ফ্রগ কেক
ফ্রগ কেক হলো ব্যাঙের মাথার ন্যায় দেখতে একধরনের কেক; যা স্পঞ্জ কেক এবং ক্রিম দিয়ে তৈরি করা হয় এবং যা ফন্ডেন্ট (একপ্রকার সুস্বাদু আইসক্রিম যা কেক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়) দ্বারা আবৃত থাকে। ১৯২২ সালে বালফোরস ব্যাকারি এটি প্রথম তৈরি করে এবং পরবর্তী সময়ে যা দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার একটি জনপ্রিয় খাবারে পরিণত হয়। সাধারণত সবুজ রঙের ফ্রগ কেক পাওয়া গেলেও, পরে বাদামি এবং গোলাপি রঙের কেকও তৈরি করা শুরু করে। এরপর থেকে এই কেকের আরো বিভিন্ন ধরন বাজারে ছাড়া হয়, যার মধ্যে ঋতুভিত্তিক বৈচিত্রও যুক্ত করা হয় (যেমনঃ স্নো-ম্যান এবং ইস্টার “চিকস”)। ফ্রগ কেককে এককভাবে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার খাবার বলে ধরা হয় এবং একে রাষ্ট্রের পরিচিতির কাজে তুলে ধরা হয়।[১] এর ঐতিহ্যগত তাৎপর্যের কারণে ২০০১ সালে ন্যাশনাল ট্রাস্ট অফ সাউথ অস্ট্রেলিয়া ফ্রগ কেককে একটি দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া ঐতিহ্য বহনকারী চিহ্ন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।
প্রকার | খাবার |
---|---|
উৎপত্তিস্থল | অস্ট্রেলিয়া |
অঞ্চল বা রাজ্য | দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া |
প্রধান উপকরণ | স্পঞ্জ কেক, জ্যাম, ক্রিম |
গঠন
সম্পাদনাফ্রগ কেক ছোট আকারের নাস্তা যা একটি ব্যাঙের খোলা মুখের মত দেখতে হয়। কৃত্রিম ক্রিমের উপর এটি বসানো থাকে এবং এটি হয় স্পঞ্জের তৈরি যার ভেতরে জ্যাম পূর্ণ করা থাকে।[২] একইসাথে এর উপর থাকে ফন্ডেন্ট আইসক্রিমের আবরণ। এই খাবারটি এখনও ঠিক তেমনই আছে, যেমনটা ১৯২০-এর দশকে প্রথম তৈরি করা হয়েছিল। যখন এটি তৈরি করা হয় স্পঞ্জ কেকের বড় বড় টুকরো একসাথে যোগ করা হয় এবং যান্ত্রিকভাবে এর আকৃতি প্রদান করা হয়, এরপর একে ফন্ডেন্ট দ্বারা আবৃত করা হয়[৩] এবং একটি গরম ছুরি দিয়ে এর মুখটি তৈরি করা হয়। হাতের দ্বারা দুটি ফন্ডেন্ট আইসক্রিমের তৈরি চোখ মাথার উপর বসানো হয় এবং কেকটি কাগজের তৈরি পুলি-প্যানে পরিবেশন করা হয়।[৩] ফন্ডেন্ট সাধারণত বাদামি, সবুজ অথবা গোলাপি রঙয়ের হয় কিন্তু বিভিন্ন উপলক্ষে আরো বিচিত্র রঙয়ের কেক তৈরি করা হয় যাদের মধ্যে লাল ও হলুদ অন্যতম।[২]
ইতিহাস
সম্পাদনা১৯২০-এর দশকে ফ্রান্সে ভ্রমণের সময় জন ব্যালফৌরের (যিনি ব্যালফৌর ব্যাকারির একজন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা) ভাতিজা গরডন ব্যালফৌর ইয়রোপীয় মিষ্টান্নে ফ্রগ কেকের অনুপ্রেরণা খুঁজে পেয়েছিলেন।[৪] যখন চা-ঘরগুলো নগরীতে জনপ্রিয় ছিল, গরডন ব্যালফৌর অ্যাডিলেডে ফিরে আসার পর ব্যালফৌরেরা ১৯২২ সালে ফ্রগ কেকের সূচনা করেন।[৫] এটা খুবই দ্রুত ব্যালফৌর ব্যাকারির জনপ্রিয়তার কারণ হয়ে দাঁড়াল[৫] এবং এটি ঐতিহ্যগত ভাবে শুধুমাত্র দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়াতেই বিক্রি হয়ে আসছে,[৪] যদিও এটি এখন ভিক্টোরিয়া, নিউ সাউথ ওয়েলস এবং কুইন্সল্যান্ডেও বিক্রি হচ্ছে।
মূলত ফ্রগ কেক সবুজ রঙয়ের হয়ে থাকে এবং সবুজই সবচেয়ে জনপ্রিয়। কিন্তু পরবর্তীতে চকোলেট এবং গোলাপি রঙয়ের কেকও এর সাথে যুক্ত হয়। যদিও ব্যাঙের প্রতিকৃতির কেকই সবচেয়ে প্রচলিত, তবুও বিভিন্ন উপলক্ষে এর আকৃতি ভিন্নরকমের করা হয়, যেমনঃ ক্রিসমাসের সময় ফাদার ক্রিসমাস এবং স্নো-ম্যান কেক ছাড়া হয় এবং ইস্টারের সময় “চিক” কেক। এডিলেড ফুটবল ক্লাবের রঙয়েও ফ্রগ কেক ছাড়া হয়েছে।[১]
ফ্রগ কেককে অনেকদিন ধরেই সাউথ অস্ট্রেলীয় আইকন হিসেবে ধরা হয় এবং কোনো কোনো সময় একে অঙ্গ রাজ্যটির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ ২০০১ সালে জোয়ান হলের একটি সফল বিডের শেষ পিসটির সময়, যেটি তাদের ২০০৭ ওয়ার্ল্ড পুলিস এন্ড ফায়ার গেইমস এডিলেডের পক্ষে জয় এনে দিতে সাহায্য করেছিল, বিচারকদের ফ্রগ কেক পরিবেশন করা হয়েছিল। টাং-ইন-চিক এবং এরকম ফ্রগ কেকের উদ্দেশ্যে সৌধ নির্মাণ করার ব্যঙ্গাত্মক পরামর্শ যেমনটা ফিটার গৌরস করেছেন, সত্ত্বেও ফ্রগ কেকের জন্য আরো বাস্তব/গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি আসে ২০০১ সালে যখন একে অঙ্গরাজ্যের ১৬৫তম বর্ষপূর্তির সময় ন্যাশনাল ট্রাস্ট অফ সাউথ অস্ট্রেলিয়া সাউথ অস্ট্রেলিয়ান আইকন হিসেবে প্রথম সারির কয়েকটির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে এবং একে একটি রপ্তানিযোগ্য সম্পদ হিসেবে ন্যাশনাল হেরিটেজের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
ঐতিহাসিকভাবে, ব্যালফৌরের ফ্রগ কেক ভালোই বিক্রি হয়েছে এবং মাঝেমাঝে কোম্পানির বিভিন্ন আয়োজনে এর বিক্রি সর্বাধিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ২০০০ সালে যখন কোম্পানিটি ঋণের বোঝায় আক্রান্ত হয়, তখন দ্য অ্যাডভারটাইজারে রেক্স জোরির প্রকাশিত একটি কলামে কেক ক্রয় করে কোম্পানিটিকে সাহায্য করার জন্য মানুষের কাছে আবেদন করা হয় এবং ফলতঃ এর বিক্রি বেড়ে দ্বিগুণে দাঁড়ায় যা সবসময়ের জন্য সর্বাধিক। একইভাবে দক্ষিণ অস্ট্রেলীয় আইকন হিসেবে ফ্রগ কেকের অন্তর্ভুক্তি এর বিক্রি বাড়িয়ে দেয়। এই সফলতার ফলে এর নকল তৈরি করা শুরু হয় এবং এর কারণে ব্যালফৌরেরা ২০০১ সালে এর নাম এবং এর আকৃতিকে তাদের ট্রেডমার্ক হিসেবে নিবন্ধিত করে।[৩][৬]
পাদটীকা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- Clarke, Daniel (১৭ জুন ২০০৩)। "Our State South Australia, Diverse, Different and Dynamic Beyond Value"। The Advertiser। পৃষ্ঠা 31।
- Flanders, Anna (ed) (২০০৭)। Made in SA. South Australian business: a state of growth। Advertiser Enterprises। পৃষ্ঠা 36। আইএসবিএন 978-0-9599602-5-9।
- Goers, Peter (১৮ আগস্ট ২০০৭)। "A little lunacy on Victoria Square"। The Advertiser। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০১৪।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- Haran, Brady (১১ জুন ২০০১)। "How 8 of these Frog Cakes helped to win 2007 World Police and Fire Games"। The Advertiser। পৃষ্ঠা 8।
- Hockley, Catherine (২৬ মে ২০০১)। "Tuckshop cup cake treat leap-frogs ahead"। The Advertiser। পৃষ্ঠা 29।
- Hooper, Ben (৯ নভেম্বর ২০০০)। "Leaping frog cake sales help bakery"। The Advertiser। পৃষ্ঠা 11।
- Jauncey, Dorothy (২০০৪)। Bardi Grubs and Frog Cakes: South Australian Words। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 211–212। আইএসবিএন 0-19-551770-9।
- Jauncey, Dorothy (মে ২০০৪)। "South Australia – 'Kind of Different'?"। OzWords। Australian National Dictionary Centre। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০১৪।
- Lloyd, Tim (৭ এপ্রিল ২০০১)। "When pride is a frog cake and Popeye"। The Advertiser। পৃষ্ঠা 30।
- "Protection for frog cake"। The Advertiser। ১২ সেপ্টেম্বর ২০০১। পৃষ্ঠা 9।