়ে আনা হয়।[১]
পদ্ধতি
[সম্পাদনা]পাডলিংয়ের কাজ মাটি নরম, কর্দমাক্ত এবং চাষের উপযোগী হওয়া পর্যন্ত জমিতে জমা পানিতে মহিষ বা ষাড়ের পেছনে একটি ভারী জমিতে দিবার মই বা ট্রাক্টর চালনা করার মাধ্যমে করা হয়। সাধারণত এ ধরনের ট্রাক্টরের পেছনের টায়ারের জায়গায় লোহার চাকা থাকে। ফলে এটি জমিতে ভেজা অবস্থায় চালনা করলে মাটির সংযুতি ভেঙে যায় এবং জমি নরয় হয়ে যায়। ফলে, জমি চাষযোগ্য হয়ে যায়। এক কথায়, এটি মাটিকে কাদায় পরিণত করার একটি পদ্ধতি।
পাডলিংয়ের এর কাজ সাধারণত পানি সম্পৃক্ত অবস্থার চেয়ে বেশি থাকাকালীর অবস্থায় শুরু করা হয় এবং পানি জমির ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী আসা পর্যন্ত করা হয়। অর্থাৎ, পানি সম্পৃক্ত অবস্থার চেয়ে অধিক থাকাকালীন অবস্থায় এ কাজ শুরু করা হয়। এ অবস্থায় মাটিতে বল প্রয়োগের ফলে সর্বাধিক পাডলিং না হলেও মাটি থেকে আগাছা আয়ত্তিকরণ এবং মাটির সংযুতি ভাঙা শুরু করা হয়। এরপর কৃষকেরা সর্বাধিক পাডলিং অবস্থায় আসা পর্যন্ত পাডলিং এর কাজ করতে থাকেন।[২]
পাডলিংয়ের মাত্রা
[সম্পাদনা]পাডলিংয়ের মাত্রা নির্ভর করে মাটির প্রকারভেদ এবং ব্যবস্থাপনা কার্যাবলীর উপর। বেশি এঁটেল বিদ্যমান থাকলে পাডলিং করা সহজ হয়, ফলে বেশি সংযুতি ধ্বংস হয়। বেলে মাটিতে অল্প এঁটেল থাকা সত্ত্বেও পাডলিং করা যায়। মন্টমরিল্লোনাইট পরিবারের এঁটেল মণিক সমৃদ্ধ মাটিতে অধিকতর ক্যাওলিনাইট এবং অক্সাইড পরিবারের মণিক সমৃদ্ধ মাটিতে অধিকতর সহজে ও সম্পূর্ণরূপে কাদা করা যায়। একইভাবে, ক্যালসিয়াম সম্পৃক্ত এঁটেলের চেয়ে সোডিয়াম সম্পৃক্ত এঁটেলকে সহজে কাদা করা যায়। সাধারণত মাটিতে জৈব পদার্থ, আয়রন এবং অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের কোনো একটির বা উভয়ের পরিমাণ বেশি হলে সেই মাটিতে কাদা করা খুব কঠিন হয়।[২]
উদ্দেশ্য
[সম্পাদনা]- পানির অনুস্রবণ রোধের জন্য মাটির নিচে অভেদ্য স্তর তেরি করা। সুতরাং, এক্ষেত্রে ফসল জমে থাকা পানি পেয়ে থাকে।
- এ পদ্ধতিতে ধান চাষের জন্য নরম বীজতলা পাওয়া সম্ভব।
- মাটি নরম ও কর্দমাক্ত হয়। এর ফলে চাষের জন্য উপযোগী জমি পাওয়া যায়।
- পৃষ্ঠমৃত্তিকার সংযুতি ভেঙে ফেলা।
- এর ফলে মাটি কণা, বালি ইত্যাদি পৃথক করা সম্ভব হয়।
- ক্ষতিগ্রস্ত জমিকে পুনরায় এ পদ্ধতিতে চাষযোগ্য করা যায়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পাডলিং
[সম্পাদনা]বাংলাদেশের মাটিতে পুনরায় চাষাবাদের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে রোপা ধান চাষের ক্ষেত্রে পাডলিং করার মাধ্যমে অভেদ্য পৃষ্ঠমাটি সৃস্টি করা হয়, যা এ স্তরের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটায় এবং মাটির রঙেও পরিবর্তন আনে। কালো তেরাই মাটিতে কৃষিকাজের সম্ভাবনা মধ্যম থেকে স্বল্প, কারণ রোপা ধান চাষের জন্য পৃষ্ঠমাটির কারণে পাডলিং করতে অসুবিধা হয়। আবার, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র পললভূমিতে সৃষ্ট অগভীর উঁচু মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা কম হলেও রোপা আমন ধান চাষের করতে তা ব্যবহার করা হয়, কারণ এর পৃষ্ঠমাটি কর্দমাক্ত এবং দাতে দৃঢ় প্লাউপ্যান থাকে।[২]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Lu, Jun; Ookawa, Taiichiro; Hirasawa, Tadashi (২০০০)। "The effects of irrigation regimes on the water use, dry matter production and physiological responses of paddy rice"। Plant and Soil। 223: 209। ডিওআই:10.1023/A:1004898504550।
- ↑ ক খ গ "পাডলিং - বাংলাপিডিয়া"।