ক্লিফ গ্ল্যাডউইন

ইংরেজ ক্রিকেটার

ক্লিফোর্ড গ্ল্যাডউইন (ইংরেজি: Cliff Gladwin; জন্ম: ৩ এপ্রিল, ১৯১৬ - মৃত্যু: ১০ এপ্রিল, ১৯৮৮) ডার্বিশায়ারের ডো লি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন।[] ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৯ সময়কালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

ক্লিফ গ্ল্যাডউইন
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
ক্লিফোর্ড গ্ল্যাডউইন
জন্ম(১৯১৬-০৪-০৩)৩ এপ্রিল ১৯১৬
ডো লি, ডার্বিশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু১০ এপ্রিল ১৯৮৮(1988-04-10) (বয়স ৭২)
চেস্টারফিল্ড, ইংল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম
ভূমিকাফাস্ট বোলার
সম্পর্কযোসেফ গ্ল্যাডউইন
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৩২২)
৫ জুলাই ১৯৪৭ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা
শেষ টেস্ট২৫ জুন ১৯৪৯ বনাম নিউজিল্যান্ড
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৩৯ - ১৯৫৮ডার্বিশায়ার
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৩৭৪
রানের সংখ্যা ১৭০ ৬২৮৩
ব্যাটিং গড় ২৮.৩৩ ১৭.৩৫
১০০/৫০ –/১ ১/১৫
সর্বোচ্চ রান ৫১* ১২৪*
বল করেছে ২১২৯ ৮১২৯৬
উইকেট ১৫ ১৬৫৩
বোলিং গড় ৩৮.০৬ ১৮.৩০
ইনিংসে ৫ উইকেট ১০১
ম্যাচে ১০ উইকেট ১৮
সেরা বোলিং ৩/২১ ৯/৪১
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ২/– ১৩৫/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৩ অক্টোবর ২০১৯

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ডার্বিশায়ার দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে কার্যকরী ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেছেন ক্লিফ গ্ল্যাডউইন

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

সম্পাদনা

ডার্বিশায়ারের প্রথিতযশা ক্রিকেটার যোসেফ গ্ল্যাডউইনের সন্তান ছিলেন ক্লিফ গ্ল্যাডউইন। ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত ক্লিফ গ্ল্যাডউইনের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে এক হাজার ছয়শতের অধিক প্রথম-শ্রেণীর উইকেট পেয়েছেন তিনি।

১৯৩৯ সালে ডার্বিশায়ারের সদস্যরূপে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। উদ্বোধনী মৌসুমেই চমৎকার খেলা উপহার দেন। অভিষেক প্রথম-শ্রেণীর খেলায় নিজস্ব তৃতীয় ওভার পর্যন্ত মেইডেন পেয়েছিলেন তিনি। তেরো মৌসুমের মধ্যে বারোবার শতাধিক উইকেট পেয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৬ সালে পুনরায় ডার্বিশায়ারের পক্ষে খেলতে নামেন। বিল কপসনের অনুপস্থিতিতে বোলিং আক্রমণে নেতৃত্ব দেন ও শতাধিক উইকেট পান। পরের বছর কপসন ও জর্জ পোপের প্রত্যাবর্তনে তাদের সাথে একত্রে পেস আক্রমণ গড়ে তোলেন।

১৯৪৯ সালের মধ্যে ক্লিফ গ্ল্যাডউইন নিজেকে ব্যাটসম্যান হিসেবে উপস্থাপন করতে সচেষ্ট হন। নটিংহ্যামশায়ারের বিপক্ষে ১২৪ রানের মনোজ্ঞ শতরানের ইনিংস খেলেন। ঐ মৌসুমে নয় শতাধিক রান তুলেন। তবে, খেলার এ ধরনের মান ধরে রাখতে পারেননি। পরবর্তী ছয় মৌসুমে মাত্র একবার অর্ধ-শতরানের সন্ধান পান। কিন্তু, বোলার হিসেবে তিনি দূর্দমনীয় ছিলেন। ১৯৫৮ সালে অবসর গ্রহণের পূর্ব-পর্যন্ত প্রায়শঃই ব্যাটিং গড়ে শীর্ষস্থানে অবস্থান করতেন। ঐ সময়ে ইংল্যান্ড দলের বোলারদের মান প্রশংসনীয় পর্যায়ের থাকায় ১৯৫০-এর দশকে টেস্ট খেলার প্রয়োজন পড়েনি তার। একই সময়ে ডার্বিশায়ার দলে স্পিন বোলারের ঘাটতি থাকায় উপযুক্ত পরিবেশে নিজেকে অফ-ব্রেক বোলারে পরিণত করতেন।

১৯৫২ সালে ওরচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে খেলায় ৮৪ রান খরচায় ১৬ উইকেট পেয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে এ পরিসংখ্যানটি দ্বিতীয় সেরার মর্যাদা পায়। চার বছর বাদে টনি লক মাত্র এক রান কম খরচ করে এ সাফল্য লাভের দিক দিয়ে শীর্ষস্থানে রয়েছেন। প্রতি উইকেট লাভে ১৮.৩০ রান খরচ করেছেন। সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন ৯/৪১।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে আটটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন ক্লিফ গ্ল্যাডউইন। ৫ জুলাই, ১৯৪৭ তারিখে ম্যানচেস্টারে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ২৫ জুলাই, ১৯৪৯ তারিখে লর্ডসে সফরকারী নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিল কপসন ও জর্জ পোপের সাথে একত্রে খেলেন। ওল্ড ট্রাফোর্ডে একাধারে ৫০ ওভার বোলিং করে মাত্র ৫৮ রান দিয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালে প্রথম-শ্রেণীর গড়ে শীর্ষস্থান অধিকার করলেও সফরকারী অপরাজেয় দলের বিপক্ষে তাকে খেলানো হয়নি। তবে, ১৯৪৮-৪৯ মৌসুমে জর্জ মানের অধিনায়কত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। পাঁচ টেস্ট নিয়ে গড়া ঐ সিরিজের সবকটিতেই তার অংশগ্রহণ ছিল। ডারবান টেস্টে লেগ বাইয়ের মাধ্যমে সংগৃহীত রানে জয় পায় তার দল ও জাতীয় বীরে পরিণত হন তিনি। এটিই টেস্টের ইতিহাসে শেষ বলে বিজয় লাভের একমাত্র ঘটনা হিসেবে স্বীকৃত।[]

মূল্যায়ন

সম্পাদনা

দীর্ঘদেহী ডানহাতি মিডিয়াম-ফাস্ট সিম বোলার ছিলেন ক্লিফ গ্ল্যাডউইন। চমৎকারভাবে নিখুঁত ভঙ্গীমায় ধারাবাহিকভাবে বোলিং করতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর লেস জ্যাকসনের সাথে অনেকগুলো বছর নতুন বল নিয়ে ইংরেজ প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে বোলিং আক্রমণ পরিচালনা করতেন।[]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ১,৬৫৩টি উইকেট লাভ করেছেন। এরফলে, সর্বকালের সেরাদের তালিকায় তিনি ৬০তম অবস্থানে পৌঁছেন। প্রতি উইকেট লাভের ক্ষেত্রে ২০ রানেরও কম খরচ করেছিলেন। ক্রিকেট লেখক কলিন বেটম্যান মন্তব্য করেন যে, গ্ল্যাডউইন তার মিতব্যয়ী বোলিংয়ে বেশ খুশি হতেন। দিনশেষে তার বোলিং পরিসংখ্যানে ভুল হলে স্কোরারকে সংশোধনের কথা বলতেন।[]

ক্লিফ গ্ল্যাডউইন ডানহাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন। ৩৭৪টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ৫১০ ইনিংসে ১৭.৩৫ গড়ে রান তুলেন। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান করেন অপরাজিত ১২৪।[] ডার্বিশায়ারের দলীয় সঙ্গী পেস বোলার বিল বেস্টউইক, বিল কপসন, লেস জ্যাকসন, হ্যারল্ড রোডস, অ্যালান ওয়ার্ডমাইক হেনড্রিকের সাথে তুলনান্তে অসাধারণ পর্যায়ের ছিল। তারা সম্মিলিতভাবে ২,১৯৫টি প্রথম-শ্রেণীর ইনিংস খেললেও তাদের কেউই অর্ধ-শতরানের কোটা স্পর্শ করতে পারেননি।

১৯৫৮ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর তিনি লীগ ক্রিকেটে অংশ নিতে স্টাফোর্ডশায়ার ও ইয়র্কশায়ারে যোগ দেন। সেখানেও তিনি জনপ্রিয়তা লাভ করেন ও পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে সম্মানিত ছিলেন।[]

১০ এপ্রিল, ১৯৮৮ তারিখে ৭২ বছর বয়সে চেস্টারফিল্ড এলাকায় ক্লিফ গ্ল্যাডউইনের দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Bateman, Colin (১৯৯৩)। If The Cap Fits। Tony Williams Publications। পৃষ্ঠা 72আইএসবিএন 1-869833-21-X 
  2. Cliff Gladwin at Cricket Archive
  3. Wisden Obituary – Clifford Gladwin

আরও দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা