আরেসিবো বার্তা
আরেসিবো বার্তা মানব সভ্যতা ও পৃথিবী গ্রহের উপর মৌলিক কিছু তথ্য বহনকারী একটি আন্তঃনাক্ষত্রিক বেতার বার্তা যা পৃথিবী থেকে ১৯৭৪ সালে গোলকাকৃতি নক্ষত্রস্তবক এম১৩-কে লক্ষ্য করে প্রেরণ করা হয়। পৃথিবীবহির্ভূত কোনও বুদ্ধিমান সত্তার কাছে এই বার্তাটি হয়ত পৌঁছাতে পারে এবং সেটি এর ভেতরের বিষয়বস্তু অনুধাবন করতে পারে, সেই আশায় বার্তাটি পাঠানো হয়। ১৯৭৪ সালের ১৬ই নভেম্বর তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর নিয়ন্ত্রণাধীন ক্যারিবীয় দ্বীপ পুয়ের্তো রিকোর আরেসিবো মানমন্দিরের বেতার নভোদূরবীক্ষণ যন্ত্রের পুনঃনকশাকরণ প্রক্রিয়াটি উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত একটি আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে এই বার্তাটিকে নিয়ন্ত্রিত কম্পাঙ্কের বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে একবারের জন্য মহাশূন্যে সম্প্রচার করা হয়।[১][২] অনুষ্ঠানের অবস্থান ও আয়োজনের সময়ের সাপেক্ষে মহাকাশে একটি বৃহৎ ও নিকটস্থিত নক্ষত্রের গুচ্ছ ছিল এম১৩ স্তবকটি, তাই পৃথিবী থেকে প্রায় ২৫ হাজার আলোকবর্ষ দূরত্বে অবস্থিত এই নক্ষত্রস্তবকটিকে লক্ষ্য করেই বার্তাটি প্রেরণ করা হয়।[৩] এই বার্তাটির আকার ছিল প্রায় ২১০ বাইট; এতে ১৬৭৯টি দ্বিমিক বা বাইনারি অঙ্ক তথা বিট ছিল। বার্তাটিকে ২৩৮০ মেগাহার্টজ কম্পাঙ্কে সম্প্রচার করা হয়। ১০ হার্জ ব্যবধান ব্যবহার করে বার্তাটিকে পরিবর্তনশীল বা মডুলেট করা হয়। বার্তার শক্তিক্ষমতা ছিল ৪৫০ কিলোওয়াট। বার্তার ০ এবং ১-গুলিকে কম্পাঙ্কের ওঠানামার মাধ্যমে সেকেন্ডে ১০ বিট হারে সব মিলিয়ে ৩ মিনিটের কিছু কম সময়ে সম্প্রচার করা হয়।
১৬৭৯টি বিট বা বাইনারি অঙ্ক প্রেরণের কারণ হল এটি একটি অর্ধমৌলিক সংখ্যা, অর্থাৎ দুইটি মৌলিক সংখ্যা ২৩ ও ৭৩-এর গুণফল। বার্তাটির বিটগুলিকে আয়তাকারে ৭৩টি সারি ও ২৩টি স্তম্ভে সজ্জিত করে এটির অর্থ অনুধাবন করা সম্ভব। এভাবে সাজালে পাশের চিত্রটি পাওয়া যায়।[৪][৫]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডক্টর ফ্র্যাংক ড্রেক বার্তাটি তৈরি করেন। এ ব্যাপারে তিনি বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল সাগান ও অন্যান্যদের সহায়তা নেন। বার্তাটিতে সাতটি অংশ আছে। উপর থেকে নিচে এগুলি হল
- ১ থেকে ১০ পর্যন্ত সংখ্যা
- হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ফসফরাস ও কার্বন নামক মৌলিক পদার্থগুলির পারমাণবিক সংখ্যা, যে মৌলগুলি দিয়ে মানবকোষের ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিয়িক অ্যাসিড) অণুগুলি গঠিত।
- ডিএনএ-র নিউক্লিওটাইডগুলিতে অবস্থিত শর্করা ও ক্ষারসমূহের রাসায়নিক সংকেত।
- ডিএনএ-তে নিউক্লিওটাইডের সংখ্যা এবং ডিএনএ-র দ্বৈত পেঁচানো সর্পিলাকৃতির কাঠামো।
- একজন মানুষের চিত্র, গড় মানবের উচ্চতা এবং পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা (তৎকালীন)।
- সৌরজগৎের একটি নকশা, যাতে কোন্ গ্রহ থেকে বার্তাটি আসছে, তা নির্দেশ করা আছে।
- আরেসিবো নভোদূরবীক্ষণ যন্ত্রের একটি নকশা, এবং এর ব্যাস।
বার্তাটি পৃথিবীবহিঃস্থ বুদ্ধিমান সত্তার সাথে প্রকৃত সংযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়নি, কেননা উদ্দীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে এর ২৫ হাজার বছর লেগে যাবে এবং বার্তাটির উত্তর আসতেও ন্যূনতম আরও ২৫ হাজার বছর লাগবে। তাই বার্তাটিকে বরং ২০শ শতকের শেষার্ধে মানবজাতির প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের একটি নিদর্শন হিসেবেই গণ্য করা হয়।[১]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "Cornell News: It's the 25th anniversary of Earth's first (and only) attempt to phone E.T."। নভে ১২, ১৯৯৯। ২০০৮-০৮-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৩-২৯।
- ↑ Johnson, Steven (২৮ জুন ২০১৭)। "Greetings, E.T. (Please Don't Murder Us.)"। The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুন ২০১৭।
- ↑ Larry Klaes (২০০৫-১১-৩০)। "Making Contact"। Ithaca Times। ২০০৯-০১-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৭-২৭।
- ↑ Walker, John। "Self-Decoding Messages - The Arecibo Message"। bibliotecapleyades.net। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ Cassiday, George। "The Arecibo Message"। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টো ২০১৩।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]