বিষয়বস্তুতে চলুন

বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ দেব

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

এটি এই পাতার বর্তমান সংস্করণ, যা কুউ পুলক (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৭:১১, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে সম্পাদিত হয়েছিল (ক্যাট-এ-লট: বিষয়শ্রেণী:খুন হওয়া রাজশাসক সরিয়ে বিষয়শ্রেণী:গুপ্তহত্যার শিকার রাজশাসক যোগ করা হয়েছে)। উপস্থিত ঠিকানাটি (ইউআরএল) এই সংস্করণের একটি স্থায়ী লিঙ্ক।

(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
वीरेन्द्र वीर विक्रम शाह
বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ দেব
নেপালের রাজা
রাজত্ব৩১ জানুয়ারি, ১৯৭২ –
১ জুন, ২০০১
পূর্বসূরিমহেন্দ্র
উত্তরসূরিদীপেন্দ্র
জন্ম(১৯৪৫-১২-২৮)২৮ ডিসেম্বর ১৯৪৫
কাঠমুন্ডু, নেপাল
মৃত্যু১ জুন ২০০১(2001-06-01) (বয়স ৫৫)
কাঠমুন্ডু, নেপাল
দাম্পত্যসঙ্গীঐশ্বরিয়া রাজ্য লক্ষ্মী দেবী শাহ
বংশধরদীপেন্দ্র
প্রিন্সেস শ্রুতি
প্রিন্স নিরাজন
রাজবংশশাহ
পিতামহেন্দ্র
মাতাইন্দ্র রাজ্য লক্ষ্মী
ধর্মহিন্দু

বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ দেব (নেপালি: वीरेन्द्र वीर विक्रम शाह; জন্ম: ২৮ ডিসেম্বর, ১৯৪৫ - মৃত্যু: ১ জুন, ২০০১) নেপালের প্রথিতযশা রাজা ছিলেন। ১৯৭২ সালে তার পিতা ও তৎকালীন রাজা মহেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ দেবের মৃত্যুজনিত কারণে শাহ রাজপরিবারের ১০ম রাজা হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। তারপর থেকে ২০০১ সালের নেপালের রাজপরিবারে গণহত্যার পূর্ব পর্যন্ত ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। তিনি গণতান্ত্রিক মনোভাবের পরিচয় দিয়ে নেপালে বহুদলীয় পদ্ধতিতে সরকার পরিচালনা ব্যবস্থার রূপকার ছিলেন। আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে ও আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে সুপরিচিত রাজা ছিলেন তিনি। ১৯৮০ সালে তিনি ব্রিটিশ ফিল্ড মার্শাল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।

প্রারম্ভিক জীবন

[সম্পাদনা]

যুবরাজ ও পরবর্তীকালে ১৯৫৫ সালে অভিষিক্ত রাজা মহেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ দেব ও রাণী ইন্দ্র রাজ্য লক্ষ্মী’র জ্যেষ্ঠ সন্তান যুবরাজ বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ দেব কাঠমুন্ডুর নারায়ণহিতি রাজপ্রাসাদে জন্মগ্রহণ করেন।[] নেপাল রাজতন্ত্রের ইতিহাসে তিনিই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাগ্রহণ করেন। ভারতের দার্জিলিংয়ে অবস্থিত খ্রিস্টানদের স্কুল সেন্ট যোসেফ কলেজে আট বছর অধ্যয়ন করেন। তারপর ১৯৫৯ সালে রাজা বীরেন্দ্র ইংল্যান্ডের এটন কলেজে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে যান। সেখানে পড়াশোনা শেষে ১৯৬৪ সালে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৬৭ সালে অল্প কিছুদিন টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৬৭-৬৮ মেয়াদকালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক তত্ত্ব বিষয়ে অধ্যয়ন করেন।[]

৩১ জানুয়ারি, ১৯৭২ তারিখে পিতা মহেন্দ্রের মৃত্যু-পূর্ব পর্যন্ত তিনি কানাডা, লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকাসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন। তিনি চিত্রকর্ম সংগ্রাহক হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং নেপালী হস্তশিল্পী ও চিত্রকরদের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন। এছাড়াও হেলিকপ্টার চালনা বিদ্যা রপ্ত করেন তিনি।[]

২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭০ তারিখে বিখ্যাত রানা পরিবারের কন্যা ঐশ্বরিয়া রাজ্য লক্ষ্মী দেবী রানাকে বিবাহ করেন।[] ঐ সময়কালে হিন্দু নিয়ম-নীতি অনুযায়ী সর্বাপেক্ষা ব্যয়বহুল বিবাহ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে ব্যয় হয়েছিল $৯.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার[] তাদের সংসারে তিন সন্তান ছিল।

শাসন ব্যবস্থা

[সম্পাদনা]

১৩ মার্চ, ১৯৫৫ তারিখে তার দাদা রাজা ত্রিভুবন মারা যান। ফলে তার বাবা মহেন্দ্র নেপালের সিংহাসনে উত্তরাধিকারী হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর ৩১ জানুয়ারি, ১৯৭২ সালে রাজা মহেন্দ্রের মৃত্যুজনিত কারণে ২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৫ তারিখে তার রাজ্যাভিষেক ঘটে। রাজা মহেন্দ্র কর্তৃক ১৯৬০ সালে নির্বাচিত সংসদের বিলুপ্তি ও ১৯৬২ সালের সংবিধান মোতাবেক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার পর স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পর রাজা বীরেন্দ্রও পূর্বেকার সনাতনী ধারা অব্যাহত রাখেন এবং স্থানীয় ও আঞ্চলিক সংস্থা হিসেবে পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় দেশ পরিচালনা করেন।[] তার মতে, গরীব এবং অনুন্নত দেশ হিসেবে নেপালে গণতান্ত্রিক ধারা প্রযোজ্য নয় এবং সংস্থা ও সিদ্ধান্তমূলক সরকার ব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে।[] তারপরও তিনি বিশ্বের স্বল্প কয়েকজন রাজাদের মধ্যে অন্যতম একজনরূপে পরিণত হন।

রাজা হিসেবে তিনি অক্টোবর, ১৯৭৩ সালে প্রথমবারের মতো ভারত সফর করেন। এর দুইমাস পর চীন গমন করেন। তখন প্রবল এশীয় শক্তিধর এ দু’টি দেশের মধ্যে বিপরীতমুখী অবস্থান বিরাজ করছিল এবং উভয় দেশের সঙ্গেই চমকপ্রদ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সচেষ্ট ছিলেন রাজা বীরেন্দ্র।[]

পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় সরকার পরিচালনায় বিরুদ্ধাচরণ করায় বহুসংখ্যক নেপালি কংগ্রেস পার্টির নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেন।[] এর অন্যতম প্রধান কারণ ছিল দলবিহীন বনাম বহুদলীয় পার্টির পদ্ধতিতে জনমত যাচাইয়ের লক্ষ্যে গণভোটের আয়োজন করা। মে, ১৯৮০ সালে অনুষ্ঠিত এ গণভোটে দলীয় পদ্ধতিবিহীন অবস্থায় দেশ পরিচালনার পক্ষে ৫৫% জনগণের রায় প্রতিফলিত হয়।[] ১৯৮০-এর দশকে রাজনৈতিক দলগুলো দেশকে অস্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে যায় এবং ছাত্রদের সংগঠনগুলো নেপালের সংবিধান পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।[]

তিনি নেপালের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ভারত, চীন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের ব্যাপক চাপ থেকে মুক্ত রাখতে সমর্থ হন। তার শাসনামলে নেপালের পর্যটন শিল্প বেশ বিকশিত হয়। ১৯৯০ এর দশকের শুরুতে গণতন্ত্রের দাবীতে আন্দোলন চাঙ্গা হয়ে উঠলেও সৈনিক এবং পুলিশের রক্তাক্ত সংঘর্ষে তা প্রশমিত হয়। তারপরও অনেকগুলো হরতাল, দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ ক্রমবর্ধমান চাপ ও দাবী আসতে থাকে। ফলে, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সংবিধান সংশোধন কমিশন গঠন করেন এবং রাজনৈতিক পূণর্গঠনের জন্য সচেষ্ট হন। কমিশন প্রস্তাবিত সংবিধানের খসড়া ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৯০ তারিখে উপস্থাপন করে। এরফলে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন ও বহুদলীয় গণতন্ত্রভিত্তিক নতুন সংবিধানে তাকে নেপালের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সাংবিধানিকভাবে রাজা হিসেবে পরিচিতি ঘটানো হয়। অবশেষে খসড়া সংবিধানটি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কে.পি. ভট্টরাই ও তার সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয় ৯ নভেম্বর, ১৯৯০ তারিখে।[] এছাড়াও, তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র, ক্ষমতার পৃথকায়ণ এবং মানবাধিকার সমুন্নত রাখার প্রয়াস চালান।

তারপরও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কোন্দল, অগণিত সামাজিক সমস্যায় নিপতিত হয়ে মাওবাদী বিদ্রোহী নেপালি কমিউনিস্ট পার্টি ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে গৃহযুদ্ধের সৃষ্টি হয় যা ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চলমান ছিল।

দেহাবসান

[সম্পাদনা]

নেপালের স্থিতাবস্থা আরও সঙ্কটাপন্ন হয় যখন ১ জুন, ২০০১ তারিখে রাজা বীরেন্দ্র নৈশভোজনরত অবস্থায় আকস্মিকভাবে তার সন্তান যুবরাজ দীপেন্দ্র কর্তৃক গণহত্যায় রূপান্তরিত হয়। দীপেন্দ্রের গুলিতে রাজা বীরেন্দ্র ঘটনাস্থলেই মারা যান। তাদের সাথে রাণী ঐশ্বরিয়া, প্রিন্স নিরাজন, প্রিন্সেস শ্রুতি এবং রাজপরিবারের আরও পাঁচজন সদস্য নিহত হন। এ আক্রমণের পর ভবিষ্যতের রাজা দীপেন্দ্রও আত্মহত্যাকল্পে গুলিবিদ্ধ হন।[][১০] গুরুতরভাবে আহত হবার তিনদিন পর মৃত্যুবরণ করেন। শুধুমাত্র বীরেন্দ্রের ভাই জ্ঞানেন্দ্র ছাড়া রাজপরিবারের সকলেই মৃত্যুবরণ করেন। ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, দীপেন্দ্র নেশাসক্ত ছিলেন এবং ভবিষ্যতের বঁধুকে তার পরিবার কোনক্রমেই মেনে নিতে পারছিলেন না। রাজা বীরেন্দ্রের ভাই রাজা জ্ঞানেন্দ্র পরবর্তীকালে উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি কেশব প্রসাদ উপাধ্যায় ও প্রতিনিধি সভার স্পিকার তারানাথ রানাভাট-কে নিয়ে গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি[১১] নিশ্চিত করেছেন যে, দীপেন্দ্রই ছিলেন একমাত্র বন্দুকধারী। বিস্তারিত তদন্ত কার্য সম্পন্ন করা যায়নি কেননা গণহত্যার স্থান ত্রিভুবন সদন রাজা জ্ঞানেন্দ্রের শাসনামলে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।[১২]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "King Birendra of Nepal"। Daily Telegraph। ২০০১-০৮-২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-২১ 
  2. "Birendra: Nepal's monarch of change"। BBC। ২০০১-০৬-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-২১ 
  3. Crossette, Barbara (২০০১-০৬-০৩)। "Birendra, 55, Ruler of Nepal's Hindu Kingdom"। New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-২১ 
  4. Mainali, Pramod (২০০০)। Milestones of History। পৃষ্ঠা 111। আইএসবিএন 99946-960-4-1 
  5. "Marriage of Convenience"Time Magazine। ১৯৭০-০৩-০৯। ২০০৯-০২-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-২১ 
  6. Tully, Mark (২০০২-০৪-২৩)। "The late King Birendra of Nepal"। CNN। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-২১ 
  7. Malhotra, Inder (২০০১-০৬-০৪)। "King Birendra of Nepal"। The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-২১ 
  8. "The Constitution of 1990"। Country Studies। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-২১ 
  9. "Rahul Bedi; Alex Spillius (8 June 2001). "Massacre witness blames Crown Prince". The Daily Telegraph. Retrieved 28 May 2008."। ৬ নভেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০২১ 
  10. "Nepal survivors blame prince". BBC News. 7 June 2001. Retrieved 31 May 2009.
  11. "Nepal massacre inquiry begins, at long last"। ১১ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০১৩ 
  12. "Prince blamed for Nepal massacre"। BBC News। ২০০১-০৬-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০২-০৬ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]
রাজত্বকাল শিরোনাম
পূর্বসূরী
মহেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ দেব
নেপালের যুবরাজ
১৯৫৫-১৯৭২
উত্তরসূরী
দীপেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ দেব
নেপালের রাজা
১৯৭২-২০০১