বিষয়বস্তুতে চলুন

আল মাকরিজি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আল মাকরিজি

তাকি উদ্দীন আবুল আব্বাস আহমাদ ইবনে আলি বিন আব্দুল কাদির ইবনে মুহাম্মদ আল মাকরিজি
تقى الدين أحمد بن على بن عبد القادر بن محمد المقريزى
আল মাকরিজির নামের আরবি ক্যালিগ্রাফি
জন্ম১৩৬৪ (1364)
কায়রো, মিশর
মৃত্যু১৪৪২ (বয়স ৭৭–৭৮)
পেশাইতিহাসবিদ, জীবনীকার, লেখক
ভাষাআরবি
জাতীয়তাআরব
নাগরিকত্বমামলুক মিশর
সময়কাল১৩৭০–১৪৪২ খ্রি.
ধরনমিশরীয় ইতিহাস
বিষয়ইতিহাস
সাহিত্য আন্দোলনজাহিরি

তাকি উদ্দীন আবুল আব্বাস আহমাদ ইবনে আলি বিন আব্দুল কাদির ইবনে মুহাম্মদ আল মাকরিজি ( আরবি: تقي الدين أحمد بن علي بن عبد القادر بن محمد المقريزي ; ১৩৬৪–১৪৪২)[] ছিলেন একজন মধ্যযুগীয় মিশরীয় ইতিহাসবিদ এবং জীবনীকার, যিনি ইতিহাসে নিজের নিসবাহ আল মাকরিজি ( আরবি: المقريزي ) হিসেবে অধিক পরিচিত। তিনি মামলুক যুগে মিশরীয় নাগরিক ছিলেন এবং পূর্ববর্তী ফাতিমীয় খিলাফতপ্রাচীন মিশরীয় ইতিহাসের প্রতি অধিক মনোযোগী ও আগ্রহী ছিলেন এবং এই দুটি বিষয়ে লেখালেখির জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত।[] আল মাকরিজি প্রাক আধুনিক মিশরের সবচেয়ে প্রভাবশালী ইতিহাসবিদ হিসেবে স্বীকৃত।[] মিশর সম্পর্কে তিনি প্রায় দুইশোর অধিক রচনা রেখে গিয়েছেন।

জীবনী

[সম্পাদনা]

প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে খালদুনের সরাসরি ছাত্র আল মাকরিজি মিশরের কায়রোতে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি নিজের জীবনের বেশিরভাগ সময় মিশরে কাটিয়েছেন।[] তিনি নিজের রচনায় তার বংশ পুরুষানুক্রম উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে, তিনি সাধারণত তার দশম পূর্বপুরুষ পর্যন্ত গিয়ে থেমে যান। যদিও তিনি নিজের কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কাছে স্বীকার করেন, তিনি তার পূর্বপুরুষ আল মুইজ লিদিনিল্লাহ পর্যন্ত বংশানুক্রম খুঁজে পেয়েছেন। তিনি ছিলেন প্রথম মিশরীয় ফাতেমীয় খলিফা এবং আল কাহিরাহর (কায়রো) প্রতিষ্ঠাতা। এমনকি তিনি নিজের বংশানুক্রম সাহাবি আলী ইবনে আবি তালিব পর্যন্তও নিয়ে যান বলে বর্ণিত আছে।[] তিনি হানাফী মাযহাবে প্রশিক্ষিত ছিলেন; তবে পরবর্তী কালে তিনি শাফিয়ি মাজহাব এবং অবশেষে জাহিরা মাজহাব গ্রহণ করেন।[][] আল মাকরিজি জাহিরি বিদ্রোহের পিছনে প্রাথমিক নেতাদের মধ্যে একজনের অধীনে ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়ন করেছিলেন[] এবং মামলুক সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সেই বিদ্রোহের সাথে তার সোচ্চার সমর্থন এবং সহানুভূতি প্রদর্শন করার কারণেই তাকে মামলুক শাসনামলে উচ্চ প্রশাসনিক এবং করণিক পদে পর্যুদস্ত হতে হয়েছিল।[] আল মাকরিজি নামটি বালবেক শহরের এক চতুর্থাংশ বুঝানোর জন্য একটি বিশেষণ ছিল, যেখান থেকে তার পিতামহ দাদা-দাদিরা বসবাস করতেন।[] আল মাকরিজি সমসাময়িকদের কাছে স্বীকার করেছেন যে, তিনি বিশ্বাস করতেন যে, তিনি আল-মুইজের পুত্রের মাধ্যমে ফাতেমিদের সাথে সম্পর্কিত ছিলেন। ইবনে হাজার তার সবচে' স্মরণীয় বিবরণ সংরক্ষণ করেছেন: তার পিতাসহ যখন তারা একদিন আল-হাকিম মসজিদে প্রবেশ করেছিলেন, তখন তাকে বলেছিলেন "আমার ছেলে, তুমি তোমার পূর্বপুরুষের মসজিদে প্রবেশ করছো"। যাইহোক, তার বাবা আল-মাকরিজিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তিনি বিশ্বাস করতে পারেন না, এমন কাউকে এ তথ্য প্রকাশ করবেন না; ওয়াকার উপসংহারে রয়েছে:

শেষ পর্যন্ত এই উপসংহারে আসা কঠিন হবে যে, আল মাকরিজি ফাতেমিদের প্রতি একটি প্রাচীন আগ্রহের চেয়ে বেশি কিছু কল্পনা করেছিলেন। তার প্রধান উদ্বেগ সম্ভবত বর্তমানের জন্য তাদের এবং তাদের শহরের অর্থ হতে পারে, অর্থাৎ মামলুক মিশর এবং ইসলামে এর ভূমিকার জন্য। (পৃ. ১৬৭)

১৩৮৫ সালে তিনি ইসলামি তীর্থযাত্রা হজ্জে যান। কিছু সময়ের জন্যে তিনি একটি সরকারি অফিসে একজন সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং ১৩৯৯ সালে তিনি কায়রো এবং উত্তর মিশরীয় বাজারের পরিদর্শক হন। তবে এই পদটি তিনি অতিশীঘ্রই আমর ইবনুল আস মসজিদে একজন দাঈ ও ঐতিহ্যের প্রভাষক হওয়ার জন্য ছেড়ে দেন। ১৪০৮ সালে, তিনি কালানিসরিয়ার পরিদর্শক এবং প্রভাষক হওয়ার জন্য দামেস্কে যান। পরে তিনি কায়রোতে ফিরে আসেন এবং ব্যক্তিগত জীবনে অবসর গ্রহণ করেন।

১৪৩০ সালে তিনি আবার তার পরিবারের সাথে হজ্জে যান এবং প্রায় ৫ বছর ভ্রমণ করতে থাকেন। নিজের সঠিক পর্যবেক্ষণ এবং ইনসাফপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তার সফরে তার শিক্ষা দুর্দান্ত ছিল। তবে তার বইগুলি মূলত সংকলিত এবং তিনি সব সময় যে উৎসগুলির উপর নির্ভর করতেন তা কখনো স্বীকার করতেন না।

রচনাবলী

[সম্পাদনা]

আল মাকরিজির বেশিরভাগ কাজ মিশর সম্পর্কিত এবং তার ২০০ এর অধিক রচনা রয়েছে।[১০]

  • আল-মাওয়াইয় ওয়া-আল-ইতিবার বি-জিকর আল-খিতাত ওয়া-আল-আসার ( والمواعظ والاعتبار بذكر الخطط والآثار) : এটি আরবি ভাষায় রচিত ২ খণ্ডের একটি গ্রন্থ, যা বুলাকে ১৮৫৩ সালে প্রকাশিত হয়। বইটির ফরাসি নাগরিক উর্বাইন বোরিয়েন্ট কর্তৃক "Description topographique et historique de l'Égypte ( Paris, 1895–1900; compare A. R. Guest, "A List of Writers, Books and other Authorities mentioned by El Maqrizi in his Khitat,in Journal of the Royal Asiatic Society, 1902, pp. 103–125) নামে একটি ফরাসি অনুবাদ প্রকাশিত হয়।
  • ইত্তিয়াজ আল-হুনাফা' বি-আখবার আল-আইম্মাহ আল-ফাতিমিয়ীন আল-খুলাফা ( اتعاظ الحنفاء بأخبار الأئمة الفاطميين الخلفاء) :[১১] বইটি ফাতিমীয় শাসকদের সম্পর্কে লিখিত।
  • السلوك لمعرفة دول الملوك
  • إغاثة الأمة بكشف الغمة
  • تاريخ الاقتباط
  • البيان والإعراب عما بأرض مصر من الأعراب، الذي يعد حجة في موضوع استيطان القبائل من العرب والأمازيغ بمصر، من دخول عمرو بن العاص وحتى حياة المقريزي
  • التنازع والتخاصم في ما بين بني أمية وبني هاشم
  • تاريخ الحبش
  • (شذور العقود في ذكر النقود) رسالة.
  • تجريد التوحيد المفيد، الذي ناقش فيه عقيدة توحيد الألوهية، وأبطل فيه شركيات العبادة، كصرف الدعاء والرجاء والتوسل لغير الله سبحانه وتعالى.
  • نحل عبر النحل
  • إمتاع الأسماع بما للرسول من الأبناء والأموال والحفدة والمتاع ، تسعة مجلدات، طبع الأول منه [بتحقيق محمود محمد شاكر، ثم طُبع كاملا]
  • (منتخب التذكرة) تاريخ
  • (تاريخ بناء الكعبة - خ) بخطه، في الظاهرية
  • اتعاظ الحنفاء بأخبار الأئمة الفاطميين الخلفاء
  • رسالة في (الأوزان والأكيال)
  • (الخبر عن البشر) تاريخ عام كبير
  • عقد جواهر الأسفاط في ملوك مصر والفسطاط
  • درر العقود الفريدة في تراجم الأعيان المفيدة
  • الإلمام بأخبار من بأرض الحبشة من ملوك الإسلام
  • الطرفة الغريبة في أخبار حضرموت العجيبة
  • (مختصر الكامل، لعبد الله بن عدي)، بخطه سنة ٧٩٥ في ملا مراد باستنبول، الرقم ٥٦٩ (كما في مذكرات الميمني - خ) [طُبع]
  • (شارع النجاة) في أصول الديانات واختلاف البشر فيها
  • الإعلام بمن ملك أرض الحبشة في الإسلام
  • المقفى الكبير,[১২][১৩][১৪]

অন্য কাজ, যা ভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত

[সম্পাদনা]

রচনাবলী সম্পর্কে

[সম্পাদনা]

কিতাবুল জাহাব আল মাসবুক ফি জিকর মান হাজ্জা মিনাল খুলাফা ওয়াল মুলুক:

[সম্পাদনা]

আল-মাকরিজি নিজের মৃত্যুর চার বছর আগে হিজরি ৮৪১ সালের জ্বিলকদ মাসে হজ্জ পালনকারী খলিফারাজাদের স্মরণে তাঁর গ্রন্থ, الذهب المسبوك في ذكر من حج من الخلفاء والملوك লিখেছিলেন এবং তিনি এটিকে হজ্জের একটি অধ্যায় দিয়ে শুরু করেছিলেন, যাকে বিদায়ী হজ বা নবি মুহাম্মদের সা. শেষ হজ বলা হয়। কারণ এটি ছিল তাঁর শেষ হজ্জ।

বিদায় হজ্জের বর্ণনার পর মাকরিজি হজ পালনকারী খলিফা ও রাজাদের সংখ্যা উল্লেখ করেন। তার বইয়ে মোট তেরো জন খলিফার নাম রয়েছে, যাদের মধ্যে প্রথম হলেন আবু বকর আল সিদ্দিক এবং সর্বশেষ হলেন আল হাকিম বি আমরিল্লাহ আবুল আব্বাস আহমদ, যিনি মিশরে আব্বাসীয়দের দ্বিতীয় খলিফা ছিলেন। এরপর তিনি তেরো জন রাজার নাম উল্লেখ করেছেন, যাদের প্রথমজন হলেন আল-সুলাইহি আলী বিন মুহাম্মদ বিন আলী, যিনি ইয়েমেনের রাজা ছিলেন এবং ৪৫৫ হিজরিতে হজ করেছিলেন। তিনি মক্কারও রাজা ছিলেন এবং সেখানে তিনি ন্যায়বিচারের প্রসার, দানশীলতা বৃদ্ধি, দুর্নীতিবাজদের প্রতিরোধ ও সবাইকে নিরাপত্তা প্রদান করেছিলেন। তিনি কাবা শরীফ একটি সাদা চাদর দিয়ে ঢেকে দেন। রাজাদের মধ্যে সবশেষ যিনি হজ্জ করেন, তিনি হলেন বাদশাহ আশ্রাফ শাবান বিন হুসাইন বিন মুহাম্মদ বিন কালাউন। তিনি হিজরি ৭৬৪ সালের শাবান মাসে রাজত্ব গ্রহণ করেন।

খলিফাদের হজ সম্পর্কে–যেমন মাকরিজি বলেছেন–তাদের মধ্যে প্রথম ছিলেন আবু বকর সিদ্দিক। তিনি ১২ হিজরিতে তাঁর খিলাফতের সময় মানুষের সাথে হজ্জ করেছিলেন এবং উসমান ইবনে আফফানকে মদিনায় তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন। এরপর ওমর ইবন আল-খাত্তাব। তিনি তার সাড়ে দশ বছরের খেলাফতে শুধুমাত্র প্রথম বছর ব্যতীত তিনি সবগুলোতে হজ করেছিলেন। তিনি নিজেই হজ্জের আমির হতেন। তারপর উসমান, তার বারো বছরের খেলাফতে প্রথম ও শেষ বছর ব্যতীত প্রতি বছর হজ করেছিলেন। এরপর খলিফা আলী বিন আবি তালিব তার খেলাফতের সময় হজ করতে পারেননি। কারণ তিনি তখন উট ও সিফফিনের যুদ্ধে ব্যস্ত ছিলেন।

তার গ্রন্থে আল-মাকরিজি অনেক খলিফা, রাজকুমার এবং রাজার কথা বলেন, যারা হজের বাধ্যবাধকতার জন্য মক্কায় ভ্রমণ করেছিলেন। যেমন: মুয়াবিয়া বিন আবি সুফিয়ান কয়েক বছর ধরে মানুষের সাথে হজ করেছিলেন এবং আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়েরও সবার সাথে হজ করেছিলেন। আল ওয়ালিদ বিন আবদুল-মালিক উনানব্বই সালে হজ করেছিলেন এবং পরের দিন যখন তিনি শহরে মসজিদে আসেন, তখন তিনি কাবার ভবনের দিকে তাকালেন এবং সেখান থেকে লোকদের বের করে নিয়ে যান। সেখানে সাইদ ইবনুল মুসায়্যিব ছাড়া আর কেউই ছিল না। রক্ষীদের কেউই তাকে বের করে নিয়ে যাওয়ার সাহস করেনি। আল-ওয়ালিদ শহরের গভর্নর ওমর বিন আব্দুল-আজিজের সাথে মিলিত হলে তিনি তার কাছে এসে অভ্যর্থনা জানালেন এবং তাকে তার বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন এবং তারপর তিনি চলে গেলেন। হিশাম বিন আবদুল মালিক ১০৬ হিজরিতে হজ করেন।

ইগাসাতুল উম্মাহ বি কাশফ আল গম্মা:

[সম্পাদনা]

বইটিতে তিনি মিশরের দুর্ভিক্ষের ইতিহাস এবং এগুলোর কারণ বর্ণনা করেছেন। আল মাকরিজি তার বই إغاثة الأمة بكشف الغمة বা মিশরের দুর্ভিক্ষের ইতিহাসে মিশর যে অর্থনৈতিক সংকট ও দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হয়েছিল সেই সম্পর্কে কথা বলতে চেয়েছিলেন। তখন মিশরীয় জনগণ এবং দেশের অধিকাংশ নাগরিকই যে ধরণের প্রতিকূলতা এবং ট্র্যাজেডির মুখোমুখি হয়েছিলেন, তা চিত্রিত করার জন্য তিনি বইটি লেখেন, যখন শাসকরা সেগুলি সম্পর্কে অবগত ছিল না।

আল-মাকরিজি এই ট্র্যাজেডি ও দুর্ভিক্ষের কারণগুলি চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং সেগুলি এড়িয়ে চলতে এবং পুমরায় সেগুলিতে না পড়ার জন্যে একে একে সবই বর্ণনা করেছিলেন। তিনি মিশরের পীড়িত অনেক দুর্ভিক্ষের কথা বর্ণনা করেছেন; তাদের রূপ ও কারণ ব্যাখ্যা করেছেন এবং এই দুর্ভিক্ষের দায়ভার সে শাসকদের উপর চাপিয়েছেনচ যারা জনগণের স্বার্থের প্রতি অমনোযোগী ছিল এবং যারা নিজেরা আনন্দ ও অসারতায় নিমজ্জিত ছিল। গ্রন্থে তিনি ২৬টি দুর্ভিক্ষের কথা উল্লেখ করেছেন।

আল মাকরিজি ব্যাখ্যা করেন যে, মিশরের জনগণের জন্য দুর্ভাগ্য এবং ক্লেশ এতটাই বড় হয়ে গিয়েছিল যে, লোকেরা মনে করেছিল যে, অতীতে এসব ক্লেশের মত কিছু ছিল না। আল মাকরিজি এসবের জন্যে নেতা ও শাসকদের দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও পরিস্থিতির দিকে নজর দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের অবহেলাকে দায়ী করেন। তাঁর মতে, বর্তমান মিশরীয় জনগণের স্বার্থ এবং এই সংকট যেভাবে চলছে তা অতীতে কখনো মিশর দেখেনি।

এখানে আল মাকরিজি অতীতে মিশর যে সঙ্কট, ক্লেশ এবং দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়ে গিয়েছিল, তা উল্লেখ করার চেষ্টা করেছেন। তিনি জোর দেন যে, সৃষ্টির শুরু থেকে এ মহাবিশ্ব ও সমস্ত দেশে ধারাবাহিকভাবে প্রতিকূলতা এবং সংকট ঘটেছে। তিনি নিজের বইয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন যে, আদম থেকে বর্তমান পর্যন্ত দুর্ভিক্ষের পরিপ্রেক্ষিতে মিশর ও মিশরীয় মানুষের কী হয়েছি।" তিনি ইতিহাসে ফিরে যান এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি স্পষ্ট করা এবং উল্লেখ করার চেষ্টা করেন। যুগে যুগে মিশরের মানুষের সাথে যে দুর্ভাগ্য ঘটেছিল, তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন যে, মিশরে প্রথম উচ্চ মূল্যের ঘটনা ঘটেছিল বন্যার আগে মিশরের সপ্তদশ রাজার শাসনামলে। তার নাম ইফ্রোস বিন মানাবিশ, যার সময়ে নূহের বন্যা হয়েছিল ( ইবনে হারজিব বিন শালহুবের কথা অনুসারে)। উচ্চ মূল্যের কারণ ছিল উচ্চ বৃষ্টিপাত ও নীল নদের পানির অভাব।

সুজুরুল উকুদ ফি জিকর আন নুকুদ:

আল মাকরিজি কেবল সোনারূপার মুদ্রামান নিয়ে গ্রন্থটি (شذور العقود في ذكر النقود ) রচনা করেছিলেন। আল মাকরিজি এ গ্রন্থটিতে অর্থের কথা উল্লেখ করে বলেছেন:

যে অর্থ বিক্রয়ের মূল্য এবং ব্যবসার মূল্য গঠন করবে, তা হলো সোনা এবং রূপা। প্রাচীন কালে বা আধুনিক সময়ে কোন জাতি বা জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে নেওয়া কোন সত্য বা মিথ্যা প্রতিবেদনে এ কথা জানা যায় না যে, এগুলি ব্যতীত অন্য কোন বস্তু অর্থ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে যেহেতু বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এমন কিছু ক্ষুদ্র জিনিস ছিল, যা এক দিরহাম অথবা এর কিছু অংশের বিনিময়েও বিক্রি করা সম্ভবপর ছিল না। এই কারণে প্রাচীন যুগে এবং আধুনিক যুগের লোকেদের সোনা ও রূপার সাথে সাথে অন্য কিছুরও প্রয়োজন ছিল। সেই সমস্ত ক্ষুদ্র জিনিস ক্রয় বিক্রয়ে বিনিময় হিসেবে যেই নতুন একটি অর্থ তৈরি করা হয়েছিল, তার সৃষ্টির খবর থেকে যা জানা যায় যে, এটির কখনও নামকরণ করা হয়নি এবং এটিকে কখনই দুটি মুদ্রার (সোনারূপা) একটির মর্যাদায় রাখা হয়নি; বরং এটি সর্বদাই পৃথক অর্থ ছিল। মানব সম্প্রদায়ের ইতিহাসে মিশর, লেভান্ট, আরব ইরাকি, পারস্য এবং রোমান পারস্যের সময়ের শুরুতে এবং এর শেষের দিকে এই অঞ্চলের রাজারা তৃতীয় সেই অর্থের বিকল্প হিসেবে তামা ব্যবহার করত, যেখান তারা ক্রয়বিক্রয়ের জন্যে অর্থ নামে তার ছোট ছোট টুকরো তৈরি করত এবং এটি খুবই কম ব্যবহৃত হয়েছিল। তবে তামার তৈরি এই তৃতীয় মুদ্রাটি কখনো এই অঞ্চলগুলিতে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার বিকল্প হিসেবে কাজ করেনি।

তাকি উদ্দীন মাকরিজি অর্থনৈতিক সমস্যায় আগ্রহী ছিলেন এবং কিছু আর্থিক ঘটনা সম্পর্কে আমাদের ধারণা দিয়েছেন। যেমন: তার উল্লিখিত বইটিতে তিনি দুর্ভিক্ষের ঘটনাগুলি বর্ণনা করেছেন বা সংকট হিসাবে প্রকাশ করা যেতে পারে, এমন বিষয়গুলিও আলেচনা করেছেন। তিনি দুর্ভিক্ষের সময় তামার টাকা প্রচলিত হওয়ার ফলে মূল্যবান ধাতব মুদ্রার (স্বর্ণ এবং রৌপ্য) অভাবের কথাও উল্লেখ করেছিলেন; কারণ দাম বৃদ্ধির ফলে স্বর্ণরৌপ্যসহ টাকার ক্রয়মূল্য হ্রাস পায়।

রচনার বৈশিষ্ট্যাবলী

  1. আখ্যান ও উপস্থাপনায় বস্তুনিষ্ঠতা এবং ঐতিহাসিক সততা।
  2. বস্তুনিষ্ঠতার সাথে উচ্চ নৈতিকতা এবং অন্যদের হেয় করা থেকে বিরত থাকা।
  3. নিরীক্ষা, তদন্ত, দলিল এবং যুক্তি।
  4. সূক্ষ্ম বিবরণগুলিতে যাওয়া; যেমন নীল নদের অবস্থা, দৈনন্দিন জীবন, দুর্নীতি, ঘুষ, উচ্চ মূল্য ও বাজার সম্পর্কিত আর্থিক বর্ণনা।
  5. আলোচিত বিষয়ের ওপর মনোযোগ স্থির রাখা এবং এর ফলে বিভ্রান্তি মূল বিষয় থেকে বিচ্যুত না হওয়া।
  6. শাসকদের প্রতি নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এবং তাদের তোষামোদ না করা বা তাদের কাছে না যাওয়া।

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Anthony Holmes (৬ ডিসেম্বর ২০১০)। Ancient Egypt In An Hour। History In An Hour। পৃষ্ঠা 11। আইএসবিএন 978-1-4523-3674-9 
  2. Paul E. Walker, Exploring an Islamic Empire: Fatimid History and its Sources (London, I.B. Tauris, 2002), p. 164. The material for updating this article is taken from Walker's account of al-Maqrizi.
  3. Rabbat, Nasser (২০২৩-০১-১২)। Writing Egypt: Al-Maqrizi and His Historical Project (ইংরেজি ভাষায়)। Edinburgh University Press। আইএসবিএন 978-1-3995-0281-8 
  4. Rosenthal, F. (১৯৯১)। "al-Maḳrīzī"অর্থের বিনিময়ে সদস্যতা প্রয়োজনBosworth, C. E.; van Donzel, E. & Pellat, Ch.The Encyclopaedia of Islam, New Edition, Volume VI: Mahk–Mid। Leiden: E. J. Brill। পৃষ্ঠা 193–194। আইএসবিএন 90-04-08112-7 
  5. RABBAT, NASSER (২০০৩)। "Who Was al-Maqr|z|? A Biographical Sketch" (পিডিএফ)। The Middle East Documentation Center (MEDOC)। ডিওআই:10.6082/M1RR1WDR 
  6. Ibn Hajar al-Asqalani, Inba al-Ghumar bi-Anba al-'Umr.
  7. Nasser Rabbat, "Who was al-Maqrizi?" pg. 13. Taken from Mamlūk Studies Review, Vol. 7, Part 2. Middle East Documentation Center, University of Chicago, 2003.
  8. al-Maqrizi, Tajrid al-Tawhid al-Mufid, pg. 33 of the introduction of Sabri bin Salamah Shahin. Riyadh: Dar al-Qubs, 2005. আইএসবিএন ৯৭৮-৯৯৬০-৪৯-২০২-৫
  9. Rabbat, pg. 15.
  10. Okasha El Daly (2005), Egyptology: the missing millennium : ancient Egypt in medieval Arabic writings, UCL, p. 180
  11. Maqrīzī (al-), Taqī al-Dīn Aḥmad ibn 'Alī (১৯৪৮)। Itti'āz al-Ḥunafā' bi-Akhbār al-A'immah al-Fāṭimīyīn al-Khulafā' (আরবি ভাষায়)। Dār al-Fikr al-‘Arabī। 
  12. Maqrīzī (al-), Taqī al-Dīn Aḥmad ibn 'Alī (১৯০৮)। Kitāb al-Khiṭaṭ al-Maqrīzīyah (আরবি ভাষায়)। Al-Nīl Press। 
  13. Maqrīzī (al-), Taqī al-Dīn Aḥmad ibn 'Alī (১৯৫৬)। Kitāb al-Sulūk li-Ma'rifat Duwal al-Mulūk (আরবি ভাষায়)। Lajnat al-Ta’līf। 
  14. Maqrz, Amad ibn Al; Quatremère, Étienne Marc (১১ নভেম্বর ১৮৪৫)। "Histoire des sultans mamlouks, de l'Égypte, écrite en arabe"। Paris : Oriental Translation Fund of Great Britain and Ireland – Internet Archive-এর মাধ্যমে।