নেপালের রাজাদের তালিকা
নেপালের রাজারা শাহ রাজবংশের সদস্য ছিলেন যারা ১৭৪৩ সাল থেকে ২০০৮ সালে নেপালের বিলুপ্তি পর্যন্ত শাসন করেছিলেন। নেপালের রাজারা ১৭৪৩ থেকে ২০০৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন। অর্থাৎ শাহ রাজবংশের রাজা ছিলেন নেপাল রাজ্যের রাষ্ট্রপ্রধান। নেপালের রাজা শাহ রাজবংশেরও প্রধান ছিলেন এবং নেপালের প্রথম সাংবিধানিক পরিষদ ২০০৮ সালের ২৮ মে এর দিন ২৪০ বছরের দীর্ঘ শাহ রাজতন্ত্রের অবসান ঘটায়। নেপাল অধিরাজ্য ছিল যথাযথভাবে একটি পরম রাজতান্ত্রিক হিন্দু রাষ্ট্র। তবে ১৯৫১ সাল থেকে সাত বছরের বিপ্লব পর্যন্ত দেশটি জাহানিয়া রাণার শাসনের অধীনে ছিল। ১৯৯০ এর গণ আন্দোলনের পর দেশে নতুন সংবিধান প্রণীত হয় এবং দেশকে একটি সাংবিধানিক রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করা হয়।২০০৮ সালের ২৮ মে ১ম গণপরিষদে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করা হয় এবং ২০০৬ সালের গণতন্ত্র আন্দোলনের পরিণতিতে দেশটিকে একটি সংসদীয় প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়।
১৭৪৩ সালে পিতা নর ভূপাল শাহের মৃত্যুর পর পৃথ্বীনারায়ণ শাহ গোর্খা রাজ্যের সিংহাসনে আরোহণ করেন। ১৭৪৪ সালে নুয়াকোট আক্রমণের পর তিনি নেপাল প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমান দেশ নেপালের একত্রীকরণ প্রক্রিয়া শুরু করে। ৩১ বছরেরও বেশি সময় রাজত্ব করার পর শাহ ১১ জানুয়ারি ১৭৭৫ সালে মারা যান; তাঁর রাজত্বের শেষের দিকে তিনি নুয়াকোট, মকওয়ানপুর এবং কাঠমান্ডু উপত্যকা জয় করেছিলেন। পৃথ্বী নারায়ণের মৃত্যুর পর তার পুত্র প্রতাপ সিং শাহ রাজা নিযুক্ত হন। তিনি ১৭৭৭ সালে ২৬ বছর বয়সে অকাল মারা যান; একই দিনে, তাঁর ছোট ছেলে রণ বাহাদুর শাহ তাঁর মা রানী রাজেন্দ্র লক্ষ্মী শাহের সহযগে রাজ্যের সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং পরে তাঁর চাচা বাহাদুর শাহ রাজপ্রতিনিধি হিসাবে রাজা হয়েছিলেন। পরে রণ বাহাদুর সিংহাসন ত্যাগ করেন এবং তার বৈধ পুত্র গীর্বাণযুদ্ধ বিক্রম শাহ রাজা হন।
গীর্বাণের রাজত্বকালে ইংরেজ-নেপাল যুদ্ধ শুরু হয় এবং ১৮১৬ সালে সুগৌলির চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে শেষ হয়, যার ফলে নেপাল তার এক তৃতীয়াংশ অঞ্চল হারায়। গুটিবসন্তের রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৮১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাজা মারা যান। রাজেন্দ্র বিক্রম শাহ তিন বছর বয়সে তার সৎ-নানী রানী ললিত ত্রিপুরা সুন্দরী দেবী এবং প্রধানমন্ত্রী ভীমসেন থাপার রাজত্বের অধীনে তাঁর পিতার স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি কেবল রাজ্যলক্ষ্মী দেবীর পরামর্শে নেপালে শাসন করবেন এবং তাঁর সমস্ত ক্ষমতা তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিলেন, যা ১৮৪৬ সালে কোত গণহত্যার দিকে পরিচালিত করেছিল। গণহত্যার পর জঙ্গবাহাদুর রাণা ক্ষমতায় আরোহণ করেন এবং এই বংশ এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে দেশ শাসন করেন। পরের বছর রাজেন্দ্রকে জঙ্গবাহাদুর হনুমান ধোকায় বন্দী করেন এবং তার পুত্র সুরেন্দ্র বিক্রম শাহ সিংহাসনে আরোহণ করেন। তাঁর ক্ষমতা সীমিত ছিল৷ তিনি তাঁর বড় ছেলে ত্রৈলোক্যের তিন বছর পরে ১৮৮১ সালে মারা যান৷ সুরেন্দ্রর পৌত্র পৃথ্বী বীর বিক্রম শাহ রাজা হন, কিন্তু তাঁর পিতামহের মতো তাঁর অনেক ক্ষমতা ছিল না। ৩৬ বছর বয়সে পৃথ্বী অকাল মারা যান এবং তাঁর পাঁচ বছর বয়সী পুত্র ত্রিভুবন তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন৷
১৯৫০ সালে, ত্রিভুবন রাণাদের ক্ষমতা থেকে অপসারণের লক্ষ্যে একটি অভিযানে ভারতীয় দূতাবাসে নির্বাসনে চলে যান এবং এর মধ্য ত্রিভুবনের নাতি জ্ঞানেন্দ্রকে রাণা সরকার নেপালের নতুন রাজা মনোনীত করে। রাণাদের মধ্যে পারস্পরিক চুক্তির পরে ত্রিভুবন নেপালে ফিরে আসেন এবং রাণা শাসনের অবসান ঘটায় এবং ত্রিভুবন ১৯৫১ সালে আবার রাজা হন। ত্রিভুবনের মৃত্যুর পর ১৯৫৫ সালে মহেন্দ্র রাজা হন। ১৯৬০ সালে তিনি দলবিহীন রাজনৈতিক ব্যবস্থা পঞ্চায়েত শুরু করেন। একটি শিকারের ঘটনার সময় তিনি হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন এবং তাঁর পুত্র বীরেন্দ্র তাঁর পিতার মৃত্যুর দুই বছর পরে ১৯৭৫ সালে সিংহাসনে বসেন। ১৯৯০ সালে, নেপালে গণতন্ত্রপন্থী দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে দেশটি একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে পরিণত হয়। ২০০১ সালের ১ জুন, নেপালি রাজপরিবার রাজাসহ একটি গণ গুলিতে নিহত হয় এবং সরকার বীরেন্দ্রর পুত্র দীপেন্দ্রকে অপরাধী হিসাবে নামকরণ করে। দীপেন্দ্র নিজেকে গুলি করার পরে কোমায় চলে যান এবং কোমায় থাকা অবস্থায় তাকে রাজা ঘোষণা করা হয় এবং তিনি তীন দিন পর হাসপাতালে মারা যান। তাঁর চাচা জ্ঞানেন্দ্র আবার মুকুট পরানো হয় এবং তাঁর রাজত্বকালে নেপালি গৃহযুদ্ধের ক্রমবর্ধমান বিদ্রোহ দেখা যায়। ২০০৮ সালে, জ্ঞানেন্দ্র নেপালের রাজা হিসাবে পদত্যাগ করেন এবং দেশটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী নেপালে পরিণত হয়।