বিষয়বস্তুতে চলুন

সাঁচী

স্থানাঙ্ক: ২৩°২৮′৪৬″ উত্তর ৭৭°৪৪′২৩″ পূর্ব / ২৩.৪৭৯৪১০° উত্তর ৭৭.৭৩৯৬১৬° পূর্ব / 23.479410; 77.739616
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সাঁচীর বৌদ্ধ স্মারকসমূহ
ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান
সাঁচী স্তুপ
মানদণ্ডসাংস্কৃতিক: (i)(ii)(iii)(iv)(vi)
সূত্র৫২৪
তালিকাভুক্তকরণ১৯৮৯ (ত্রয়োদশ সভা)

বৌদ্ধ বিহার ও অন্যান্য বৌদ্ধ স্মারকস্থলের জন্য বিখ্যাত সাঁচী (হিন্দি: सॅाची) ভারতের মধ্য প্রদেশ রাজ্যের রায়সেন জেলার সাঁচী শহরে অবস্থিত।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

মৌর্য্য যুগ

[সম্পাদনা]
অশোক স্তম্ভ

সাঁচীর স্তূপ মৌর্য্য সম্রাট অশোক দ্বারা খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় অব্দে নির্মিত হওয়ায় এটি ভারতের পাথর নির্মিত প্রাচীনতম স্থাপত্য হিসেবে গণ্য হয়।[] অশোকের স্ত্রী দেবী এই স্তূপ নির্মাণের দেখাশোনা করেন। গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের ওপর অর্ধগোলকাকারে এই স্তূপ নির্মিত হয়েছে। স্তূপের ওপরে একটি ছত্র এবং খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে স্তূপের চারপাশে সুন্দর ভাবে অলঙ্কৃত তোরণ নির্মাণ করা হয়। স্তূপের নিকটে বেলেপাথর দ্বারা নির্মিত অশোক স্তম্ভ রয়েছে। এই স্তম্ভে ব্রাহ্মীশঙ্খ লিপিতে খোদাই করা রয়েছে।

শুঙ্গ যুগ

[সম্পাদনা]

অশোকবদন অনুসারে, খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে পুষ্যমিত্র শুঙ্গের রাজনৈতিক উত্থানের সময় স্তূপটির অনেকাংশ বিনষ্ট করা হয়। পুষ্যমিত্র শুঙ্গের পুত্র অগ্নিমিত্র স্তূপটির পুনর্নিমাণ করেন।[] পরবর্তীকালে পাথর দিয়ে স্তূপটির আয়তন দ্বিগুণ করা হয়। স্তূপের উপরিভাগকে চ্যাপটা করে তিনটি ছত্র স্থাপন করা হয়।

পুনরুদ্ধার

[সম্পাদনা]

১৮২২-এ ভোপাল দরবারে প্রথম নবাব বেগম কুদসিয়া বেগম-এর আমলে ব্রিটিশ পলিটিক্যাল এজেন্ট হার্বার্ট ম্যাডক আর তার সহকারী ক্যাপ্টেন জনসন বড় স্তূপটি খুঁড়ে ফেলেন লুকনো ধনরত্নের খোঁজে। তারা কী পেয়েছিলেন জানা যায় না, কিন্তু এতে প্রায় ভেঙেই পড়ে সেটি। ওঁরা ক্ষতি করেন দ্বিতীয় স্তূপটিরও। এর পর ১৮৫১ সালে নবাব বেগম শাহজাহান বেগম এর আমলে আলেকজ়ান্ডার কানিংহাম ও মেইজ়ি তিনটি স্তূপই আবার খোঁড়েন। তাতে দেহাস্থি উদ্ধারের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটলেও ক্ষতি হল প্রচুর, যা মেরামত করতে ষাট বছর পর মার্শালের কালঘাম ছুটে গিয়েছিল। তার জন্য মার্শাল ওঁদের সমালোচনাও কম করেননি। কিন্তু মার্শাল আবার গোড়াতেই অন্য এক সমস্যা তৈরি করেছিলেন। ১৯০৫-এই তিনি বলে বসেন, মুসলিম চৌকিদাররা বৌদ্ধ পুরাকীর্তির রক্ষণাবেক্ষণে সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত। এ জন্য ধর্মপ্রাণ মানুষ চাই, মহাবোধি সোসাইটির মাধ্যমে বৌদ্ধ চৌকিদার জোগাড় করা যেতে পারে। ইতিমধ্যেই মহাবোধি মন্দিরে হিন্দু মহন্তদের অধিকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন অনাগারিক ধর্মপাল। সেখানে মার্শালের এই মন্তব্য সরাসরি ভোপাল স্টেটের মুসলিম নবাব পরিবারের বিরুদ্ধে যায়, এবং নবাব বেগম সুলতান জাহান স্বভাবতই এ মন্তব্য ভাল ভাবে নেননি। পরে অবশ্য সেই নবাবই সাঁচি পুনরুদ্ধারে মার্শালকে বিপুল আর্থিক সাহায্য দিচ্ছেন (বিপিন ঘোষালের লেখায় পাওয়া যায়, সংস্কারের কাজে মোট খরচ হয় ১৫ হাজার পাউন্ড আর সাঁচি নিয়ে বই ছাপতে নবাব দেন ২৫ হাজার টাকা)। এ টাকা না পাওয়া গেলে সরকারি উদ্যোগে এত বড় কাজটি হত কিনা সন্দেহ। এক দিকে নবাব পরিবারের ঘনিষ্ঠ, অন্য দিকে মার্শালের শিষ্য বিপিনবিহারীর ভূমিকা ছিল নবাবের এই মনোভাব পরিবর্তনের পিছনে । তবে বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত সাঁচির পুনর্জীবন প্রাপ্তির ইতিহাসে জন মার্শালের সঙ্গে বিপিনবিহারী ঘোষালও যে অন্তত একটু উল্লেখের দাবি করতে পারেন তাতে সন্দেহ নেই।

১৯১৩ সালে জন হুবার্ট মার্শাল ছিলেন ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল । সাঁচির প্রত্নক্ষেত্রর পিছনে মার্শালের ভূমিকাই সব থেকে বেশি। নিঃসন্দেহে মার্শালই সাঁচির গৌরব পুনরুদ্ধার করেন। মাটির উপর দাঁড়িয়ে থাকা স্তূপ মন্দির ছাড়াও আশপাশের এলাকায় উৎখনন চালিয়ে খুঁজে বার করা যাবতীয় স্থাপত্যের সংস্কার, এবং ভাস্কর্যগুলি সংরক্ষণের জন্য আলাদা সংগ্রহশালা গড়ে তোলা, সবই সম্পন্ন হয় তার সময়।

ভোপালের শেষ নবাব বেগম সুলতান জাহান ১৯০৯ সালে তৈরি করেন কিং এডওয়ার্ড মিউজ়িয়াম, উদ্বোধন করেছিলেন বড়লাট মিন্টো। ১৯১৩-য় বাঙালি প্রত্নবিদ বিপিন ঘোষাল ছিলেন এই সংগ্রহশালার সুপারিন্টেন্ডেন্টের দায়িত্বে। সেই সঙ্গে তিনি হামিদিয়া লাইব্রেরির প্রধান গ্রন্থাগারিকও ছিলেন। নতুন সংগ্রহশালার ক্যাটালগ তৈরি করতে চাইছেন তিনি, তার জন্য মার্শালের পরামর্শ চাইছেন। শুধু তাই নয়, ভোপাল রাজ্যের প্রত্নতত্ত্ব নিয়েও একটা বই লেখার ইচ্ছে তার। মার্শাল যেমন তাকে সে সময় প্রকাশিত কয়েকটি ক্যাটালগ পড়ে নিতে বলছেন (আশ্বাস দিচ্ছেন নিজেই পাঠাবেন সে সব বই), তেমন দেখে আসতে বলছেন দেশের আর কয়েকটি সংগ্রহশালাও। ভোপালের প্রত্নতত্ত্বকে দৃঢ় ভিত্তির উপর স্থাপন করা, এডওয়ার্ড মিউজ়িয়ামের উন্নতি ইত্যাদির জন্য পরবর্তী একাধিক চিঠিতে বিপিনবাবুকে যথেষ্ট প্রশংসাও করেন মার্শাল।

মার্শালের ‘আ গাইড টু সাঁচি’ প্রকাশিত হয় ১৯১৮-য়, সাঁচি মিউজ়িয়াম তৈরি হয় ১৯১৯-এ, আর তার ক্যাটালগ ১৯২২-এ। মিউজ়িয়াম তৈরির পর তার দায়িত্ব বিপিন ঘোষালই পেয়েছিলেন । জন মার্শালের সঙ্গে বিপিন ঘোষালের একটি ফটোগ্রাফ রক্ষা পেয়েছে, সেটি সম্ভবত এই মিউজ়িয়ামেই তোলা। কারণ মার্শালের পিছনে যে বিশাল নাগ মূর্তিটি দেখা যাচ্ছে, তা আজও সাঁচি মিউজ়িয়ামের অন্যতম দ্রষ্টব্য। মার্শালের ১৯২২-এর চিঠিতে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে— ভোপাল স্টেটে সদ্য নিজস্ব প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ স্থাপিত হয়েছে, আর বিপিন ঘোষালকেই তার কর্তৃপদ (সুপারিন্টেন্ডেন্ট অব আর্কিয়োলজি) দেওয়া হয়েছে। নিজের পাণ্ডুলিপিতেও তিনি এই পদের কথা উল্লেখ করেছেন। সাঁচি বা ভোপালের পুরাকীর্তি নিয়ে জীবৎকালে তার কোনও বইও প্রকাশিত হয়নি। ১৯৩০ সালে, মাত্র পঞ্চান্ন বছর বয়সে প্রয়াত হন এই বাঙালি প্রত্নানুরাগী। তারও দশ বছর পর তিন খণ্ডে প্রকাশ পায় মার্শালের ‘ম্যাগনাম ওপাস’ ‘দ্য মনুমেন্টস অব সাঁচি’। []

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Buddhist Art Frontline Magazine May 13–26, 1989
  2. John Marshall, A Guide to Sanchi, p. 38. Calcutta: Superintendent, Government Printing (1918).
  3. "Sanchi with Bipin Bihari" 

আরো পড়ুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]