বিষয়বস্তুতে চলুন

দ্য টারমিনেটর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দ্যা টার্মিনেটর
দ্যা টার্মিনেটর চলচ্চিত্রের পোস্টার
পরিচালকজেমস ক্যামেরুন
প্রযোজকগেল অ্যান হার্ড
রচয়িতা
  • জেমস ক্যামেরুন
  • গেল অ্যান হার্ড
শ্রেষ্ঠাংশে
সুরকারBrad Fiedel
চিত্রগ্রাহকAdam Greenberg
সম্পাদকMark Goldblatt
প্রযোজনা
কোম্পানি
  • Cinema '84
  • Pacific Western[]
পরিবেশকওরিঅন পিক্সারস
মুক্তি
  • ২৬ অক্টোবর ১৯৮৪ (1984-10-26)
স্থিতিকাল১০৭ মিনিট[]
দেশমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র[][]
ভাষাইংরেজি
নির্মাণব্যয়$৬.৪ মিলিয়ন[]
আয়$৭৮.৩ মিলিয়ন[]

দ্যা টার্মিনেটর ১৯৮৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এক আমেরিকান বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীভিত্তিক চলচ্চিত্র। পরিচালনায় ছিলেন জেমস ক্যামেরন, ছায়াছবিটির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন ক্যামেরন নিজেই। ছবিটির অর্থায়ন করেছিলেন গেল অ্যান হার্ড। অভিনয়ে ছিলেন আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার, মাইকেল বেইন এবং লিন্ডা হ্যামিলটন। টারমিনেটর সিরিজের প্রথম মুভি এটি। সচল চিত্র ধারণ করা হয়েছিলো লস অ্যাঞ্জেলেসে। ছবিটি নির্মাণ করেছিলো হেমডেল ফিল্ম কর্পোরেশন, প্রচারে ছিলো ওরিওন পিকচারস। শোয়ার্জনেগার এখানে টারমিনেটরের ভূমিকায় অভিনয় করেন, ছবিটিতে তিনি ছিলেন একজন সাইবর্গ আততায়ী। ২০২৯ সাল থেকে তাকে অতীতে (১৯৮৪) পাঠানো হয়েছিলো ছোট্ট একটা দায়িত্ব দিয়ে। সারা কনরকে হত্যা করতে হবে তাকে। সারা কনরের অভিনয়ে ছিলেন হ্যামিলটন, যার ছেলে একদিন যন্ত্রশক্তিদের বিরুদ্ধে মানব সমাজকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করবে। বিয়েন এখানে কাইল রিজের ভূমিকাতে অভিনয় করেন, ভবিষ্যত থেকে অতীতে পাঠানো একজন সৈনিক সে। তার মিশন, সারা কনরকে রক্ষা করা।

বাণিজ্যিক সাফল্যের জন্য এই ছবিটির প্রতি তেমন কোন প্রত্যাশা ছিলো না। অথচ এটাই কী না আমেরিকান বক্স অফিসে টানা দুই সপ্তাহ শীর্ষে অবস্থান করেছিলো। এভাবেই ক্যামেরনের তার ফিল্ম ক্যারিয়ার শুরু করেন, জুটি বাঁধলেন আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারের সঙ্গে। ছায়াছবিটি দুর্দান্ত জনপ্রিয় হয়েছিলো। অ্যাকশন সীন আর দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়া কাহিনী দর্শক ভালবেসেছিলো। সেই সঙ্গে শোয়ার্জনেগারের অভিনয় ছিলো আক্ষরিক অর্থেই দেখার মতো। এই ব্যাপক সফলতা ছায়াছবিটিকে সিরিজে রূপ দিলো সেই সঙ্গে টেলিভিশন সিরিজ, কমিক বুক এবং উপন্যাসের জন্ম দিলো এই ছায়াছবি। প্রথম সিকুয়েল, টারমিনেটর ২: জাজমেন্ট ডে মুক্তি পেয়েছিলো ১৯৯১ সালে।

২০০৮ সালে দ্য টারমিনেটর ছায়াছবিটিকে আমেরিকার জাতীয় চলচ্চিত্র নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন করে লাইব্রেরি অফ কনগ্রেস। সেখানে একে "সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক অথবা সৌন্দর্যের স্মারক" বলে আখ্যা দেওয়া হয়।

কাহিনী সংক্ষেপ

[সম্পাদনা]

১৯৮৪ সালের মে মাসে ২০২৯ সালের দুই আগন্তুক লস অ্যাঞ্জেলেসে অবতরণ করে। একজন টারমিনেটর টি-৮০০, সাইবর্গ আততায়ীটিকে সারা কনর নামের এক তরুণীকে হত্যা করার মিশন দিয়ে পাঠানো হয়েছে। অপরজন কাইল রিস, একজন সৈনিক। তাকে পাঠানো হয়েছে সারা কনরকে টি-৮০০ থেকে রক্ষা করার জন্য। টারমিনেটরটি একজন গ্যাং মেম্বার, একজন অস্ত্রের দোকানদার, সারা কনর নামধারী দু'জন ভদ্রমহিলা এবং সারার রুমমেট জিনজার ও তার সঙ্গীকে হত্যা করার পর টার্গেট সারার অবস্থান এক নাইটক্লাবে ট্র্যাক করে। কাইলও সেখানে পৌঁছে যায়, সারা কনরকে টারমিনেটরের কাছ থেকে রক্ষা করে সে। একটি গাড়ি চুরি করে তারা, পালিয়ে যায় সেখান থেকে। টারমিনেটরটি এক পুলিশের গাড়ির দখল নেয়, ধাওয়া করে তার শিকারকে।

কাইল সারাকে ব্যাখ্যা দেয়, অদূর ভবিষ্যতে স্কাইনেট নামে পরিচিত এক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিজে নিজে চিন্তা করতে পারবে, নিউক্লিয়ার ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করবে সেটা। কাইল আরও জানায়, সারার অনাগত সন্তান জন তৎকালীন জীবিতদের একত্র করে বিদ্রোহ করবে যন্ত্র-সেনাবাহিনীর বিপক্ষে। তাদের এই গণবাহিনীকে বলা হয় রেজিস্ট্যান্স। রেজিস্ট্যান্স যখন যুদ্ধটা জিতে যাচ্ছে, স্কাইনেট এক টারমিনেটরকে অতীতে পাঠিয়ে দেয়। উদ্দেশ্য, সারা কনরকে জনের জন্মের আগেই হত্যা করা। রেজিস্ট্যান্সের শৃঙ্খলা ব্যর্থ করে দেওয়ার শেষ প্রচেষ্টা। টারমিনেটরটি দক্ষ এক আততায়ী, শক্তিশালী ধাতব অন্তঃকঙ্কাল দিয়ে নির্মিত সে। বহিরাঙ্গে আরেক স্তরে আছে জীবিত টিস্যু আর পেশী, মানুষের অবিকল প্রতিকৃতি সে।

কাইল আর সারাকে আরও একবার টারমিনেটরের হামলার শিকার হতে হলো, দ্বিতীয় আরেক গাড়ি-ধাওয়া হলো সেবার। এক পর্যায়ে দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে ওদের গাড়ি থেমে যায়। পুলিশ এসে আটক করে ওদের, তবে পালিয়ে যায় টারমিনেটর। অপরাধ মনোবিজ্ঞানী ড. সিলবারম্যান এসে কাইল রিসকে জেরা করেন। তিনি ধরেই নিয়েছিলেন এই লোক প্যারানয়েড এবং ডিলিউশনার। সে নিজেকে ভবিষ্যত থেকে আসা সৈনিক মনে করে। ওদিকে সারাকে প্রশ্ন করেন লেফটেন্যান্ট ট্র্যাক্সলার আর সার্জেন্ট ভুকোভিচ। টারমিনেটরটি চলে যায় তার হোটেল রুমে। নিজের চিকিৎসা নিজেই করে সে, ভেতরের সব যন্ত্রপাতি আবারও ঠিকমতো কাজ করতে শুরু করলে বের হয়ে আসে ওটা।কিছুক্ষণ বাদেই পুলিশ স্টেশনে আক্রমণ চালায় সে, ট্র্যাক্সলার আর ভুকোভিচ সহ অনেক পুলিশ অফিসার হত্যা করে, তবে সারা আর কাইল একফাঁকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। রাতটা তারা কাটায় এক সেতুর নিচে, তারপর মোটেল রুম ভাড়া করে বেশ কয়েকটা পাইপ বোমা বানিয়ে ফেলে দু'জনে। সারা বুঝতে পারে ওরা নিরাপদ নয়। যেখানেই যাবে, টারমিনেটর তাদের খুঁজে বের করে ফেলবে। কাইল স্বীকার করলো জন কনর সারার ছবিটি দেওয়ার পর থেকেই সে মেয়েটির প্রেমে পড়ে গেছে। কাইলের অনুভূতি ছুঁয়ে দেয় সারাকে, সঙ্গমে লিপ্ত হয় ওরা দু'জন।

শেষ রাতে টারমিনেটর তাদের মোটেল রুম পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তবে কাইল আর সারা ততক্ষণে এক পিকআপ ট্রাকে করে পালিয়ে গেছে। ধাওয়ার পুরোটা সময় কাইল একের পর এক পাইপ বোমা টারমিনেটরের দিকে ছুঁড়ে দেয়, তবে টারমিনেটরের গুলিতে সে আহত হয় একসময়। সারা টারমিনেটরটিকে তার মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেয় ঠিক, তবে নিজের গাড়ির নিয়ন্ত্রণও হারায় সেই সাথে। উল্টো হয়ে যাওয়া পিকআপের ভেতর থেকে ওরা দেখতে পায়, উঠে দাঁড়াচ্ছে টারমিনেটর। পেছন থেকে ছুটে আসা এক গ্যাসোলিন ট্রাক তাকে চাপা দিয়ে কিছুদূর পর্যন্ত হেঁচরে নিয়ে যায়। ট্রাক ড্রাইভার বের হয়ে আসতেই টারমিনেটর ট্রাকটি ছিনতাই করে, আবারও শুরু হয় ধাওয়া। ট্রাকের ফুয়েল ট্রেলারে একটা পাইপ বোমা ঢুকিয়ে দেয় কাইল, ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটে নিমেষে। টারমিনেটরটি পুড়ে যাওয়া ট্রাকের ভেতর থেকে বের হয়ে আসে, দেখে মনে হয় ওটার কর্ম সেরে গেছে।

টারমিনেটরের বহির্ত্বক ঝলসে গেছে ঠিক, তবে ধাওয়া চালিয়ে যায় ওটা। পালিয়ে এক ফ্যাক্টরিতে ঢুকে পড়ে ওরা। কাইল প্রতিটি যন্ত্রকে চালু করে দেয়, টারমিনেটরটি এতো নড়াচড়াতে ওদের যাতে খুঁজে না পায়। এক লৌহদণ্ড নিয়ে এসে তাকে আক্রমণও করে কাইল, তবে টারমিনেটর তাকে পরাস্ত করে দেয়। একপর্যায়ে শেষ পাইপ বোমাটি টারমিনেটরের পাঁজরে আটকে দেয় সে। বিস্ফোরণে ওখানেই মারা যায় কাইল, মারাত্মক আহত হয় সারা। একহাত আর পাবিহীন টারমিনেটর তখনও সচল, আবারও সারার দিকে এগিয়ে যায় সে। ওটাকে নিয়ে এক হাইড্রোলিক প্রেসের দিকে চলে যায় সারা, তারপর চালু করে দেয় যন্ত্র। থেঁতলে যায় টারমিনেটর, অবশেষে স্তব্ধ হয় ওটা। পরবর্তীতে সারাকে ওখান থেকে এক অ্যাম্বুলেন্স বের করে আনে। বের করে আনা হয় কাইলের মৃতদেহও। কর্তৃপক্ষ টারমিনেটরের অবশিষ্টাংশও পরীক্ষা করে দেখে।

কয়েক মাস পর, অন্ত্ব:সত্তা সারাকেমেক্সিকোর ভেতরে ভ্রমণ করতে দেখা যায়। পথে সে রেকর্ড করতে থাকে নিজের কথা, কথাগুলো অনাগত সন্তানকে তুলে দেওয়ার ইচ্ছে তার। কাইল যে তার বাবা, সেটা বলবে কি না তা নিয়ে নিজের সঙ্গে তর্ক করে সে, তারপর থেমে যায় এক গ্যাস স্টেশনে। ছোট্ট এক ছেলে এসে তার এক পোলারয়েড ছবি তুলে, এই ছবিটিই সারা কাইলের হাতে দেখেছিলো। ছবিটি কিনে নেয় ও, জন এক সময় এটা কাইলকে দেবে। এরপর সারা ড্রাইভ করে যায় সামনের ঘনীভূত ঝড়ো মেঘের দিকে।

অভিনয়ে যাঁরা ছিলেন

[সম্পাদনা]
  • আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার অভিনয়ে ছিলেন টার্মিনেটর / টি-৮০০ মডেম ১০১-এর ভূমিকায়। সাইবারনেটিক ছদ্মবেশী এক খুনী, অতীতে পাঠানো হয়েছে তাকে। গুপ্তঘাতক হিসেবে হত্যা করতে এসেছে সারা কনরকে।
  • মাইকেল বিয়েন অভিনয় করেছেন কাইল রিসের ভূমিকায়। রেজিস্ট্যান্সের একজন মানব সদস্য, সারা কনরকে রক্ষা করাই তার মিশন।
  • লিন্ডা হ্যামিলটন অভিনয় করেছেন সারা কনরের ভূমিকায়। জন কনরের ভবিষ্যত মা সে, টারমিনেটরের শিকার।
  • পল উইনফিল্ড অভিনয় করেন এড ট্র্যাক্সলারের ভূমিকায়। সারাকে জেরা করা পুলিশ লেফটেন্যান্ট।
  • ল্যান্স হেনরিকসেন হ্যাল ভুকোভিচের চরিত্রে ছিলেন, পুলিশ সার্জেন্ট।
  • আর্ল বোয়েন, ড. পিটার সিলবারম্যানের ভূমিকায় ছিলেন। অপরাধ মনোবিজ্ঞানী তিনি।
  • বেস মোট্টা অভিনয় করেছেন সারার রুমমেট জিনজার ভেনচুরা হিসেবে।
  • রিক রসোভিচ ম্যাট বুচান্যানের চরিত্রে অভিনয় করেন। জিনজারের ছেলেবন্ধু।

এছাড়াও ডিক মিলার ছিলেন অস্ত্রের দোকানী হিসেবে, শন স্কিপস ন্যান্সি, ব্রুস কার্নার ডেস্ক সার্জেন্ট, পেশাদার বডিবিল্ডার এবং শোয়ার্জনেগারের বন্ধু ফ্র্যাংকো কলাম্বু অভিনয় করেছেন ২০২৯ সালের টারমিনেটরের চরিত্রে। মেরিয়েন ম্যুলারলিলি অভিনয় করেন অপর একজন সারা কনর নামধারীর চরিত্রে।

নির্মাণ নেপথ্য

[সম্পাদনা]

ক্রমবিকাশ

[সম্পাদনা]

রোমে পিরানহা-২ এর মুক্তির সময় পরিচালক ক্যামেরন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি এক স্বপ্নে দেখেন বিস্ফোরন ঘটার পর সেখান থেকে একজন ধাতব অবয়ব সরে যাচ্ছে, হাতে ধরে রেখেছে রান্নাঘরে ব্যবহার্য ছুরি।[] "আমার পূর্বসূরীরা সবাই স্ল্যাশার-হরর প্রজাতির চলচ্চিত্র নির্মাণ করে এসেছেন।" ক্যামেরন বলেন, "জন কার্পেন্টারকে আমি আমার আদর্শ বলে মনে করি। তিনি হ্যালোউইন নির্মাণে ত্রিশ হাজার ডলারের মতো ব্যয় করেন। ওটা সবারই স্বপ্নের মতো, একটা স্টাইলিশ হরর মুভি করে দেখানো। ক্যামেরনের দুঃস্বপ্ন ছিলো স্ল্যাশার প্রজাতির ফিল্ম ইমেজ। কিন্তু ওটাই আমার গল্পের প্রথম ভিত্তি হিসেবে এসেছিলো।"[] ক্যামেরন যখন ক্যালোফর্নিয়ায় ফিরে এলেন, রেনডল ফ্রেকের বাড়িতে বসে লিখে ফেললেন দ্য টারমিনেটরের খসড়া।[] ক্যামেরন পরে বলেন লেখার সময় তাকে ১৯৫০ দশকের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীভিত্তিক ছায়াছবিগুলো প্রভাবিত করেছিলো। এদের মধ্যে দ্য ড্রাইভার এবং ম্যাড ম্যাক্স ২ ও রয়েছে।[][] খসড়াকে স্ক্রিপ্টে পরিণতি দিতে বন্ধু বিল উইশারকে ডাকলেন ক্যামেরন, গল্প বর্ণনের ক্ষমতা তাদের প্রায় অভিন্ন। ক্যামেরন উইশারকে সারা আর পুলিশ ডিপার্টমেন্টের প্রাথমিক দৃশ্যগুলো লিখার জন্য বলেন। উইশার বেশ দূরে বাস করতেন, কাজেই একে অন্যের আইডিয়া বা লেখনী তারা টেলিফোনের মাধ্যমে রেকর্ড করে আদান-প্রদান করতেন।

ক্যামেরনের এজেন্ট দ্য টারমিনেটরের কাহিনীসংক্ষেপ শুনেই বিরক্ত হয়েছিলেন। অনুরোধ করেছিলেন যেন ক্যামেরন আর কোন কাহিনী নিয়ে কাজ করেন। এরপরেই এজেন্টকে বরখাস্ত করেন ক্যামেরন।[১০] প্রথমত যে স্ক্রিপ্ট লেখা হয়েছিলো তাতে দুটো টারমিনেটরকে ভবিষ্যত থেকে পাঠানো হয়। প্রথমটি মুভির টারমিনেটরের মতোই, তবে দ্বিতীয়টি ছিলো লিকুইড মেটালের সাইবর্গ। যেটাকে বর্তমান সময়ের অস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করা সম্ভব হবে না।[১১] তবে ওই রোবটকে কীভাবে দেখাবেন তা নিয়ে চিন্তাতে পড়ে যান ক্যামেরন। ১৯৮৪ সালের প্রযুক্তি দিয়ে কাজটা ছিল অসম্ভব।[১১][১২] কাজেই ছেটে-কেটে এক রোবটের কাহিনী নিয়েই কাজ করা হলো শেষে।[১২] পরবর্তীতে লিকুইড মেটাল টারমিনেটরটিকে দেখা যায় ১৯৯১ সালের সিকুয়েল দ্য টারমিনেটর টু: জাজমেন্ট ডে-তে।

গেল অ্যান হার্ড দ্য টারমিনেটর-এর সত্ব জেমস ক্যামেরনের কাছ থেকে কিনেছিলেন মাত্র এক ডলার দিয়ে[১৩]

গেল অ্যান হার্ড, যিনি এখন নিউ ওয়ার্ল্ড পিকচারে রজার করম্যানের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। এই ছায়াছবি নিয়ে তিনি আগ্রহ দেখিয়েছিলেন।[১৪] ক্যামেরন তার কাছে মাত্র এক ডলারে গল্পটির সত্ব বিক্রি করে দেন, তবে শর্ত হিসেবে বলেন কোনদিন এই ছবিটি তৈরি করা হলে অ্যান হার্ডকেই প্রডিউসার হিসেবে থাকতে হবে, আর ক্যামেরনকে রাখতে হবে ডিরেক্টর হিসেবে। প্রডিউসার হিসেবে তিনি কিছু পরিবর্তন সাজেস্ট করেন, স্ক্রিনরাইটিং ক্রেডিটও নেন ছবিটির (ক্যামেরনের সঙ্গে)। তবে ক্যামেরন বলেন, হার্ড "আসলে কিছুই লিখেননি"।[১৩] ক্যামেরন আর হার্ড ব্যক্তিজীবনে বন্ধু, রজার ক্যামেরনের সঙ্গে কাজ করতেন আগে থেকেই । এখন দু'জনেই আছেন ওরিওন পিকচারসের সঙ্গে। ওরিওন ছায়াছবিটির প্রচার করতে রাজি হয়েছিলো, তবে ক্যামেরনকে কোনদিক থেকে অর্থনৈতিক খরচাটার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। হেমডেল পিকচারসের জন ডেলি স্ক্রিপ্টটা নেন।[১৫]

ডীলটা করে ফেলার জন্য ডেলিকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়াতে হবে। কাজেই ক্যামেরন তার বন্ধু ল্যান্স হেনরিকসনকে আগেভাগে পাঠালেন। হেনরিকসনের গায়ে ছিলো টারমিনেটরের মতো পোশাক, টারমিনেটরের অভিনয় করে দেখানোর জন্যই পাঠানো হয় তাকে।[১৫] লাথি মেরে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলেন তিনি, চামড়ার জ্যাকেট পরনে, দাঁতে সোনালীপাত লাগানো, নকল কাটাদাগ মুখজুড়ে। ধপ করে এক চেয়ারে বসে পড়লেন তিনি।[১৫] কিছুক্ষণ পরেই ক্যামেরন এসে পৌঁছান, অফিসের সবাইকে হেনরিকসনের অভিনয় থেকে রেহাই দেন তিনি। স্ক্রিনপ্লে আর ক্যামেরনের প্যাশন টের পেয়ে ডেলি প্রভাবিত হলেন।[১৫] ১৯৮২ সালের শেষদিকে এই ছায়াছবিটি নির্মাণের জন্য সাহায্য করতে রাজি হলেন ডেলি, জড়ালেন এইচবিও আর ওরিওনকে[১৫][১৬] প্রাথমিকভাবে দ্য টারমিনেটরের বাজেট ধরা হয় ৪ মিলিয়ন ডলার। পরে একে সাড়ে ছয়ে উন্নীত করা হয়।[১৭]

প্রাক-নির্মাণ

[সম্পাদনা]

ক্যামেরনের প্রথম কাজগুলোর মধ্যে একটা ছিলো কাইল রিসের চরিত্রে কাকে অভিনয় করাবেন তা ঠিক করা। ওরিওন চাইছিলো এমন কোন অভিনেতাকে ব্যবহার করা হোক যিনি আমেরিকাতে জনপ্রিয় তো বটেই, পাশাপাশি বিদেশেও যাঁর চাহিদা আছে। ওরিওনের কো-ফাউন্ডার মাইক মেডেভো আগে থেকেই আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারকে চিনতেন। তার এজেন্টকে দ্য টারমিনেটরের স্ক্রিপ্ট পাঠিয়ে দিলেন তিনি।[১৬] তবে ক্যামেরন ব্যাপারটা জানতে পেরে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারকে দিয়ে কাইল রিসের অভিনয় করাতে হলে যে আরও বিশালদেহী কাওকে টারমিনেটরের জায়গাতে অভিনয় করাতে হবে! এমন মানুষ তিনি পাবেন কোথায়? স্টুডিও অবশ্য তাকে বললো ও.জে. সিম্পসনকে দিয়ে টারমিনেটরের চরিত্রটা করে ফেলা যায়। ক্যামেরন অবশ্য মনে করলেন না সিম্পসনকে দিয়ে খুনীর চরিত্র হবে।[১৮][১৯] তবুও শোয়ার্জনেগারের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন ক্যামেরন। এই লোককে তিনি কাইল রিসের চরিত্র কোনভাবেই দেবেন না বলে ঠিক করেছেন। পরিকল্পনাটি চমৎকার ছিলো, ক্যামেরন শোয়ার্জনেগারের সঙ্গে দেখা করবেন, তারপর অযথাই ঝগড়া বাঁধিয়ে দেবেন। তারপর হেমডেলে ফিরে এসেই ঘোষণা দেবেন, "এই মানুষটি রিসের চরিত্রের জন্য অযোগ্য।"[২০]

তবে শোয়ার্জনেগারের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তিনি বেশ মজা পেলেন কথা বলে। শোয়ার্জনেগার তাকে বোঝাচ্ছিলেন খলনায়কের অভিনয় কেমন হওয়া উচিত। ক্যামেরন তার চেহারাটির স্কেচ নোটপ্যাডে আঁকতে শুরু করেন, আচমকা শোয়ার্জনেগারকে অনুরোধ করলেন, "কথা বলা থামিয়ে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ বসবেন কী?"[১৯] মিটিং শেষ হলে ডেলির কাছে ফিরে গেলেন তিনি। বললেন, "শোয়ার্জনেগার দিয়ে কাইল রিসের অভিনয় হবে না। তবে সেইরকম টারমিনেটর হতে পারেন কিন্তু উনি!"[২১] শোয়ার্জনেগার অবশ্য এই মুভি নিয়ে খুব বেশি উচ্ছসিত ছিলেন না। কোনান দ্য বারবারিয়ান-এর সেট চলছে, সাক্ষাতকার নিতে এসে একজন জানতে চাইলেন তিনি এখন কিছু করছেন কি না (টারমিনেটরের কথা)। জবাবে তিনি বলেন, "ওহ, এক ছাইপাশ মুভি করছি বটে, দুই সপ্তাহে সব কাজ শেষ।"[২২] রোবটের চরিত্রে অভিনয় করাটা একধরনের নতুন চরিত্র হবে ভেবেই অনুমান করেন তিনি, সেজন্য আগ্রহটা ছিলো সামান্য হলেও। তাছাড়া এক নিচু বাজেটের চলচ্চিত্রে অভিনয় করার ফলে লসে পড়ে গেলেও খুব একটা ক্ষতির কিছু ছিলো না। তার ক্যারিয়ারে এর কোন নেতিবাচক ছাপ পড়তো না। শোয়ার্জনেগার বলেন, ক্যামেরন যে ফাটাফাটি লেভেলের একজন ডিরেক্টর (স্পিলবার্গ, হিচকক অথবা কোপলার মতো দক্ষ) সেটা বুঝে উঠতেই তার প্রচুর সময় লেগে গেছিলো। এই চরিত্রে অভিনয় করার জন্য বিভিন্ন অস্ত্র চালনা ও তাতে দক্ষ হয়ে ওঠার পেছনে শোয়ার্জনেগার টানা তিন মাস ট্রেনিং নেন। যখন ওসবে ব্যবহার তার জন্য আরামদায়ক হয়ে ওঠে, তখনই কাজটা শুরু করেছিলেন তিনি।[২১] পুরো চলচ্চিত্রে শোয়ার্জনেগার মাত্র ১৮টি লাইন উচ্চারণ করেন। ১০০ শব্দেরও কম কথা বলতে হয়েছে তাকে। ক্যামেরন বলেন, "কীভাবে জানি তাঁর বাচনভঙ্গিও [অস্ট্রিয়ান] কাজে লেগে গেল। দারুণ এক সংশ্লেশিত উচ্চারণ তাঁর, শুনে যে কেউ মনে করবে রোবটটা বানানোর সময় কণ্ঠটা নিয়ে ঠিকমতো কাজ করা হয়নি।

রিসের চরিত্রে অভিনয় করানোর জন্য বেশ কিছু অভিনেতার নাম এসেছিলো। তাঁদের মধ্যে রক মিউজিশিয়ান স্টিংগ একজন।[২৩] ক্যামেরন মাইকেল বিয়েনকে এই চরিত্রের জন্য বেছে নিলেন। বিয়েন অবশ্য পুরো কাহিনীটাই পছন্দ করতে পারলেন না। তাঁর মনে হচ্ছিলো অভিনয় করলে তাঁকে স্রেফ নির্বোধের মতো দেখাবে। তবে ক্যামেরনের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তিনি বলেন, "প্রজেক্টের ব্যাপারে তাঁর অনুভূতিই পাল্টে গেছিলো।"[২৩] হার্ড বলেন, "অডিশনের বাকি যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের সবাই বেশ শক্ত প্রকৃতির মানুষ। এদের দিয়ে এত দ্রুত মানবিক সম্পর্ক গড়ে তোলাটা (সারা আর কাইলের) অসম্ভব ছিলো। পরিচয়ের পর প্রেমের মধ্যবর্তী সময়টা খুবই অল্প ছিলো তাদের জন্য> অনেকেই এসেছিলেন, তবে তাদের মধ্যে কাওকে ঠিক যোগ্য মনে করা যায়নি। "[২৪]

স্ক্রিপ্টের প্রথম কয়েক পৃষ্ঠাতেই সারা কনরের চরিত্রটি লিখে রাখা হয়েছিলো। "১৯, ছোটখাটো আর মাঝারি দেহশৈলী। গ্রহণযোগ্যতার মধ্যে সুন্দরী, সে কোন পার্টিতে পা রাখলে সবাই থেমে গিয়ে তার দিকে তাকাবে না। তবে তার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার চেষ্টাটা সবার মধ্যে থাকবে। তার দুর্বল বৈশিষ্ট্যগুলো ভেতরের এক কাঠিন্যকে আড়াল করে রাখে। তার ওই অংশটার ব্যপারে এমনকি সে নিজে পর্যন্ত ওয়াকিবহাল নয়। "[২৫] এই চরিত্রের জন্য ক্যামেরন লিন্ডা হ্যামিলটনকে নির্বাচন করেন। কেবলই চিলড্রেন অফ দ্য কর্ন ছবিতে কাজ শেষ করেছেন তখন এই অভিনেত্রী।[২৬] রোজানা আর্কুয়েট Rosanna Arquette had previously auditioned. Cameron found a role for Lance Henriksen as Detective Hal Vukovich, as Henriksen had been essential to finding finances for the film.[২৭] For the special effects shots in the film, Cameron wanted Dick Smith who had previously worked on The Godfather and ট্যাক্সি ড্রাইভার. Smith did not take Cameron's offer and suggested his friend Stan Winston for the job.[২৮]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Petley, Julian (১৯৮৫)। "The Terminator"। Monthly Film BulletinBritish Film Institute52 (612): 54–55। আইএসএসএন 0027-0407p.c—Cinema '84. A Pacific Western production. For Orion. 
  2. "The Terminator"British Board of Film Classification। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ৩, ২০১৪ 
  3. "The Terminator"American Film Institute। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ১৪, ২০১৫ 
  4. "The Terminator (1984)"Box Office Mojo। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ৩, ২০১৪ 
  5. Keegan, 2009. p. 34
  6. Lambie, Ryan.
  7. Keegan, 2009. p. 35
  8. French, 1996. p. 15
  9. French, 1996. p. 20
  10. Keegan, 2009. p. 36
  11. Keegan, 2009. p. 110
  12. Keegan, 2009. p. 111
  13. Keegan, 2009. p. 37
  14. Keegan, 2009. p.36
  15. Keegan, 2009. p. 38
  16. Keegan, 2009. p. 39
  17. French, 1996. p. 6
  18. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; OV-Hurd নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  19. Keegan, 2009. p. 40
  20. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; OV-Cameron নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  21. Keegan, 2009. p. 41
  22. Andrews, 2003. pp. 120–121
  23. Keegan, 2009. p. 42
  24. Keegan, 2009. p. 43
  25. Keegan, 2009. p. 44
  26. Keegan, 2009. p. 45
  27. Keegan, 2009. p. 46
  28. Keegan, 2009. p. 50

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]