বিষয়বস্তুতে চলুন

আদা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আদা একটি উদ্ভিদের পরিবর্তিত কাণ্ড যা মানুষের মসলা এবং ভেষজ ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।[] মশলা জাতীয় ফসলের মধ্যে আদা অন্যতম। আদা খাদ্যশিল্পে, পানীয় তৈরীতে, আচার, ঔষধ ও সুগন্ধি তৈরীতে ব্যবহার করা হয়। আদা সেই প্রথম মশলা গুলির মধ্যে একটি যা এশিয়া থেকে ইউরোপে রপ্তানি করা হয়েছিল। যা মূলত মশলার বাণিজ্যের মাধ্যমে পৌঁছেছিল। প্রাচীন গ্রীস এবং রোমানরা এটি ব্যবহার করত। আদা খেলে ঠাণ্ডা সেরে যায়।[]

বৈশিষ্ট্য

[সম্পাদনা]

আদা গাছ বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর কাণ্ড মাটির নিচে থাকে। খাদ্য সঞ্চয়ের ফলে কাণ্ড মোটা হয়ে গ্রন্থির আকার ধারণ করে। একে গ্রন্থিকাণ্ড বলে। মাটির নিচে রসালো গ্রন্থি কাণ্ড সমান্তরাল ভাবে অবস্থান করে। এতে সুস্পষ্ট পর্ব ও পর্বমধ্য দেখা যায়। কাণ্ড থেকে অস্থানিক মূল বেরিয়ে মাটিতে থাকে। মাটির উপরে পাতা দেখা যায়। আদা গাছের ভূ-নিম্নস্থ পরিবর্তিত কাণ্ড বা গ্রন্থিকাণ্ড মশলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়।[]

বিবরণ

[সম্পাদনা]

আদা ছোট রাইজোম জাতীয় বীরুৎ। এদের রাইজোম সুগন্ধী ও ঝাঁঝালো স্বাদযুক্ত। এর ভিতরের রং ফিকে হলুদ। গাছটি ২ থেকে ৩ ফুট উচু হতে দেখা যায়। এর পাতাগুলি সুন্দর ভাবে সাজানো থাকে।

ঔষধি ব্যবহার

[সম্পাদনা]

এটি ভেষজ ঔষধ। মুখের রুচি বাড়াতে ও বদহজম রোধে আদা শুকিয়ে চিবিয়ে খাওয়া হয়। অধিকন্ত সর্দি, কাশি, আমাশয়, জন্ডিস, পেট ফাঁপায় আদা চিবিয়ে বা রস করে খাওয়া হয়। [] আদা আপনার গোপন সমস্যা দূর করবে আবার আদা একটি মহা ঔষধি।বাড়াবে[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা ঠিকমতো বজায় রাখতে আদা সাহায্য করে।

বিস্তৃতি

[সম্পাদনা]

অর্থকরী ফসলের চেয়ে আদা চাষ করা লাভজনক। বাংলাদেশের টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড় ও পার্বত্য জেলাগুলোতে ব্যাপকভাবে আদা চাষ হয়ে থাকে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অনেক জায়গায় আদার চাষ হয়।

চাষাবাদ

[সম্পাদনা]

উপযুক্ত জমি ও মাটি - জল নিকাশের সুব্যবস্থা আছে এমন উঁচু বেলে-দো-আঁশ মাটি ষআদা চাষের জন্য উপযোগী।

বীজ রোপণ-ফাল্গুন থেকে বৈশাখ মাস(এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মে মাস) পর্যন্ত লাগানো যায়। সাধারণত ১২-১৫ গ্রাম ওজনের ১-২ টা অংকুর বিশিষ্ট কন্দ লাগানো হয়। ৪০-৪৫ সে.মি. দূরে দূরে সারি করে ২০ সে.মি. দূরে ৫ সে.মি. গভীরে আদা লাগানো হয়। কন্দ লাগানো পর ভেলী করে দিতে হয়। প্রতি হেক্টরে ১০০০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।

ফসল সংগ্রহ -আদা লাগানোর ৯-১০ মাস পর উঠানোর উপযোগী হয়।[] গাছের প্রায় সব পাতা শুকিয়ে গেলে আদা তোলা হয়। ফলন প্রতি হেক্টরে ১২-১৩ টন। সাধারণত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে আদা উত্তোলন করা হয়।

পুষ্টি গুণ

[সম্পাদনা]

আদায় প্রোটিন ২·৩%, শ্বেতসার ১২·৩% , আঁশ ২·৪% , খনিজ পদার্থ, ১·২% জল ৮০·৮% ইত্যাদি উপাদান বিদ্যমান।

গুণাগুণ

[সম্পাদনা]
  • জ্বর, ঠাণ্ডা লাগা, ব্যথায় আদা উপকারী।
  • অতিরিক্ত ওজন কমাতে আদা সাহায্য করে।
  • বসন্ত রোগে এর রস উপকারী।
  • আদার রস শরীর শীতল করে।
  • হৃৎপিণ্ডের জন্য উপকারী। এক টুকরো আদা চিবিয়ে তার রস নিয়মিত খেলে হৃদপিণ্ড ভালো থাকে। হৃদরোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
  • কাশি এবং হাঁপানির জন্য আদার রসের সাথে মধু মিশিয়ে সেবন করলে বেশ উপশম হয়।

চিত্রশালা

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Ginger"NCCIH (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৬-০৫-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-৩১ 
  2. "Zingiber officinale Roscoe | Plants of the World Online | Kew Science"Plants of the World Online। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-৩১ 
  3. বই উদ্ধৃতি= জীবন বিজ্ঞান| লেখক=তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী| শিরোনাম=আদা | প্রকাশক=সর্বভারতীয় শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী কংগ্রেস, পশ্চিমবঙ্গ শাখা| বছর=১৯৮৩ | পাতা=৯১,৯২
  4. http://www.bdtoday.net/newsdetail/detail/43/10676
  5. কৃষি তথ্য সার্ভিস www.ais.gov.bd