অবসরভাতা
অবসরভাতা বা পেনশন (বাংলা: Pension) অর্থ এমন একটি তহবিল যেখানে কোনও কর্মীর চাকরিতে নিযুক্ত থাকাকালীন সময়ে কিছু সংখ্যক অর্থ আলাদা করে যোগ করা হয় এবং যেগুলি থেকে পর্যায়ক্রমিক আকারে ব্যক্তির অবসর গ্রহণের পরে সহায়তা প্রদানের জন্য অর্থগুলি প্রদান করা হয়। [১]
সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অবসরভাতা
[সম্পাদনা]অনেক দেশ ও অঞ্চল তাদের অবসর গ্রহণের সময় (বা কোনক্ষেত্রে অক্ষম হয়ে গেলে) আয়ের জন্য তাদের নাগরিক এবং বাসিন্দাদের জন্য তহবিল তৈরি করেছে। সাধারণত এসব সুবিধা ভোগের জন্য নাগরিকের কর্মজীবন জুড়ে অর্থ প্রদানের প্রয়োজন পরে।[১] উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যের জাতীয় বীমা বা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক সুরক্ষা নাগরিকের অবসর সময়ে তাদের দ্বারা গচ্ছিত অর্থের সাথে সামঞ্জস্য রেখে অবসরভাতা প্রদান করে থাকে। ৮০ টিরও বেশি দেশে সামাজিক অবসরভাতা রয়েছে।[১]
বাংলাদেশ
[সম্পাদনা]৩০শে মার্চ, ২০২২ এ বাংলাদেশ সরকার খসড়া সার্বজনীন পেনশন আইন প্রণয়ন করে, যা সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আলোচনার মাধ্যমে তৈরি হয়। এতে বাংলাদেশের সকল বেসরকারি ও প্রবাসী ব্যক্তির জন্য পেনশনের ব্যবস্থা থাকবে। প্রাথমিকভাবে এটি স্বেচ্ছা কার্যক্রম হলেও, পরবর্তীতে তা বাধ্যতামূলক হতে পারে।[২]
অক্ষম পেনশন
[সম্পাদনা]অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য কিছু পেনশন প্রদান করা হয়। সাধারণ অবসর সময়ের পূর্বে তাদের জন্য অবসর ও অবসর ভাতার ব্যবস্থা করা হয়। অবসর গ্রহণের পরিকল্পনাগুলি কীভাবে অবসর সুবিধাগুলি নির্ধারণ করা হয় তার ভিত্তিতে সংজ্ঞায়িত ও শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে।[৩]
নির্ধারিত সুবিধা পরিকল্পনা
[সম্পাদনা]নির্ধারিত সুবিধা পরিকল্পনা একটি ঐতিহ্যবাহী সংজ্ঞায়িত পরিকল্পনা যাতে অবসর নেওয়ার সুবিধাটি বিনিয়োগের রিটার্নের উপর নির্ভর না করে কিছু সূত্র দ্বারা নির্ধারিত হয় যাতে করে সদস্যগন প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক সুরক্ষা হিসাবে সরকারী অবসরভাতা এক ধরনের সংজ্ঞায়িত সুবিধা সম্পন্ন অবসর পরিকল্পনা। এসব সুবিধা দেয়ার জন্য সরকারের আলাদা একটি হিসাব থাকে যা দেখাশোনার জন্য সরকারের আলাদা একটি শাখা কাজ করে। সংজ্ঞায়িত সুবিধা সম্পন্ন পরিকল্পনার একটি ঐতিহ্যবাহী রূপ হল চূড়ান্ত বেতন পরিকল্পনা, যার অধীনে প্রদেয় পেনশনটি বছরের বহু বছরের কাজের সমান, অবসর গ্রহণের সময় সদস্যের বেতনের দ্বারা বহুগুণে বৃদ্ধিযোগ্য হার হিসাবে পরিচিত একটি গুণকের দ্বারা গুণিত হয়। চূড়ান্ত অর্জিত অর্থ একটি মাসিক পেনশন বা একক পরিমাণ হিসাবে পাওয়া যায় তবে সাধারণত মাসিক হিসেবে বেশি প্রদান করা হয়।[৪]
তহবিল
[সম্পাদনা]অবসরভাতা পরিকল্পনা তহবিল সাধারণত অর্থায়িত বা অনূদিত দুই প্রকারের হতে পারে। অপ্রত্যাশিত সংজ্ঞায়িত অবসরভাতা কোনও সম্পদ আলাদা করা হয় না এবং সেই সুযোগগুলি নিয়োগকর্তা বা অন্যান্য অবসর বিধিমোতাবেক প্রদান করা হয়। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশগুলিতে রাজ্য কর্তৃক প্রদত্ত পেনশনের ব্যবস্থাগুলি অনুপলব্ধ, বর্তমান শ্রমিকদের অবদান এবং করের মাধ্যমে সরাসরি অবসর সুবিধা প্রদান করা হয়।[৫] অনেক ইউরোপীয় দেশের সামাজিক সুরক্ষা বা অবসরভাতা সুবিধা ব্যবস্থা অপ্রত্যাশিত,[৪] বর্তমান ট্যাক্স এবং সামাজিক সুরক্ষা অবদানের বাইরে সরাসরি অবসর সুবিধা প্রাপ্তির সুযোগও রয়েছে, যদিও বেশ কয়েকটি দেশে সংকর ব্যবস্থা রয়েছে যা আংশিকভাবে ব্যক্তিগত অর্থায়নে অর্থায়িত হয়।[৪]
বিতর্ক
[সম্পাদনা]বাংলাদেশে অবসরভাতা সংক্রান্ত দীর্ঘসূত্রিতা পরিলক্ষিত হয় দীর্ঘদিন থেকেই, বিশেষ করে বেসরকারি বিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে।[৬][৭] বাংলাদেশ অবসর ও কল্যাণ সুবিধা বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী, এমপিওভুক্ত (বেতন বাবদ মাসে সরকারি অনুদান) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসরের পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ সুবিধা — এ দুই ধরনের সুবিধা পান। এ নিয়ম অনুযায়ী বয়স ৬০ বছর পার হলে অথবা চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হলে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসর গ্রহণ করেন। তবে কেউ মৃত্যুবরণ করলে তাঁর পরিবার ঐ নির্ধারিত পরিমাণে টাকা পায়। কমপক্ষে ১০ বছর পূর্ণ করে স্বেচ্ছায় অবসরে গেলেও জমাকৃত টাকা সুদসহ পাওয়া যায়।[৮] এ অবসরভাতার একটি অংশ ৪ শতাংশ হারে কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের বেতন থেকে কেটে রাখা হয়, সেই পরিমাণের ভিত্তিতে সরকার অপর অংশ প্রদান করে ভাতা দিয়ে থাকে। তবে এ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের অভাবে অবসরভাতা সময়মত না পাওয়া নিয়ে অভিযোগ বর্তমান।[৭]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ "Country map"। pension-watch.net।
- ↑ https://www.thedailystar.net/bangla/অর্থনীতি/সার্বজনীন-পেনশন-আইনের-খসড়া-প্রকাশ-১২-এপ্রিল-পর্যন্ত-মতামত-দেওয়ার-সুযোগ-331556
- ↑ "Private Pensions/Les pensions privées" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-১৭।
- ↑ ক খ গ Philip Coggan (৭ এপ্রিল ২০১১)। "Falling Short"। দ্য ইকোনোমিস্ট। সংগ্রহের তারিখ ৫ এপ্রিল ২০২০।
- ↑ "Unfunded Pension Plans"। OECD Glossary of Statistical Terms। ১০ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০০৯।
- ↑ "অবসরভাতার যাতাকলে পিষ্ট এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা"। জাগোনিউজ২৪.কম। ২৯ জানুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৫ এপ্রিল ২০২০।
- ↑ ক খ নুর মোহাম্মদ (১৪ ডিসেম্বর ২০১৯)। "অবসরভাতার জন্য শিক্ষকদের কান্না"। যায়যায়দিন। সংগ্রহের তারিখ ৫ এপ্রিল ২০২০।
- ↑ "অবসরভাতার জন্য শিক্ষকদের কান্না"। প্রথম আলো। ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ৫ এপ্রিল ২০২০। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য)