মঙ্গোলিয়ার সংস্কৃতি

এশিয়ার সংস্কৃতি

মঙ্গোলিয়ার সংস্কৃতি মোঙ্গলদের যাযাবর জীবনযাত্রার দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছে। এছাড়া চীন, তিব্বততিব্বতী বৌদ্ধধর্ম বেশ প্রভাব রেখেছে। এর বাইরে ২০ শতকের পর থেকে রাশিয়া এবং রাশিয়ার মাধ্যমে ইউরোপীয় সংস্কৃতিও প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।

ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ

সম্পাদনা

মোঙ্গলদের একদম প্রাচীন সাহিত্যকীর্তি থেকে শুরু করে এখনকার আধুনিক পপ গানে পর্যন্ত যা বারবার উঠে এসেছে তা হলো বাবা-মায়ের প্রতি ভালোবাসা এবং গৃহকাতরতা, নিজের মাতৃভূমির জন্যে এক তীব্র আকুতি। তালের দৈনন্দিন জীবনের মতো শিল্পসাহিত্যেও ঘোড়া সবসময়ই বড় ভূমিকা পালন করেছে। প্রাচীন বীরদের কিংবদন্তি মোঙ্গলরা আজো স্মরণ করে। এই স্তেপভূমিতে আতিথেয়তা এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে তা ঐতিহ্যগতভাবেই সেটা স্বীকৃত ধরে নেয়া হয়। মোঙ্গলদের অনেকের নামে বাটোর শব্দটি থাকে, এর অর্থ 'বীর'। তাদের রাজধানীর নামও উলানবাটোর (মঙ্গোলীয়: Улаанбаатар। মধ্যযুগে যেসব জাতি এ অঞ্চল দখল করেছে, শব্দটা তাদের ভাষাতেও ঢুকে পড়েছে, এবং এখন বুলগেরীয়, রুশ, পোলিশ, হাঙ্গেরীয়, ফারসি, উত্তর ভারতীয় ও জর্জীয় ভাষাতে শব্দটি বিদ্যমান। এছাড়া, তেমুল শব্দটি দিয়ে বোঝায় সৃজনশীলতা ও প্যাশন; বিভিন্ন মোঙ্গল শব্দের সাথে তেমুল যুক্ত হয়ে থাকে এবং তার অর্থ হয় হঠকারিভাবে অগ্রসরমান, সৃষ্টি সুখের উল্লাসে বা ভাবনায় তাড়িত হওয়া, আর হয়তো কল্পনার লাগাম ছেড়ে দেয়া। মোঙ্গলদের ভাষায় বললে, ছুটন্ত ঘোড়ার চোখের দৃষ্টি, যে ঘোড়া ছুটছে তার নিজের গন্তব্যে, আরোহীর কোনো পরোয়া না করেই।

 
মোঙ্গল গ্রামাঞ্চলে ইয়ুর্ত

গের (গোলাকার তাঁবু বা খিমা, তুর্কিতে বলে ইয়ুর্ত) মোঙ্গলদের জাতীয় পরিচয়ের একটি অংশ। সিক্রেট হিস্ট্রি অব দি মোঙ্গলস বইয়ে লেখা ছিল যে চেঙ্গিস খান সেসব মানুষদের নেতা যারা গের নামক পশমী তাঁবুতে বাস করে। এখনো মঙ্গোলিয়ার জনগণের একটি বড় অংশ গেরে থাকে, এমনকি রাজধানী উলানবাটোরেও। আর বাড়ি অর্থেও 'গের' শব্দটি ব্যবহৃত হয়।

প্রথা ও সংস্কার

সম্পাদনা
 
মোঙ্গল শিশু

ঐতিহ্যগতভাবেই মোঙ্গলরা সুলক্ষণ-কুলক্ষণে বিশ্বাসী এবং তারা দুর্ভাগ্যকে খুব ভয় পায়। তাদের বিশ্বাসে, খারাপ কিছু নিয়ে কথা বললে দুর্ভাগ্য হয়, হয় বহুকথিত কাউকে নিয়ে কথা বললেও। এছাড়া দুষ্ট ওঝারাও দুর্ভাগ্য পাঠাতে পারে, যদি কেউ ট্যাবু ভেঙে ফেলে, যেমন তাঁবুর দোরগোড়ায় (ঘরের চৌকাঠে) বসা, পাহাড় বা নদী অপবিত্র করা ইত্যাদি।

পরিবারের শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাই মাঝে মাঝে তাদেরকে বেনামী কিছু নাম দেয়া হয় - নেরগুই (নামহীন) বা এনেবিশ (এ নয়), অথবা ছেলেদেরকে মেয়েদের পোশাক পরিয়ে রাখা হয়।[] "স্তেপের মানুষজন জীবনে একটা নামই বহন করে, তাই নামটা হতে হয় অনেকদিক দিয়ে অর্থপূর্ণ বা প্রতীকি; সেই নাম মানুষটার চরিত্র, নিয়তি আর তার ভাগ্যকেও প্রকাশ করে।"[] রাতে বেরোবার সময় ছোটো ছেলেমেয়েদের কপালে কখনোবা কালো রঙ মেখে দেয়া হয়, চারকয়লা বা কালিঝুলি দিয়ে; যেন অশুভ আত্মারা ভাবে যে এটা একটা কালো-কপালী খরগোশ এবং তারা আর শিশুটার ওপর নজর না দেয়।

যাত্রাপথে কোনো উভুর (শিলাস্তম্ভ) পাশ দিয়ে যাবার সময় তারা সেটা ঘিরে কয়েক পাক দেয় এবং মিষ্টি বা এজাতীয় কিছু উৎসর্গ করে যেন যাত্রা শুভ হয়। উঁচু পর্বতের ওপরের উভুগুলোতে সাধারণত ভালো আবহাওয়ার চেয়ে বা দুর্ভাগ্য দূর করার প্রাথনা করে উৎসর্গ করা হয়।

কোনো মোঙ্গল শিশুর জীবনে প্রথম উৎসব করা হয় তার প্রথম চুল কাটার দিনে, সাধারণত ৩ থেকে ৫ বছর বয়সে। অতীতে জন্মদিন পালনের চল ছিল না, তবে এখন বার্থডে পার্টি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিয়ের সময় নবদম্পতিকে একটি নতুন গের (তাঁবু) উপহার দেওয়া হয়। মৃত আত্মীয়স্বজনের লাশ আগে উন্মুক্ত ফেলে রাখা হতো, পশুপাখি খেয়ে ফেলতো; এখন সাধারণত কবর দেয়া হয়।

 
উলানবাটোরে এক নাদাম উৎসব

মঙ্গোলিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গণউৎসব হলো নাদাম (ক্রীড়া)। প্রতিবছর জুলাইয়ের ১১-১৩ তারিখে উলানবাটোরে স বচেয়ে বড় নাদাম উৎসব আয়োজিত হয়, এছাড়া প্রাদেশিক বা জেলা স্তরেও ছোটো ছোটো আয়োজন করা হয়। নাদামে ঘোড়দৌড়, কুস্তি এবং তীরন্দাজী প্রভৃতি খেলা অন্তর্ভুক্ত থাকে।

পারিবারিকভাবে সবচেয়ে বড়ো উৎসব হলো 'সাগান সার' (সাদা মাস), যেটা অনেকটী চীনাদের নববর্ষ উদ্‌যাপনের মতো, জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে হয়ে থাকে। আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবেরা একে অন্যের বাড়িতে ঘুরতে যায়, উপহার দেয়া-নেয়া হয় - সব উৎসবের জনপ্রিয় উপ,আর হলো খাদাগ (একরকম রেশমী রুমাল) - আর হয় প্রচুর খাওয়াদাওয়া, বিশেষ করে বুজ (মাংসের পুরভরা পিঠার মতো ডাম্পলিং)।

সোভিয়ের রাশিয়ার প্রভাবে নববর্ষও এখন একটি বড় উৎসব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি এখানে পাশ্চাত্যের ক্রিসমাসের মতোই সাড়ম্বরে উদ্‌যাপন করা হয়।

আরো দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Slawoj Szynkiewicz, Geburt, Hochzeit, Tod - Der menschliche Lebenszyklus im Brauchtum der Mongolen, in Walther Heissig (editor), Die Mongolen (exhibition catalogue), Innsbruck 1989, p. 196ff
  2. Jack Weatherford, Genghis Khan and the making of the Modern World (New York: Three Rivers Press, 2004), p. 14.

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

টেমপ্লেট:Culture of Asia

টেমপ্লেট:Inner Mongolia topics